ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় অবৈধভাবে প্রবেশ করে অবাধে মৎস্য আহরণ করায় মাছ পাচ্ছে না দুবলার জেলেরা। খালি পড়ে আছে হাজার হাজার শুটকি তৈরীর মাচান। কেনাবেচা কমে গেছে আলোর কোলের দোকানপাটেও। হাসি নেই জেলে, শ্রমিক, বহদ্দার, ব্যবসায়ী কারো মুখেই। যার ফলে, এবছর চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার শুটকি পল্লীর জেলেরা।
ভারতীয় জেলেদের তান্ডবে কর্মচঞ্চলতা নেই শুটকি উৎপাদনকারী আলোর কোল, নারকেলবাড়িয়া, মাঝেরকিল্লা, মেহেরআলী ও শেলার চরে। হতাশায় ধুকছে ওই পাঁচটি চরে শুটকি প্রক্রিয়ায় সরাসরি নিয়োজিত ও সংশ্লিষ্ট প্রায় ২০ হাজার মানুষ। কোটি কোটি টাকা লোকসানে রয়েছে ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি কাঙ্খিত রাজস্ব আদায়েও ঘাটতির আশঙ্কা করছে বনবিভাগ।
গত শনিবার (২জানুয়ারি) শরণখোলা রেঞ্জের দুবলা জেলে পল্লী টহল ফাঁড়ির আওতাধীন শুটকি উৎপাদনকারী চরগুলো ঘুরে ক্ষতিগ্রস্ত জেলে-বহদ্দার, ব্যবাসয়ী, বনবিভাগসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা এই তথ্য জানা গেছে।
দুবলার আলোর কোলের শুটকি প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত সাতক্ষীরার আশাশুনির জেলে আতিয়ার রহমান, হামিদ মোড়ল এবং বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার আক্কাস শেখ ও প্রদীপ মিস্ত্রি জানান, তারা প্রত্যেকে ১৫-২০বছর ধরে শুটকি প্রক্রিয়াজাত করনের সাথে জড়িত। কিন্তু এবারের মতো এতোটা কম মাছ আগে কখনো দেখেননি। এবছর জেলে-মহাজন কারো মনেই আনন্দ নেই।
আলোরকোলে জেলেদের অস্থায়ী নিউমার্কেটের মেসার্স হাবিব এন্ড হবিবা স্টোরের মালিক মো. হাফিজুর রহমান জানান, তার দোকানে চাল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন মালামাল বিক্রি হয়। এপর্যন্ত জেলে-মহাজনদের কাছে প্রায় ৪ লাখ টাকা বাকি পড়েছে। সাগরে মাছ না পড়ায় বাকি টাকা আদায় করা সম্ভব হবে না।
মাঝের কিল্লার শুটবি ব্যবসায়ী চট্টগ্রামের মো. জাহিদ বহদ্দার জানান, গত বছর মাঝের কিল্লা চরে চট্টগ্রামের সাত জন বহদ্দার ছিল। কিন্তু এবার এসেছে মাত্র দুই জন। এখন পর্যন্ত তার প্রায় কোটি টাকা এবং তার পার্শ্ববতী আবু বহদ্দারও প্রায় ৮০ লাখ টাকা লোকসানে রয়েছেন। ভারতের জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে ছেঁকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে বলে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের ম্যানেজার মো. ফরিদ আহম্মেদ জানান, ভারতের জেলেরা আমাদের এক নম্বর ফেয়ারওয়ে বয়ার কাছাকাছি চলে আসে। যা দুবলার চর থেকে মাত্র ৫-৬ নটিক্যাল মাইল দুরে। তাদের ট্রলিংয়ে জিপিআরএস ও ফিশ ফাইন্ডার রয়েছে। তা দিয়ে দিক নির্ণয় ও মাছের অবস্থান সানাক্ত করে ঘনো ফাঁসের নেট দিয়ে আমাদের দেশের মাছ ছেঁকে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা লাক্ষা, ছুরি, রূপচাঁদা, লইট্যাসহ দামি মাছ পাচ্ছি না। আমাদের কম্পানি এবার কমপক্ষে পাঁচ কোটি টাকা লোকসানে পড়বে।
দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের সভাপতি মো. কামাল আহমেদ বলেন, ভারতের শতশত ফিসিং ট্রলার নিয়ে জেলেরা আমাদের মৎস্য সম্পদ লুটে নিচ্ছে। এব্যাপারে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডকে অবহিত করা হলেও এপর্যন্ত কোনো উদ্যোগ তাদের চোখে পড়েনি। বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতের জেলেদের বিচরন বন্ধ করতে না পারলে ঐতিহ্য দুবলার শুটকি উৎপাদন অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে।
দুবলা জেলে পল্লী টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রহ্লাদ চন্দ্র রায় বলেন, গত চার গোনে (অমাবস্যা-পূর্ণিমার হিসাবে) জেলেরা কোনো মাছ পায়নি। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্র পুরণ হবেনা। পাশাপাশি জেলে-মহাজনরাও চরম ক্ষতির মুখে পড়বে।
এব্যাপারে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, আমাদের জলসীমায় ভারতীয় জেলেদের মাছ ধরার বিষয়টি শুনেছি। এব্যাপারে কোস্টগার্ডকে অবহিত করার জন্য সংশিস্লষ্ট এলাকার বনকর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ভারতের জেলে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে মাছ ধারার বিষয়ে জানতে চাইলে মোংলা কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা আবু মুসা (এবি) বলেন, এধরণের কোনো ঘটনা ঘটলে দুবলা কোস্টগার্ড স্টেশনের সদস্যরা ব্যবস্থা গ্রহন করবে