ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে সেই কৃষকের শিল্পকর্ম নিয়ে মন্ত্রী-এমপিদের ফেসবুকে যথ পোস্ট। প্রত্যন্ত গ্রামের খুব সাধারণ একজন কৃষক আবদুল কাদির। নেই বড় হবার আকাশছোঁয়া স্বপ্ন। নিজের জমিতে ফসল ফলানোই তার একমাত্র কাজ। সরিষা ও লাল শাক দিয়ে নিজের জমিতে হৃদয়ে ধারণ করা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি, শাপলা, নৌকা, জাতীয় পতাকা ও মুজিব শতবর্ষী এঁকেছেন তিনি। মাঠের এ কৃষক তার অনন্য ‘কৃষিকর্ম’ দিয়ে ঠাঁই করে নিয়েছেন মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্যসহ সর্বস্তরের মানুষের মনে। গ্রামের কৃষক থেকে আজ বনেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের হিরো। কৃষক কাদিরের অন্যন্য শিল্পকর্ম ঠাঁই পেয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপিসহ প্রধানমন্ত্রী কন্যার ফেসবুক পেজেও।
একজন কৃষকের হৃদয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কতটা শ্রদ্ধায় লালিত হচ্ছেন তার নজির দেখা গেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের কৃষক আবদুল কাদিরের ফসলের মাঠে। ৩৩ শতক জমিতে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ভিন্ন কিছু করার পরিকল্পনা থেকে করে বসলেন অনন্য শিল্পকর্ম।
স্থানীয় পাড়া খালবলা বন্ধুমহল ডিজিটাল ক্লাবের সদস্যদের সহযোগিতা নিয়ে গত পহেলা ডিসেম্বর জমি চাষ করেন তিনি। সেই জমিতে অবয়ব অংকন করা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের, পাশে স্মৃতিসৌধ ও জাতীয় পাতাকা, ওপরের দিকে শাপলা ও মুজিব শতবর্ষ এবং জাতির পিতার ছবির নিচে নৌকা প্রতীক। ছবির মতো চার দিকে বৃত্তটেনে একটি মুদ্রার মতো করা হয়। বৃত্তের চারপাশে দেওয়া হয় চারটি লাভ চিহ্নও। রেখা টেনে আঁকার পর রেখাগুলোতে রবিশস্য লাল শাক ও সরিষা শাকের বীজ বপন করেন কাদির। দিনে দিনে লাল শাক ও সরিষাগুলো বেড়ে উঠায় স্পষ্ট হয়ে উঠছে জাতির পিতার প্রতিকৃতি, শাপলা, নৌকা, জাতীয় পাতাকা, মুজিব শতবর্ষ।
কৃষক কাদিরের অনন্য শিল্পকর্মের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। একজন কৃষকের ‘অসাধারণ শিল্পকর্ম’ নিয়ে নিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলকসহ সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল নিজের ফেসবুক পেজে লিখেছেন ‘কৃষকের হাতে আঁকা ফসলের ক্ষেত।’ তাতে দুটি ছবিও পোস্ট করা হয়।
শুধু মন্ত্রী কিংবা রাজনৈতিক নেতা নয় কৃষক আবদুল কাদিরের ফসলের মাঠে আঁকা জাতির পিতার অনন্য শিল্পকর্ম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। কৃষকের এ ধরণের কার্যক্রমে হিরো বনে গেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক সম্পর্কে ধারণা নেই কৃষক আবদুল কাদিরের।
ফসলের মাঠে ফসল দিয়ে জাতির পিতার প্রতিকৃতি করা কৃষক আবদুল কাদির বলেন, ফেসবুক কি জিনিস বুঝি না। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে যে ছবি মাঠে এঁকেছেন তা দেখতে হাজার হাজার মানুষ আসছে। সবাই ছবি তুলছে। তার আঁকা বঙ্গবন্ধুকে দেখতে মানুষ আসছে-এটুকুই পরম প্রাপ্তি।
ঈশ্বরগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান হলুদ বলেন, বিজয়ের মাসে ভাস্কর্য নিয়ে চার দিকে যা হচ্ছে তার তীক্ষ্ণ প্রতিবাদ কৃষকের ফসলের মাঠে বঙ্গবন্ধুর অনিন্দ্যসুন্দর প্রতিকৃতি। হৃদয়ের সুন্দর চেতনা থেকে কৃষক এটি করেছে। বাহবা পাবার যোগ্য সে।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, কৃষক আবদুল কাদিরের শৈল্পিক কাজের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় সরকারি দপ্তর, রাজনৈতিক নেতা ও দেশ এবং দেশের বাইরে থেকেই কৃষককে ধন্যবাদ জানিয়ে অনেক ফোন এসেছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও কৃষকের অনন্য শিল্পকর্ম নিয়ে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। আপামর জনতা যে বঙ্গবন্ধুকে হৃদয়ে লালন করে তার নিদর্শন স্থাপন করায় সবাই কৃষককে ধন্যবাদ জানাচ্ছেন।
কৃষক আবদুল কাদিরের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে। উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের পাড়া খালবলা গ্রামের মো. তারা মিয়ার ছেলে তিনি। স্ত্রীর নাম মোকসুদা আক্তার। দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক ৪১ বছর বয়সী আবদুল কাদির পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় শ্রমিকের সংকট থাকায় নিজেদের জমিতে কাজ শুরু করেন। পরে আর পড়ালেখা হয়নি। মাঠেই দিন-রাত পরিশ্রম করে সোনার ফসল ফলান তিনি। গেল বছর এ মাঠেই কৃষক আবদুল কাদির শৈল্পিক বুননে সরিষা গাছ দিয়ে পঁয়ত্রিশ শতক জমির মাঝখানে ও চারপাশে ‘লাভ’ চিহ্ন এঁকে মাঝখানে নিজের নাম ফুটিয়ে তুলেছিলেন ‘ভালোবাসার জমিন’। সেটি দেখতেও দূরদূরান্তের মানুষ জড়ো হয়েছিল। এই সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে বিভিন্ন মিডিয়া ও উপজেলা প্রশাসন সহ সকলেই ছুটে যান ওই কৃষকের কাছে দেখেন তার নৈন্দনিক সৃষ্টিকর্ম অনেকেই আবার সরকারি ভাবে বিভিন্ন সাহায্যের আশ্বাস দেন। ঈশ্বরগঞ্জ সংসদ সদস্য এই কৃষককে আজ বুধবার দশহাজার টাকা আর্থিক সাহায্য প্রদান করবে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন।