ইতালি নাগরিক ফাদার মারিনো রিগন বাঙ্গালীর সাংস্কৃতিক ঐশ্বর্য্যে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তাই তিনি বাংলাদেশকে ভালোবেসে বলেছিলেন মৃত্যুর পর যেন এই দেশেই তাঁকে সমাহিত করা হয়। তাঁর মস্তকে ছিলো রবীন্দ্রনাথ আর অন্তরে ছিলো লালন। বাঙ্গালীর সাহিত্য-সংস্কৃতিকে বহির্বিশ্বে তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ফাদার রিগন অঘোষিত রাস্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন। ৫ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকালে মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু, কবি-সাহিত্যিক-অনুবাদক-শিক্ষানুরাগী ফাদার মারিনো রিগনের ৯৭তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে মোংলার সেন্ট পল্স হলরুমে ফাদার রিগন শিক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সেন্ট পল্স উচ্চ বিদ্যালয় এবং সেবা সংস্থার আয়োজনে স্মরণানুষ্ঠানে বক্তারা একথা বলেন।
শুক্রবার সকাল ১০টায় স্মরণানুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফাদার রিগন শিক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন’র সভাপতি সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন উপজেলা নির্বাহি অফিসার কমলেশ মজুমদার। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন শিক্ষাবিদ সুনিল কুমার বিশ্বাস, সহকারি কমিশনার (ভূমি) নয়ন কুমার রাজবংশী, সেন্ট পল্স উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনীন্দ্র নাথ হালদার ও সেবা সংস্থার নির্বাহি পরিচালক মিনা হালদার। স্মরণানুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক সাংবাদিক মোঃ নূর আলম শেখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন মোংলা সরকারি কলেজের প্রভাষক মনোজ কান্তি বিশ্বাস।
স্মরণানুষ্ঠানের আগে সকাল ৯টায় ফাদার মারিনো রিগনের সমাধিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন করে উপজেলা প্রশাসন, ফাদার রিগন শিক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সেন্ট পল্স উচ্চ বিদ্যালয় , বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ’সেবা’সহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। স্মরণানুষ্ঠানে ফাদার মারিনো রিগনের ৯৭তম জন্ম বার্ষিকী উপলক্ষে শিশু চিত্রাংকন ও রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরন করা হয়। উল্ল্যেখ্য ইতালির ভেনিস নগরের ভিল্লার্ভিলা গ্রামে ১৯২৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ফাদার মারিনো রিগন জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৫০ সালে ফাদার রিগন যাজকীয় দায়িত্বে বাংলাদেশে আসেন এবং বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে অবশেষে মোংলার শেলাবুনিয়ায় স্থায়ী আবাস গড়ে তোলেন। সাহিত্যনুরাগী ফাদার রিগন রবীন্দ্র নাথের ৪৮টি বই এবং লালনের সাড়ে তিনশো গানসহ এদেশের খ্যাতিমান কবিদের অসংখ্য কবিতা ইতালি ভাষায় অনুবাদ করেন।
ফাদার রিগন মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা পান। এছাড়া ফাদার রিগনকে ২০০৯ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়। ২০১৭ সালে ফাদার রিগন ইতালিতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে সরকারের বিশেষ প্রচেষ্টায় ফাদার রিগনের মরদেহ বাংলাদেশে এনে তাঁর অন্তিম ইচ্ছানুযায়ী মোংলার শেলাবুনিয়া রাস্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়।