ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালন্দর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সাবেক ছাত্র নেতা আবু দাইয়াম জনিকে হত্যা মামলায় ফাঁসাতে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে একটি কুচক্রী মহল।
সম্প্রতি গত ১০ নভেম্বর দুপুর ১টার দিকে সালন্দর ইউনিয়নের বরুনাগাঁও বগুড়াপাড়া গ্রামে জমি নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষ হয়। এসময় প্রয়াত রাজু প্রমাণিকের ছেলে নূর মোহাম্মদ নুরু আহত হয়। পরে স্থানীয় লোকজন আহত নূর মোহাম্মদ নুরুকে উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসক নুরুকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে।
ঘটনার পরদিন ১১ নভেম্বর আহত নুর মোহাম্মদ নুরুর ভগ্নীপতি হানিফ বাদী হয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় আজিজুর রহমান, রেজাউল করিম, বিলকু, নজরুল, জার্মান, সাদ্দাম, রিপন, নেন্দা বাও এর নাম উল্লেখ করে আসামী করা হয়। এছাড়াও এই মামলায় আরও ১৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করা হয়।
এদিকে ১২ নভেম্বর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় আহত নুর মোহাম্মদ নুরুর মৃত্যু হয়।
এমন অপ্রীতিকর ঘটনায় একজন নিহতের পর ওই ইউনিয়নে চাঞ্চল্যকর অবস্থার সৃষ্টি হয় এবং ইউনিয়ন বাসীর মনে হতাশার ছাপ ফেলে। ইউনিয়নবাসীর সহজ সরল মানুষের কাছে আওয়ামীলীগ নেতা আবু দাইয়াম জনির তমুল জনপ্রিয়তা থাকায় তাকে হত্যা মামলায় ফাসানোর চেষ্টা করছে ইউনিয়নের একটি কুচক্রী মহল। মূলহোতাদের শাস্তির দাবি জরালো না করে তাদের আলোচনার বাইরে রেখে এই আওয়ামীলীগ নেতাকে হত্যা মামলায় ফাঁসিয়ে তার পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিত্বে কালিমা লাগাতে উঠে পড়ে লেগেছে এই কুচক্রী মহলটি।
সালন্দর ইউনিয়নের বাসিন্দা রকিবুল ইসলাম, হারুন অর রশিদ বলেন, সংঘর্ষের পরদিন বাদি ঠাকুরগাঁও সদর থানায় যে মামলা দায়ের করেন সেখানে উল্লেখ আছে বিনা উস্কানিতে মারামারির ঘটনা ঘটেছে এবং ওই মামলার এজাহারে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ নেতা জনির কোন নাম নেই। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি সংঘর্ষের ঘটনায় একজনের মৃত্যু হওয়ার পর বেপরোয়া ও লাগামহীনভাবে অভিযোগ করা হচ্ছে এই আওয়ামীলীগ নেতার বিরুদ্ধে। তিনি নাকি হামলার হুমকিদাতা। যা অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন। কোন সচেতন ও সুস্থ্যধারার মানুষ এমন অভিযোগ কানে নেবেনা।
বরুনাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আপন ইসলাম নয়ন বলেন, আমরা প্রকৃত খুনীদের শাস্তি দাবি করছি। কিন্তু এ মামলায় কোন নিরপরাধ মানুষকে ব্যক্তিগত শত্রুতা বা প্রতিহিংসার জের ধরে কাউকে ফাঁসানো না হয় সেজন্য আমরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানাই।
সালন্দর শিংপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রুকসানা আক্তার, শফিকুল ইসলাম ও ৮০ বছর বয়সী বৃদ্ধা তফিজন বেওয়া বলেন, আবু দাইয়ান জনি একজন নিতান্তই ভদ্র মানুষ। শুনছি তিনি নাকি একটি জমাজমির সংঘর্ষেও ঘটনার ইন্দন দিয়েছেন। যেটি কখনোই বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারন আমরা গ্রামবাসী আওয়ামীলীগ নেতা জনিকে খুব ভালো করেই চিনি ও জানি। তিনি একজন নরম ও উদার প্রকৃতির মানুষ। বিনাস্বার্থে আমাদের পাশে থাকেন দু:খের সময়ে এবং কারো ঘরে খাবার না থাকলে নিজে খাদ্য ঘরে পৌঁছে দেন। তিনি কত শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার খরচ বহন করেন তার কোন হিসাব নাই।
সম্প্রতি করোনা কালে তিনি তার ব্যক্তি উদ্যোগে প্রায় ৪ হাজার মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন। দিন রাত খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পৌছে দিয়েছেন এসব মানুষদের ঘরে ঘরে। ইউনিয়নে তার জনপ্রিয়তা অনেক উপরে। অথচ এই আওয়ামীল নেতাকে হত্যা মামলায় ফাঁসাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে একটি কুচক্রী মহল।
সালন্দর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধরণ সম্পাদক আবু দাইয়ান জনির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হত্যা মামলায় আমাকে ফাঁসাতে একটি কুচক্রী মহল উঠে পড়ে লেগেছে। জায়গাজমি নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় আমি কিছু জানিনা। ঘটনার সময় আমি স্থানীয় চেয়ারম্যান মুকুলের বাবার মৃত্যুবার্ষিকীর মিলাদে উপস্থিত ছিলাম। জমিজায়গার কোন ঘটনার সম্পর্কে আমি কোনরকম ভাবে অবগত ছিলামনা আর এখনও কিছু জানিনা। তবে আমি চাই এই হত্যাকান্ড ও সংঘর্ষের ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।
মুঠোফোনে এই মামলার বাদী মো: হানিফের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আওয়ামীলীগ নেতা আবু দাইয়ান জনি সংঘর্ষের ইন্দন দিয়েছেন। কিন্তু মামলার এজাহারে বিনা উস্কানিতে বা বিনা হুমকিতে সংঘর্ষ হয়েছে উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেছেন কেনো এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি অসুস্থ্য এ বিষয়ে কোনকিছু বলতে পারবোনা। আপনার কিছু জানার থাকলে আপনি চেয়ারম্যানের সাথে যোগাযোগ করেন।
এ বিষয়ে সালন্দর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহাবুব আলম মুকুলের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি তানভিরুল ইসলাম জানান, দায়েরকৃত মামলাটি এখন হত্যা মামলায় স্থানান্তর করা হবে। আমরা আসামীদের গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রেখেছি। সেই সাথে মামলার তদন্ত চলছে। এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত রয়েছে তাদেরকে অবশ্যয় আইনের আওতায় আনা হবে।