পেরিলা বাংলাদেশে নতুন তেল জাতীয় ফসল। বিশ্ব বাজারে এটি কোরিয়ান পেরিলা নামে ব্যপক সুপরিচিত। দ্রুতই বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এর বিস্তার লাভ করে যাচ্ছে।
গবেষণাও চলছে এ নতুন তেল ফসলের উপর। চলনবিল অধ্যুষিত চাটমোহর উপজেলায় এটি এখন সম্ভাবনাময় ফসল। পাবনার চাটমোহর উপজেলার গুনাইগাছা ইউনিয়নের চরপাড়া ব্লক এ রিসার্চ খরিপ-২/২০২০ এর আওতায় সাউ পেরিলা-১( গোল্ডেন পেরিলা বিডি) আবাদ শুরু হয়েছে। চরপাড়া গ্রামের পেরিলা চাষি কামরুল ইসলাম বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস থেকে দুইশত পঞ্চাশ গ্রাম পেরিলার বীজ পাই। শ্রাবণ মাসের প্রথমদিকে বাড়ির উপরেই চারা দেওয়া হয়।
বর্ষাকাল হওয়ায় বৃষ্টির হাত থেকে চারা রক্ষায় বীজতলার উপর পলিথিনের ছাউনি দেই। চারা তৈরি হয়ে গেলে ভাদ্র মাসের প্রথমদিকে পরিক্ষামুলক ভাবে এক শতক জমিতে চারা রোপণ করি। পচাত্তর থেকে আশি দিন পর জমি থেকে ধীরে ধীরে পেরিলা সংগ্রহ শুরু করি। ফলন মোটামুটি ভালোই পেয়েছি। এটি সরিষা দানার মতো দেখতে। আগামীতে উচু জমিতে আরো বেশি করে ফসলটি আবাদ করার কথা ভাবছি। জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ষোল লাখ মেট্রিকটন ভোজ্য তেল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।
এ তেল ফসলের আবাদ বাংলাদেশে সম্প্রসারণ করতে পারলে আমাদের আমদানী নির্ভরতা কমার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। চাটমোহরের উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মোঃ আল ইমরান জানান, সাউ পেরিলা-১ বাংলাদেশে অভিযোজিত ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ একটি ভোজ্য তেল ফসল। ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড মানব দেহের জন্য খুবই উপকারি। এতে ক্ষতিকর কোন ইউরেসিক এসিড নেই। এর বীজ হতে শতকরা প্রায় চল্লিশ ভাগ তেল আহরণ করা যায়, যার প্রায় একানব্বই ভাগই অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড। সারাবিশ্বে এই ভোজ্য তেলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দামও বেশি এটি দক্ষিণ কোরিয়া থেকে সংগৃহিত।
বাংলাদেশ শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. এ এইচ এম তারিক হোসেন সর্বপ্রথম এ ফসল নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। পরবর্তীতে পিএইচডি ফেলো আব্দুল কাইয়ুম মজুমদার (বিসিএস কৃষি) এর মূল গবেষণার বিষয়ের সাথে ২০১৮ সাল থেকে ফসলটির উপর গবেষণা ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম ব্যাপক ভাবে শুরু করেন। হেক্টর প্রতি ফসলের উৎপাদন এক দশমিক দুই টন। বর্তমান বোতল জাত তিনশত বিশ মিলি লিটার তেল ছয়শত আশি টাকা এবং খোলা তেল অপেক্ষাকৃত কিছু কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে।