পটুয়াখালীর গলাচিপায় ক্ষেতের পোকা-মাকড় দমনে কীটনাশকের বিকল্প আলোক ফাঁদের ব্যবহার বেড়েছে। ফসলের পোকা-মাকড় দমনে কীটনাশক ব্যবহারের আধিক্যে আমাদের বহুবিধ শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসাবিজ্ঞান এমন কথাই বলছে। আবার ভালোভাবে ফসল পেতে পোকা-মাকড় দমন করাও জরুরি। এ অবস্থায় আলোক ফাঁদ ধানের পোকা দমনের একটি পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি। পটুয়াখালীর গলাচিপার কৃষকরা তাই এ আলোক ফাঁদ ব্যবহারে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
গলাচিপা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গলাচিপায় একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নকে ৩৭টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। এতে ১৬ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রয়েছেন। গলাচিপায় চলতি বছরে জমির আমনের আবাদ হয়েছে ৩৩হাজার ৯শত ৯০হেক্টর আর অনাবাদি রয়েছে ১০হেক্টর।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, ফাঁদ তৈরি করতে সন্ধ্যার পর ধান ক্ষেতের পাশে ফাঁকা জায়গায় বাঁশের তিনটি খুঁটি ত্রিকোণাকার করে মাটিতে পুঁতে মাথার অংশ একত্রে বেঁধে দিতে হবে। এরপর মাটি থেকে আড়াই-তিন ফুট উপরে একটি বৈদ্যুতিক বাল্ব জ্বালিয়ে খুঁটির মাথার রশির সাহায্য ঝুলিয়ে দিতে হয়। নিচে একটি বড় আকারের প্লাস্টিকের গামলা বা পাত্রে ডিটারজেন্ট পাউডার অথবা কেরোসিন মিশ্রিত পানি রাখতে হবে।
মাঠ জুড়ে যখন অন্ধকার নেমে আসতে থাকে তখন ফাঁদের আলোর ঝলকে আকৃষ্ট হয়ে পোকা-মাকড় পাত্রের পানিতে পড়ে মারা যায়। এখন অবশ্য ধান ক্ষেতে বৈদ্যুতিক বাল্বের পাশাপাশি সৌর বৈদ্যুতের আলোও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তা ছাড়া হারিকেন বা বাতি জ্বালিয়েও আলোক ফাঁদ তৈরি করা যায়। এভাবে আলোক ফাঁদ ব্যবহার করে ফসলের মাঠে ক্ষতিকর ও উপকারী পোকা-মাকড়ের উপস্থিতি নির্ণয় করে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আলোক ফাঁদ অন্ধকার রাতে দেখতে দৃষ্টি নন্দনও বটে। এতে খরচ কম হয় এবং পরিবেশবান্ধব। তাই ধান ক্ষেতের ক্ষতিকর পোকার উপস্থিতি শনাক্তকরণ ও দমনে আলোক ফাঁদ প্রযুক্তি উপজেলার কৃষকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
আলোক ফাঁদে ক্ষতিকর পোকার মধ্যে মাজরা পোকা, সবুজ পাতা ফড়িং, পাতা মোড়ানো পোকা ও বাদামি গাছ ফড়িং (কারেন্ট পোকা), সাদা পিঠ গাছ ফড়িং ও গান্ধি পোকার উপস্থিতি বেশি পাওয়া যায়। উপকারী পোকার মধ্যে ড্যামসেল ফ্লাই, বোলতা, মাকড়সা, ক্যারাবিড বিটল, লেডি বার্ড বিটল ইত্যাদির উপস্থিতি রয়েছে।
গলাচিপা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, কৃষি অফিসের উদ্যোগে ধানের ক্ষতিকর ও উপকারী পোকা-মাকড়ের উপস্থিতি শনাক্তকরণ ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রতি বছরের ন্যায় রোপা আমন ধানের ক্ষেতে আলোক ফাঁদ স্থাপনের কর্মসূচি নেয়া হয়। উপজেলার কলাগাছিয়া, আমখোলা, গজালিয়া, বকুলবাড়িয়া, চিকনিকান্দি, ডাকুয়া, রতনদী তালতলী, পানপট্টি, চরকাজল, চরবিশ্বাস ও গলাচিপা সদর ইউনিয়নের ৩৭টি বøকের বিভিন্ন জায়গায় একযোগে প্রতিদিন সন্ধ্যায় ধান ক্ষেতের পাশে বৈদ্যুতিক ও সৌর বিদ্যুতের আলোক ফাঁদ স্থাপন কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
গলচিপা উপজেলার পানপট্টি ইউনিয়নের কৃষক আ. ছোবাহান গাজী, আনোয়ার গাজী, আলমগীর ফকির, শানু ফকির ও সেরাজুল মোল্লা বলেন, ধান ক্ষেতে আলোক ফাঁদ ব্যবহারে পোকা দমন সহজ হয়েছে। এ পদ্ধতিতে আমরা আগের চেয়ে কম খরচে ক্ষতিকর পোকা দমন করতে পারছি। আবার উপকারী পোকা বাঁচাতেও পারছি। এতে করে আমাদের উৎপাদন খরচ কমছে। অপর দিকে পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা পাচ্ছে এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুক্ত খাবার উৎপাদিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে গলচিপা উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. নাহিদ হাসান বলেন, আমরা বøকের বিভিন্ন জায়গায় কৃষকদের নিয়ে সন্ধ্যায় আলোক ফাঁদ স্থাপন করে থাকি। এ ফাঁদের মাধ্যমে ধানের জমিতে একদিকে যেমন পোকা-মাকড় দমন হচ্ছে অন্যদিকে জমিতে কি কি ক্ষতি কারক পোকা রয়েছে তা চিহ্নিত করণের মাধ্যমে তা দমন করতে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।
গলাচিপা উপজেলা কৃষি অফিসার এ আর এম সাইফুল্লাহ বলেন, ক্ষতিকর পোকা-মাকড় বিশেষ করে বিপিএইচ (কারেন্ট পোকা)সহ অন্যান্য ক্ষতি কারক পোকা যাতে রোপা আমন ধানের ক্ষতি সাধন করতে না পারে এবং কৃষকরা সঠিক সময়ে যেন পোকা দমনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে সেজন্যই একযোগে আলোক ফাঁদ স্থাপনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে এবং ধান পাকা পর্যন্ত তা চলতে থাকবে। বিভিন্ন বøকে পোকা দমনে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য লিফলেট বিতরণ ও কৃষকদের নিয়ে উঠান -বৈঠক করা হয়েছে।