পাবনার সুজানগর উপজেলার মানিকদির কাঠাল বাড়িয়া গ্রামের পুলিশ সুপার আব্দুল লতিফের বাড়ির একটি দ্বিতীয় তলা ভবনের কার্নিশ জুড়ে, দরজা জানালার সঙ্গে, বাড়ির আঙিনার কাঁঠাল গাছসহ বিভিন্ন গাছে ঝুলে আছে সাতাশটি মৌমাছির চাক। উপজেলা সদর থেকে দুই কিলোমিটার অদুরে মানিক দিয়ার কাঠাল বাড়িয়া গ্রামে পুলিশ সুপার আব্দুল লতিফের বাড়িতে এদৃশ্য শোভা পাচ্ছে। এসব লাখ লাখ মৌমাছির সঙ্গেই বসবাস করছেন বাড়ির লোকজন। আব্দুল লতিফ বর্তমানে রংপুর ডিআইজি কার্যালয়ে পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করেছেন। গ্রামের বাড়িতে তার ভাই স্কুল শিক্ষক নজরুল ইসলাম ও তার মা বসবাস করেন। পুলিশ সুপারের বাড়ি ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির চারিদিকে শুধু মৌচাক আর মৌচাক। এ মৌমাছি গুলো বাড়ির কোন সদস্যদের ক্ষতি করছে না। যদিও একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হচ্ছে বলে বাড়ির লোকজন জানান। শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর আমাদের বাড়িতে দুই একটা মৌচাক বসতো। কিন্তু এবার এতো মৌচাক বসবে কখনো কল্পনাও করিনি। তিনি আরও বলেন, গ্রামের বাড়ি হওয়ায় কাজকর্ম একটু সবারই বেশি। মৌমাছিদেরও ছোটাছুটির অন্ত নেই। কাজ করতে গেলে মৌমাছিদের সঙ্গে ধাক্কা লাগলেও তারা ক্ষিপ্ত হয়না। মৌমাছি গুলো যেন আমাদের পরিবারেরই অংশ হয়ে গেছে। বাড়ি ঘিরে বিপুল পরিমাণ মৌচাক দেখার জন্য নিজ এলাকা’সহ অন্যান্য গ্রামের অনেক লোকজন আসছেন। কবে নাগাদ কাটা যাবে মৌচাক এজন্য মৌয়ালদের তাগিদতো রয়েছেই। গ্রামীণ পাকা সড়কের পাশে বাড়ি হওয়ায় যাতায়াতের পথেই লোকজন দৃশ্যটি আনন্দ ভরে উপভোগ করেছেন। সাবেক একজন ইউপি সদস্য জানান, এর আগেও এই বাড়িতে মৌচাক বসেছে কিন্তু একসাথে এতো মৌচাক বসা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। লতিফ সাহেব পুলিশ সুপার হলেও তার বাড়ি সাধারণ বাড়ির মতোই। মৌচাকগুলো এই বাড়ির সৌন্দর্য বর্ধনে সহায়ক হয়েছে বলেও তিনি জানান। সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের দুবলিয়া গ্রামের বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক আব্দুল খালেক খান এক বাড়িতে অনেক মৌচাক বসেছে শুনে দেখতে আসেন। তিনি বলেন, একসাথে এতোগুলা মৌচাক দেখে আমি মুগ্ধ আনন্দিত। এতোগুলা মৌচাক আমার জীবনে এই প্রথম দেখলাম। বাজারে যে সকল মধু বিক্রি হয় তার সবই ভেজালে ভরা। তিনি এখান থেকে খাঁটি মধু সংগ্রহ করবেন বলে ব্যক্ত করেন। তারাবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা আমজাদ হোসেন মৌচাক দেখতে এসেছেন এবং বলেন, দোতলা বাড়ির চারিদিকে মৌমাছির চাকে ঘেরা। মোমাছিরাও নাচছে মনের আনন্দে। তিনি এও বলেন, আব্দুল লতিফ একজন এলাকার গর্ব আদর্শ মানুষ। তার আচার আচরণ খুবই ভালো তাই মৌমাছিরা দল বেঁধে তার বাড়িতে জড়ো হয়েছে। একই গ্রামের একজন প্রবীণ ব্যক্তি আব্দুস ছামাদ (৭০) জানান, এ গ্রামে অনেক কাঁচা পাকা বাড়ি গাছপালা রয়েছে, অথচ কোন মৌমাছির চাক নেই। এসপি লতিফের বাড়ির চারিদিকে মৌমাছির চাক। গ্রামে আগের মতো আর মৌমাছির চাক বসে না। তাই খাঁটি মধুও পাওয়া যায় না। অনেক বছর পর একসাথে এতো মৌচাক দেখলাম। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পুলিশ সুপার আব্দুল লতিফ জানান, বাড়িতে অনেক মৌমাছির চাক বসেছে শুনতে পেরেছি। একসাথে এতো গুলো মৌচাক বসা সত্যি আনন্দের বিষয়। ছুটি পেলে বাড়ি গিয়ে এ রোমাঞ্চকর সৌন্দর্যের মুহূর্ত উপভোগ করতে পারবেন বলে জানান তিনি। পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক শামসুল আলম জানান, চাষিরা গতানুগতিক চাষে অভ্যস্ত হয়ে পড়ায় সরিষা, তিসি, তিলের মতো মধুযুক্ত ফুল ও ফসল চাষ উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। তাই মৌমাছিরাও বন বাদারে জঙ্গলে গিয়ে মৌচাক তৈরি করছে। পাশাপাশি অত্যাধিক রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের ফলে ফুলে মধু সংগ্রহ করতে গিয়ে মৌমাছিরাও মারা পড়ছে। ফলে ক্ষেত খামারের পরাগায়ন কমে গেছে। এতে করে অনেক ফুলের গাছও মরে যাচ্ছে। অবশ্য সরিষা চাষ এলাকায় মৌমাছিরা এখনো ভিড় জমায়। তার জলজ্যান্ত উদাহরণ সুজানগর উপজেলার মানিকদির কাঠালবাড়িয়া গ্রামের পুলিশ সুপার আব্দুল লতিফের বাড়িতে মৌমাছিদের মেলা