পাবনা চাটমোহর উপজেলায় প্রতিবন্ধী সন্তানের জন্ম দেওয়ায় স্ত্রীকে তালাক দিয়েছে পাষন্ড স্বামী আল-আমীন। স্বামীর দেওয়া তালাক নামা হাতে পেয়েছেন স্ত্রী দুলালী। স্বামীর চোখে অপরাধ সে প্রতিবন্ধী এক পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছে। এলাকা সুত্রে জানা যায়, চাটমোহর উপজেলার কাটাখালি গ্রামের আবুল হোসেনের মেয়ে দুলালী খাতুনের সাথে পাঁচ বছর আগে একই উপজেলার কাঁন্দিপাড়া গ্রামের রব্বান হোসেনের ছেলে আল-আমীন এর বিয়ে হয়। আল-আমীন পেশায় দিনমজুর। তাদের ঘরে একটা পুত্র সন্তান আসে।
তবে শিশুটি বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন (শারীরিক প্রতিবন্ধী)। দুলালী অভিযোগ করে বলেন, প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম দেওয়ায় স্বামী শ্বশুর শাশুড়ী নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পাঁচ মাস আগে তালাক দিয়ে তালাক নামার কাগজ গোপন করে নিজের কাছে রাখেন আল-আমীন। গত শনিবার ডাকযোগের মাধ্যমে তালাকের নোটিশ হাতে পান দুলালী। তালাকের নোটিশ আর প্রতিবন্ধী সন্তানকে নিয়ে চোখের জ্বলে বুক ভাসাচ্ছেন দুলালী খাতুন।
স্বামীর সংসারে ফিরতে এলাকার লোকজনের কাছ ধরনা ধরেও কোন সুফল মিলছে না। দুলালীকে ছোট রেখে মারা জান বাবা আবুল হোসেন। মা খইচন বেওয়া মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে খুব কষ্টে বড় করেন একমাত্র মেয়ে দুলালীকে। বছর পাঁচেক আগে এনজিও থেকে ঋন নিয়ে এবং আত্মীয় স্বজনের কাছে ধারদেনা করে আল-আমীনের সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেন। বিয়েতে যৌতুক হিসেবে একটি বাইসাইকেল, নানা জিনিসপত্র এবং দশ হাজার টাকা দেয়া হয়। বিয়ের দুই বছর পর দুলালীর কোলজুড়ে আলোকিত করে আসে পুত্র সন্তান। নাম রাখা হয় দুর্জয়। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় দুলালীর কপালে নেমে আসে দুঃখ।
এজন্যই দুই বছর আগে স্বামী আল-আমীন,শ্বশুর রব্বান হোসেন,শাশুড়ী ফরিদা খাতুন শারীরিক ভাবে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে বের করে দেয় দুলালীকে। ঠিকানা হয় দুঃখিনী মা খইচন বেওয়ার ঘরে। ন্যায় বিচারের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য ও গ্রাম প্রধানদের বার বার ধরনা ধরে কোন সমাধান মেলেনি। স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, উপজেলার পৌর সদরে ম্যারেজ রেজিস্ট্রার কাজী আব্দুর রাজ্জাকের অফিসে গত ৫ জুলাই আল-আমীন এসে তালাক নামা সই করে কাগজ নিজের কাছে রেখে দেয়। দেনমোহরের টাকা বুঝে না দিয়েই নোটিশ ডাকযোগে স্ত্রী দুলালীর কাছে পাঠায়।
কান্নাজড়িত কন্ঠে দুলালী বলেন, প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম দেওয়া কি আমার অপরাধ? প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম হয়েছে বলে আমার স্বামী শ্বশুর শাশুড়ী মিলে মারধর করে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এখন আমার স্বামী তালাক দিয়ে সেই নোটিশ ডাকযোগে পাঠিয়েছে আমার কাছে। আমি স্বামীর সংসার ফিরে পেতে চাই। পেতে চাই সঠিক বিচার।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আল-আমীন বলেন, সন্তানের জন্য তালাক দেইনি।তালাক দেয়া হয়েছে ওর কার্যকলাপের জন্য। ছেলে আমার সেহেতু দায়িত্বও আমার। তালাকের নোটিশ গোপনের বিষয়ে এরিয়ে যায় আল-আমীন। চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈকত ইসলাম বলেন, স্বামী বা স্ত্রী যে কেউ তালাক দিতে পারে। তবে প্রতিবন্ধী সন্তানের জন্ম দেওয়ায় যদি এমন ঘটনা হয় বিষয়টি অমানবিক হবে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।