পাবনার ঈশ্বরদীর সুগার মিল ৪০০ কোটি টাকার লোকসানে পড়ায় বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে খবরটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পাবনা সুগার মিল এবং বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন। জানা যায়, বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে এবিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত হলে বিষয়টি চুড়ান্ত হবে। পাবনার সুগার মিল ছাড়াও কুষ্টিয়া, সেতাবগঞ্জ, রংপুর, শ্যামপুর ও পঞ্চগড়ের ৫ টি মিল বন্ধের তালিকায় আছে বলে জানা যায়।
এবছর পাবনার সুগার মিলের ৮০ হাজার মেট্রিকটন আখ মাড়াই করার লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মিলের এরিয়ায় এবছরে ৫ হাজার ২ শ একর জমিতে আখের চাষ হয়েছে। এজন্য আখ চাষীদের মিল কতৃপক্ষ প্রায় ৪ কোটি টাকা ঋনও প্রদান করেছে। বাংলাদেশ আখ চাষী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও রাষ্ট্রপতি পদকপ্রাপ্ত আলহাজ্ব শাহজাহান আলী বাদশা জানান, প্রতিবছরের মতো ঈশ্বরদীতে এবারও প্রায় ৫ হাজার কৃষক আখ চাষ করেছেন।
এসব আখ কাটার উপযোগী হয়ে উঠেছে। এরকম সময়ে যদি মিল বন্ধ ঘোষণা করা হয় তাহলে ওই কৃষকেরা ব্যাপকহারে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পাবনার সুগার মিল ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুজ্জান উজ্জ্বল বলেন, গত ৫ থেকে ৬ মাস যাবত এই মিলের শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হয়নি। প্রায় সারে ছয়শত শ্রমিক কর্মচারী বেতন বাবদ মিলের কাছে ৬ কোটি টাকা পাবে। এমন পরিস্থিতিতে মিল বন্ধ হওয়ার খবর পাওয়ায় তারা হতাশ হয়ে পড়েছে। এদিকে মিল বন্ধ না করতে এবং চিনির শিল্প রক্ষার্থে ৫ দফা দাবি নিয়ে বাংলাদেশ চিনি শিল্প কর্পোরেশন ফেডারেশন দেশজুড়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে।
আগামী শনিবার থেকে মিলগেটে ফটকসভা,বিক্ষোভ, মানববন্ধন এবং চলতি আখের মাড়াই নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের কোন চিনি মিলের ব্রয়লার স্লো ফায়ারিং করতে না দেওয়ার স্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন। বাংলাদেশ চিনি শিল্প করপোরেশন শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান বলেন, সুগার মিল বন্ধ করা রুখতে গত ১৬ নভেম্বর ফেডারেশনের যৌথ সভায় এ কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পাবনা সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সাইফুদ্দিন সংবাদ মাধ্যমকে জানান, অফিসিয়ালি কোন চিঠি পাইনি, তবে মৌখিক ভাবে শুনেছি মিল বন্ধ হওয়ার কথা।
এ বছর এখন পর্যন্ত আখ মাড়াইয়ের নির্দেশনা আসেনি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান সনত কুমার সাহা বলেন, মিল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত সরকারের। কর্পোরেশন থেকে আমরা শিল্প মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছি। মন্ত্রণালয় সম্মত হলে গেজেট করার পর আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানালে মিল বন্ধ করা হবে। ১৯৯২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঈশ্বরদীর দাশুড়িয়া ইউনিয়নের পাকুড়িয়া মৌজার ৬০ একর জমির উপর পাকিস্তান সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় ‘পাবনা সুগার মিল’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৭/৯৮ অর্থবছরে আখ মাড়াই মৌসুমে মিলটির পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়। মিলটি ১৯৯৮/৯৯ অর্থবছরে বাণিজ্যিক ভাবে চিনি উৎপাদন শুরু করে। চালুর পর থেকেই মিলে উৎপাদন ঘাটতি শুরু হয়। গত ২৮ বছরে মিলটি উৎপাদন ঘাটতিতে লোকসান দিয়েছে ৪০০ কোটি টাকার বেশি।