ময়মনসিংহের নান্দাইলে আশ্রায়ন-প্ল্যােন অনুযায়ী হয়নি ইউএনওকে সতর্ক-চিঠি দিলেন পিআইও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের আশ্রায়ণ-২ প্রকল্পের সেমিপাকা ঘর ডিজাইন ও প্রাক্কলন মোতাবেক বাস্তবায়ন করা নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) সর্তক চিঠি দিয়েছেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও)। এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে ময়মনসিংহের নান্দাইলে। এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার পাশপাশি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে চিঠি দেওয়া অবমাননাকর আচরণের শামিল ছাড়াও সরকারি কর্মচারি শৃঙ্খলা ও আপীল বিধি ১৯৮৫ এবং আচরণ বিধিমালা ১৯৭৯ এর পরিপন্থী মনে করা হচ্ছে। এ অবস্থায় ইউএনও পিআইওকে শোকজ করেছেন আগামি তিন দিনের মধ্যে জবাব দেওয়ার জন্য।
পিআইও’র দেয়া চিঠি থেকে জানা যায়, তিনি ঘর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যসচিব ও কারিগরি কর্মকর্তা। সম্প্রতি তিনি তিনটি ঘর পরিদর্শন করেছেন। যে তিনটি ঘর নির্মাণ কাজ করা হয়েছে সেগুলো ড্রইং, ডিজাইন ও প্রাক্কলন মোতাবেক করা হয়নি। ঘর তিনটি নির্মিত হয়েছে নান্দাইল উপজেলার মুশুলি ইউনিয়নের একটি ও সিংরইল ইউনিয়নে দুইটি। এসব ঘর নির্মাণকাজের যাবতীয় উপকরণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এরশাদ উদ্দিন একাই ক্রয় করেছেন। কারিগরি কর্মকর্তা হিসাবে তাকে রাখা হয়নি। এমনকি বরাদ্দকৃত অর্থও ইউএনও নিজেই উত্তোলন করেছেন। যেহেতু কোনো কাজে তাকে রাখা হয়নি তাই ঘর নির্মাণের কাজ নিয়ে ভবিষ্যতে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন হলে তিনি কোনো দায়ভার নেবেন না। এ বিষয়টি তিনি চিঠি দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ইউএনওকে চিঠি দিয়ে অবহিতসহ সর্তকও করেছেন। আর এ চিঠির অনুলিপি দিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, জেলা প্রশাসক, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস ময়মনসিংহ।
এই চিঠি পেয়েই নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. এরশাদ উদ্দিন পিআইওর চিঠি দেওয়াকে ধৃষ্টতার শামিল বলে মনে করছেন। এ ধরনের চিঠি প্রদান সরকারি শিষ্টাচার বিবর্জিত ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে অবমাননাকর আচরণে শামিল উল্লেখ করে পিআইওকে তিনদিনের সময় দিয়ে পাল্টা চিঠি দিয়ে কারণ দর্শাতে বলেছেন। অন্যথায় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
কারণ দর্শানোর চিঠিতে ইউএনওর আরও উলেস্নখ করেন ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে সরকারের কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা), কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা), টেস্ট রিলিফ (টিআর), অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান (ইজিপিপি) ইত্যাদি প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলেও পিআইও আবদুল আলীম কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। বরং তিনি উপজেলা প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করেছেন।
এ ব্যাপারে পিআইও আব্দুল আলীম চিঠি দেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমার দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে। বারবার বলার পরও তিনি (ইউএনও) কোনো ধরনের কর্ণপাত করেননি। তাই বাধ্য হয়ে আমি দায়মুক্তি হওয়ার জন্যই এই চিঠি দিয়ে সর্তক করেছি। অন্যদিকে তিনি বলেন আমি জনপ্রশাসনের অধীনে নই। তাই শোকজের জবাব দেওয়ার জন্য আমি প্রস্তুত নই।
ইউএনও এরশাদ উদ্দিন বলেন, আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রেখে স্বচ্ছতার মধ্যেই ঘর নির্মাণ করেছি। আর এই ঘর নির্মাণের সময় পিআইও আমার সাথে সরেজমিনে গিয়েছেন। এখানে কোনো ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি করা হয়নি। তাছাড়াও প্রাক্কলনের বাইরে কাজ করা হয়নি। পিআইও’র এ ধরনের অপপ্রচার উপজেলা প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপপ্রয়াস। তিনি বিষয়টি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে অবহিত করন সহ এব্যপারে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহন করবেন বলে জানান। বিষয়টি ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার ঝড় তুলেছে।