বাগেরহাটের সিংগাতী এলাকায় অবৈধ ভাবে সরকারী (খাস খতিয়ান) এর জায়গার গাছ বিক্রি করে দিয়েছে একটি প্রভাবশালী মহল।কোনো নিয়ম নিতির তোয়াক্কা না করে ওই মহলটি গত রবিবার সিংগাতী গ্রামের বহু বছরের পুরানো বিভিন্ন প্রজাতির ১৪০টি গাছ যাত্রাপুরের তরিকুল নামক এক কাঠ ব্যবসায়ীর নিকট বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তরিকুল তার লিভার দিয়ে গাছ কাটা শুরু করলে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়ে স্থানীয়দের মধ্যে মুহুর্তে গন বিক্ষোভে পরিনত হয়।খবর পেয়ে ফকিরহাট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি)সদর তহশীলদারকে পাঠিয়ে কয়েকটি গাছ জব্দ করেন।।
প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসীর সুত্রে জানাগেছে,বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার সিংগাতী গ্রামের সমরেশ রায় চৌধুরী ৩৪ নং সিংগাতী মৌজার ২৫৭,২৫১,১৫৩ ও ১৫৪ খতিয়ানের (খাষ) ২১৬ও ২১৭ দাগ থেকে প্রায় ১৪০টি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ২লক্ষ ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেন,সদরের যাত্রাপুর বাজারের কাঠ ব্যবসায়ী তরিকুল এর কাছে।ক্রেতা তার লিভার দিয়ে গাছ কাটা শুরু করলে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি তাৎক্ষনিক ভাবে গ্রাম চৌকিদার শেখ দেলোয়ার হোসেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার,এ্যাসিল্যান্ড ও ফকিরহাট সদর তহশীলদারে অবগত করেন। উর্ধতন কতৃপক্ষের নির্দেশে সদর তহশীলদার ঘটনাস্থলে এসে কিছু কাঠ উদ্বার পুর্বক স্থানীয় ইউপি সদস্যর জিম্মায় রাখেন। এলাকাবাসী জানান,সমরেশ বাবু বিভিন্ন প্রজাতির বনজ গাছ যা ইতিপূর্বে সৈয়দ মিজানুর রহমান মেম্বরের কাছে ৩লক্ষ ৫০ হাজার,শেখ নুরুল ইসলাম স্যারের কাছে ২লক্ষ ৫০ হাজার ও তরিকুল এর কাছে ২লক্ষ ৭০ হাজার টাকায় ১৪০টি গাছ বিক্রি করেছেন।আমরা এর দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তি চাই।স্থানীয় ব্যবসায়ী বাবু সুব্রত বোস,শিক্ষক শেখ মুর্শিদ আলী,জেলা আইনজীবী সহকারী সমিতির সভাপতি মোড়ল মিজানুর রহমান মিন্টু,শেখ ফারুক হোসেন ও গ্রাম চৌকিদার শেখ দেলোয়ার হোসেন বলেন,খাস খতিয়ান এর সম্পত্তির গাছ কিভাবে তিনি বিক্রি করলেন সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।
এলাকায় কতিপয় ব্যাক্তি কোনো নিয়ম নিতির তোয়াক্কা না করে ক্ষমতাশীন দলের লেবাস লাগিয়ে অনৈতিক কর্মকান্ড করেন।তাদের বহু অপকর্মের কারনে সাধারন মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছেন।এদের নেত্রীত্বে রাতের আধারে অনেক রাস্তার পাশের গাছ কেটে নিয়ে বিভিন্ন গাছ ব্যবসায়ী ও স-মিল মালিকদের নিকট বিক্রয় করে দেয়।এদের বিরুদ্বে গ্রাম বাসি টুÑশব্দ করতে সাহস পায়না।আমরা কিছু লোক প্রশাসনের কাছে এসব অনিয়মের বিষয় জানালে ও প্রভাবশালীদের তদবীরের কারনে দুস্কৃতিকারীরা রেহাই পেয়ে যায়। যারা অবৈধ ভাবে গাছ কাটার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবী জানাই।তবে অভিযুক্ত বাবু সমরেশ রায় চৌধুরী বলেন,আমার পৈত্রিক জায়গার গাছ কেটেছি,এই সম্পত্তি নিয়ে আদালতে মামলা চলমান,পাশাপাশি উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমির কাছে আবেদন করেছি খাস জমি চিহ্নিত করে দেবার জন্য,কিন্তু একটি মহল আমাকে হেয় করার জন্য অপপ্রচার চালাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কাঠ ব্যাবসায়ী জানান,আমরা সমরেশ বাবুর কাছ থেকে টাকা দিয়ে গাছ কিনি কিন্তু সেগুলি সরকারী জায়গার কিনা সেটা আমাদের জানার বিষয় নয়।দীর্ঘ দিন কাঠের ব্যবসা করি তবে সরকারি জায়গার গাছ এরকম লুট হতে আমি কখনো দেখিনি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন,আমি শুনেছি সমরেশ বাবু নিজের জায়গার গাছগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন।এদিকে গাছ ক্রেতা কাঠ ব্যাবসায়ী তরিকুল ইসলাম এপ্রতিনিধিকে বলেন,সিংগাতীর সমরেশ বাবুর নিকট থেকে ১৪০টি গাছ নগদ ২লক্ষ ৭০ হাজার টাকায় কিনেছি,লিভাররা কিছু গাছ কাটার পড়ে কয়েকদিন সময় নিয়েছেন বাবু।স্থানীয় গ্রাম পুলিশ দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা,এ্যাসিল্যান্ড ও থানা পুলিশকে অবহিত করেছি।আমরা এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানাই। এদিকে গাছ বিক্রির বিষয়টি ধামা চাপা দেওয়ার জন্য একটি মহল বিভিন্ন ভাবে দেনদরবার চালাচ্ছে বলে জানাগেছে।ফকিরহাট মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ জানান,বিষয়টি আমি লোক মারফত শুনেছি।লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) রহিমা সুলতানা বুশরা বলেন,আমাকে সকালে একজনে ফোন করে বলেছে, তাৎক্ষনিক ভাবে সদর তহশীলদার(নায়েব)কে ঘটনা স্থলে পাঠিয়ে ব্যাবস্থা নিয়েছি। আর অবৈধ ভাবে গাছ কাটার সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সদর তহশীলদার (নায়েব) মো: আনিছুর রহমান,জানান,স্যারের নির্দেশে ঘটনাস্থলে গিয়ে কিছু গাছ জব্দ করে জিম্মায় রেখেছি।দু একদিনের মধ্যে ওইগুলি নিলামে বিক্রি করা হবে।