সরকারি, বে-সরকারি বরাদ্ধের লাখ লাখ টাকা আত্মসাত, কর্তৃপক্ষের আদেশ উপেক্ষা ও নৈতিক অবক্ষয় সহ নানা ক্ষেত্রে জাল-জালিয়াতি করার অভিযোগে বাগেরহাটের শরনখোলা উপজেলার মাতৃভাষা ডিগ্রী কলেজের (সাবেক) অধ্যক্ষ পৌরনীতি ও সুশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. অলিউর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। গত ১৪ নভেম্বর কলেজ পরিচালনা পরিষদের ২নং সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়। বিষয়টি তদন্তের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অদিদপ্তরের মহা-পরিচালককে প্রধান করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাশাপাশি আদেশের কপি অভিযুক্ত সহকারী অধ্যাপক মো. অলিউর রহমান সহ শিক্ষা সচিব, ভাইস চ্যান্সেলার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুর, জেলা প্রসাশক বাগেরহাট, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরনখোলা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শরনখোলা এবং কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি বরাবরে পাঠানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারকে ২০০৮ সালে সাময়িক বরখাস্ত করা হলে ওই সময় কলেজের (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ হিসেবে দ্ধায়িত্ব পান একই কলেজের (পৌরনীতি ও সুশাসন) বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. অলিউর রহমান। দ্ধায়িত্ব হাতে পেয়েই তার নানা শ^শুর তৎকালীন বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদ্য ডা. মোজাম্মেল হোসেনকে কলেজের গর্ভনিং বডির সভাপতি হিসেবে নিযুক্ত করেন। এরপর থেকেই কলেজ জুড়ে আধিপত্য বিস্তার শুরু করে নানা প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতিতে নিমোজ্জিত হন অলিউর। প্রায় ১২ বছর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ অলিউর রহমান কলেজের নানা তহবিলের সরকারি-বে-সরকারী বরাদ্ধের প্রায় ৪০ লাখ টাকা আত্মসাত করেন বলে প্রাথমিক তদন্তে প্রমান পায় তদন্ত কমিটি। তাছাড়া উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ উপেক্ষা সহ নানা জাল জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।
নাম গোপন রাখার শর্তে, কলেজের একাধিক শিক্ষক জানান, অলিউর রহমান দ্ধায়িত্ব পেয়ে শিক্ষকদের পদোন্নতি আটকিয়ে রাখা সহ তাদের সাথে প্রায়ই দুর্ব্যবহার করতেন।
মাতৃভাষা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, একটি মহলে রোষানলে পড়ে ২০০৮ সালে আমি চাকুরী হতে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত হই। আদালতের আশ্রয় নিয়ে দীর্ঘ ১২ বছর পর চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারী মহামান্য হাইকোর্ট আমার পক্ষে রায় দেন। গত ১৮ ফ্রেরুয়ারী পুনঃরায় কলেজের অধ্যক্ষের দ্ধায়িত্ব গ্রহন করি। কিন্তু (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যক্ষ মো. অলিয়ার রহমান কলেজের গত ১২ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব, সরকারী-বেসকারী বরাদ্ধের জমা-খরচ বুঝিয়ে না দিয়ে বরং আমি যাতে দ্ধায়িত্ব নিতে না পারি সে ব্যাপারে কঠোর বিরোধিতা করেছেন। কলেজের বিভিন্ন তহবিলের অর্থ লোপাট সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস যা আজও বুঝে পাইনি। এমনকি কলেজের সাবেক সভাপতি ডা. মোজাম্মেল হোসেন মারা যাওয়ার পর তার স্বাক্ষর জাল করে একটি রেজুলেশন তৈরী করে ব্যাংক হতে টাকা উত্তোলন করেন। প্রাথমিক তদন্তে তার বিরুদ্ধে প্রায় ৪০ লাখ টাকার অভিযোগ আসলেও আরো প্রায় ৫০ লাখ টাকার সঠিক হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না।
অপরদিকে, বরখাস্তকৃত সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. অলিউর রহমান অভিযোগের বিষয়গুলো কাল্পনিক দাবী করে বলেন, তিনি একটি মহলের গভীর ষড়যন্তের স্বীকার।
মাতৃভাষা ডিগ্রী কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. আব্দুল হক হায়দার জানান, সভাপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠানের কোন কর্মকর্তা কর্মচারীর সাথে আমার বিরোধ নাই। গর্ভানিং বডির সকল সদস্য একমত হওয়ায় ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পরবর্তী ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির ফাইনাল তদন্ত প্রতিবেদন পেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে আগের প্রতিবেদনটির সত্যতা কতটুকু। উভয় প্রতিবেদনে অলিউর রহমান অভিযুক্ত হলে তার বিরুদ্ধে বিধিগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে