ময়মনসিংহের নান্দাইলে আসহায় বাবার চৌদ্দ মাসের শিশুকে আর দওক দিতে হবে না। এই শিশু সন্তান ছাড়াও আরো দুই সন্তানকে রেখে দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে স্ত্রী মারা যায় ১৭ দিন আগে। এ অবস্থায় ইজিবাইক চালক আব্দুল হান্নানের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। নিজের শারীরিক বিভিন্ন অসুখের কারনে এখন আর ইজিবাইকও চালাতে পারছেন না। আয় উপার্জন এক রকম বন্ধ। এ অবস্থায় তিন সন্তানের মুখে আহার দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ায় ১৪ মাসের শিশু সন্তানকে দত্তক দিতে চেয়েছিলেন হান্নান।
এ নিয়ে গত ১৪ ডিসেম্বর-অভাবের-কারনে-১৪ মাসের শিশু সন্তানকে দত্তক দিতে চান বাবা শিরোনামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও প্রিন্ট মিভিয়াতে সংবাদ প্রকাশিত হলে অনেকেই এগিয়ে আসেন শিশু কন্যাকে দত্তক নিতে। কিন্তু সেসময় বাধসাধেন ওয়ার্ল্ড ভিশন নান্দাইল শাখা। বাবার কাছেই থাকবে শিশু সন্তান আর তার খরচ যোগাতে এগিয়ে আসেন ময়মনসিংহের নান্দাইল শাখার ম্যানেজার সুমন রোরাম।
আজ মঙ্গলবার সকালে তিনি উপজেলার চন্ডীপাশা এলাকায় অবস্থিত নিজের কার্যালয়ে ডেকে আনেন ওই বাবা হান্নান ও তার তিন সন্তানকে। তিনি হান্নানেরর আয় উপার্জণের পথ তৈরি করে দেন। এখন থেকে একটি চায়ের দোকান দিয়ে আয় করবেন নিজের সংসারের। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো, এরশাদ উদ্দিনের মাধ্যমে চা-দোকানের ১৮ প্রকারের সামগ্রি তুলে দেওয়া হয়।
অন্যদিকে বিতরণ শেষে ইউএনও এরশাদ উদ্দিন শিশুটিকে কোলে নিয়ে নগদ ১৫শ টাকা তুলে দেন। যা এখন থেকে প্রতিমাসে পাবে শিশুটি। এ সময় হান্নানের বড় মেয়ে নুসরাত জাহান নুন(১০),ছেলে মো. মোস্তাফিজুর রহমান(৬) সাথে ছিল। বড় মেয়ে নুন খুশি হয়ে বলে-আমরার বইন আমরার কাছে থাকবো। কেউ নিতো না। অহন যে কি খুশি লাগতাছে।
জানা যায়,ওই বাবার বাড়ি নান্দাইল পৌরসভার চন্ডীপাশা মহল্লায়। সেখানে দুই শতক জমির উপর জরাজীর্ন একটি ঘর। প্রায় এক যুগ আগে বিয়ে করেন আনোয়রা বেগমকে। গত দুই বছর ধরে দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছিলেন তিনি। তারপরও প্রতিবেশীদের কাজ কর্মে ও স্বামীর আয় দিয়েই কোনো মতে সংসার চলতো। এর মধ্যে রোগে আক্রান্ত থেকে প্রয়োজনীয় ঔষুধপত্র খেয়ে গচ্ছিত কিছু টাকা ছাড়াও ধারদেনা করে খরচ করেছেন।
হান্নান মিয়া জানান, স্ত্রী বেচে থাকতে ছিলেন এক ভরসা। কিভাবে সংসারের খরচ ছাড়াও সন্তানদের ভরপোষন করেছেন তা ছিল অনেকটা স্বপ্নের মতো। গত ২৫দিন আগে মারা যাওয়ার পর আমি এখন চোখে অন্ধকার দেখছি। নিজের শরীর খারাপ থাকলেও সন্তানদের ভরপোষণ করতে হিমসিম খাচ্ছি। বেশ কয়েক বছর ধরে একটি সিগারেট কম্পানিতে চাকুরি করলেও করোনাকালে চাকুরিও গেছে। পরে ইজিবাইক চালিয়ে আয় করলেও শরীরের অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাও বন্ধ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় মানুষের কাছে হাত পেতে ধারদেনা করে সন্তানদের দেখভাল করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আর পারছিলাম না। সন্তানদের মুখে এক বেলা আহার দিলে আরেক বেলা দিতে পারতেছি না। ১৪ মাসের শিশু তোয়ার দুধ যোগাড় হচ্ছে না। চোখের সামনে খিদায় কান্না করে। এখন সন্তানদের তাকিয়ে নিজেও মরতে পারি না। তাই মনস্থির করছিলাম কেউ যদি আমার সোনার ধনকে দত্তক নিতেন তাহলে অন্ততপক্ষে অন্য দুই সন্তানকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে জীবন পার করতাম। এখন ওয়ার্ল্ডভিশন ও ইউএনও স্যার যা করলেন তা জীবনেও ভুলতে পারবো না।
নান্দাইল ওয়ার্ল্ড ভিশনের ম্যানেজার সুমন রোরাম বলেন, এভাবেই সকলকেই এই সব অসহায় মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসা দরকার।
ইউএনও এরশাদ উদ্দিন জানান,খবর প্রকাশিত হওয়ার পর ওয়ার্ল্ড ভিশনের মাধ্যমে হান্নান ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পেল। এটাই মানবিকতা। আর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিমাসে শিশুর খরচের জন্য ১৫শ টাকা করে দেওয়া হবে। সমাজের অসহায় দরিদ্র মানুষের সাহায্যের মানবিকতার দৃষ্টান্ত হল এটী।