November 22, 2024, 5:40 am
শিরোনাম:
শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠক হিসেবে জাতীয় যুব পুরস্কার পেয়েছেন কক্সবাজারের নুরুল আফসার শিকদার মনোহরদীতে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন মনোহরদীতে দিনব্যাপী পাট চাষী প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত মনোহরদীতে মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রকে বেধরক মারধরের অভিযোগ মনোহরদীতে জনমত জরিপ ও প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী তৌহিদ সরকার মনোহরদীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী “আলোকিত গোতাশিয়া” ফেসবুক গ্রুপের পক্ষহতে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ মনোহরদীতে অসহায়দের মাঝে শিল্পমন্ত্রীর ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ মনোহরদীতে ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে বালু উত্তোলনের দায়ে খননযন্ত্র ও বালুর স্তুপ জব্দ এতিম শিশুদের নিয়ে ইফতার করলেন মনোহরদীর ইউএনও হাছিবা খান

পাবনায় গরু চুরি ঠেকাতে দড়ি বেঁধে গোয়াল ঘরেই রাত্রী যাপন

বাকী বিল্লাহ, (পাবনা) জেলা প্রতিনিধি:
  • আপডেটের সময় : বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২১
  • 434 দেখুন

পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার আতাইকুলা থানার বিল গ্যারকা পাড়ের সমৃদ্ধ এই গ্রামটির নাম চরপাড়া। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মণ্ডিত গ্রামটিতে এখন সন্ধ্যা নামলেই সবার মাঝে আতংক বিরাজ করে। সংঘবদ্ধ ও সশস্ত্র গরু-চোরদের ভয়ে আতংকে রাত কাটে গ্রামবাসীর। গরু চুরি ঠেকাতে এ গ্রামের সব গরু মালিক এখন গোয়াল ঘরে রাত্রী যাপন করেন। অনেকে গরুর দড়ি হাতে বেঁধে ঘুমান। তারপরও থামেনি গরু চুরি।

গত তিন মাসে অর্ধ-শতাধিক (কেউ বলেছেন একশ’র মতো) গরু চুরি হয়েছে এই গ্রাম থেকে। তবে পুলিশ এ তথ্য মানতে নারাজ। আছিয়া খাতুন (৩৫) নামের গ্রামের এক বাসিন্দা জানান, তার স্বামী রমজান আলী ভ্যানচালক। সংসারের সচ্ছলতার জন্য একটি গরু পালন করছেন। গোয়াল ঘর ভাঙাচোরা হওয়ায় তার স্বামী গোয়াল ঘরে রাত কাটান। গরুর দড়ি হাতে নিয়ে মেঝেতেই ঘুমান। এর মধ্যে একদিন ঘুমন্ত অবস্থায় গরুর লাথি খেয়ে আঘাত পেয়েছেন রমজান আলী। কোরবান আলী (৬০) নামের আরেকজন জানান, তার কিছু জমিজমা আছে। সে জমি থেকে কিছু বাড়তি আয় করেন। তবে জমিতে সংসারের খরচ ওঠে না। তাই গরু পুষে বাড়তি কিছু আয় করেন। কিন্তু চোরের ভয়ে তারা দিশেহারা। তিনি ও তার স্ত্রী রেহানা খাতুন দুজন রাত জেগে গরু পাহারা দেন।

তিনি আরও জানালেন, পাকা গোয়াল ঘর দেয়ার সামর্থ্য তার নেই। তাই তিনি গোয়াল ঘরের চারদিকে বাবলা ও খেঁজুরের কাঁটার বেড়া দিয়ে রেখেছেন। আমার বাপ-দাদারা কেউ কোন দিন গোয়াল ঘরে থাকেনি। আজ গরু চোরদের অত্যাচারে গোয়াল ঘরে থাকতে হচ্ছে। সন্তানেরা নিষেধ করে গোয়াল ঘরে থাকতে তারপরও থাকছি। কারণ গোয়াল ঘরে আমি না থাকলে গরু থাকবে না। আমরা চরম আতংকে রয়েছি। কিন্তু আমাদের কষ্ট দেখার মতো কেউ নেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন কোরবান আলী। গরু চুরি প্রসঙ্গে গ্রামের বাসিন্দা মোন্নাফ আলী খাঁন (৫৫) জানালেন, তার কিছু জমিজমা আছে। বাড়তি আয়ের জন্য কষ্ট করে গরু পালন করেন।

একদিন তার ছয়টি গরুর মধ্যে চারটি গরু চোরেরা নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তার স্ত্রী হোসনে আরা খাতুন টের পাওয়াতে চোরেরা গরুগুলো মাঠের মধ্যে ফেলে পালিয়ে যান। পরে ভয়ে তিনি ওই চারটি গরু বিক্রি করে দিয়েছেন।চোরের ভয়ে তিনি কাঁচা গোয়াল ঘর হাফ ওয়াল করে পাকা করছেন। আর পালাক্রমে জেগে থেকে বাকি গরু দুটিকে চোরের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। মোন্নাফ আলীর স্ত্রী হোসনে আরা খাতুন বলেন, এভাবে কি জীবন চলে? সারাদিন কাজকর্ম করতে হয়। রাত জাগার কারণে সারাদিন কাজ করা যায় না।কৃষক আব্দুল লতিফের স্ত্রী জাহানারা খাতুন (৪৫) তিনটি গরুকে খাওয়াচ্ছিলেন। পাশাপাশি তার কষ্টের কথা বলছিলেন। তিনি জানান, তাদের কোনো জমিজমা নেই। গরু মোটাতাজা করে সংসারে বাড়তি কিছু আয় হয়। তাদের পাঁচটা গরু ছিল। চোরের ভয়ে দুইটা গরু বেচে দিয়েছেন।

স্বামী আর তিনি গোয়াল ঘরে চৌকি পেতে থাকেন। পালাক্রমে দুজনই সারারাত গোয়াল ঘরে জেগে থাকেন। চরপাড়া গ্রামের আকতার হোসেন বলেন, রাজমিস্ত্রির কাজ করি। সারাদিন কঠোর পরিশ্রম শেষে রাতে শান্তি মতো ঘুমাবো সে সৌভাগ্য হয় না। কারণ গরু পালন করি। রাত তিনটা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত গরু পাহারা দিতে হয়। ঘুম কম হওয়ায় দিনের বেলায় কাজকর্ম ঠিকমতো করতে পারছি না। এজন্য গরু বিক্রি করে ফেলার কথা ভাবছি। গরু চুরির শিকার আবদুল মান্নান (৫৫) বললেন, একটি বাছুর গরু কিনেছিলাম তিন বছর আগে। সেটিকে তিন বছর লালন পালন করে বড় করেছিলাম।

সেটি গাভিন গরু ছিল। কয়েক মাস গেলে দোয়ালে গাভি হতো। আমার থাকার ঘরের পাশেই গোয়াল ঘর ছিল। রাত জেগে দেখার পরও একদিন অসচেতন থাকার কারণে বাজার মূল্যে দেড় লাখ টাকা দামের সেই গাভিটি গত মাসে গরু চুরি হয়েছে। তিনি বলেন, আমার গরুর গোঁড়াটি (গরুর খাবার দেয়ার জায়গা) এখন শূন্য। মনের দুঃখে গরুর গোঁড়ার ওপর লাউগাছ লাগিয়েছি। গরু হারানো কৃষক রেজাউল করিম জানালেন, তার তিনটি গরু চুরি হয়েছে।

আর দুটি গরু আছে। তিনি গোয়াল ঘরেই শুয়ে থাকেন। গরু দুটি শিকলে বেঁধে রাখেন। ফেরদৌসী খাতুন গ্রামের এক কৃষক বধূ জানান, প্রতিদিন গরু চোর আসে। এজন্য সারা গ্রামের মানুষ আতংকে থাকেন। চরপাড়া গ্রামের গরু মালিকদের অনেকে জানান, তাদের বলার জায়গা নেই। গরু চোর দেখে চিনতে পারলেও তারা ভয়ে কিছু বলতে পারেন না। তারা আরও জানান, গরু চোররা সশন্ত্র থাকে। তাদের মোকাবিলা করা নিরীহ সাধারণ জনগণের একার পক্ষে সম্ভব না। তাদেরকে প্রশাসনের লোকজন সহযোগিতা করলে এত দুর্ভোগ পোহাতে হতো না।

একজন বললেন, প্রতিটি চাষি বাড়ি গিয়ে দেখা যাবে, গোয়াল ঘরে চাষির বিছানা পত্র। এটা সত্য ঘটনা। গ্রামে সত্যিকার অর্থে পুলিশি টহল থাকলে এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। এ বিষয়ে পাবনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আল মামুন হোসেন জানান, চাষিরা বাড়তি কিছু আয়ের জন্য গরু মোটাতাজা করেন। এর পেছনে আর্থিক খরচের পাশাপাশি শ্রমের বিষয়টি জড়িত আছে। সে কষ্টের গরু চুরি হয়ে যাওয়াটা দুঃখজনক। এটা চাষির একার নয়, দেশেরও ক্ষতি। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) পাবনা জেলা সাধারণ সম্পাদক ও পাবনা জেনারেল হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ডা. আকসাদ আল-মাসুর আনন জানান, যে কোনো সুস্থ মানুষের জন্য প্রতিদিন ৬- ৮ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। শ্রমজীবী মানুষ গুলো যদি এভাবে দিনের পর দিন কম ঘুমান তাহলে তারা নানা শারীরিক রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তাদের কর্ম ক্ষমতা হ্রাস, হার্ট ও কিডনির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস আক্রান্ত থেকে শুরু করে স্ট্রোকও হতে পারে। আতাইকুলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম ব্যাপক ভাবে গরু চোরের উপদ্রবের কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ওই এলাকায় বিচ্ছিন্ন ভাবে দু’চারটি গরু চুরি হয়েছে। তবে গরু চুরি বন্ধ করতে পুলিশি টহল অব্যাহত রয়েছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর

https://bd24news.com © All rights reserved © 2022

Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102