বিগত সময়ে সর্বত্র ঘোড়ার গাড়ী প্রচলন থাকলেও সময়ে কাল গর্ভে হারিয়ে গেছে নানা রংবে রংয়ের ঘোড়ার গাড়ী । ইঞ্জিনযুক্ত যানবাহনের ভিড়ে শহর, গ্রাম গুলো ঘোড়ার গাড়ী আগের মতো চোখে না পড়লেও এখনো চরঅঞ্চল গুলোতে নদীর বুকে নৌকার পাশাপাশি ঘোড়ার গাড়ী প্রচলন রয়েছে।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী গাইবান্ধা জেলার ৭ টি উপজেলার ৮২ টি ইউনিয়নে দেড় শতাধিক চর রয়েছে। তবে এসব চরে ঘোড়ার গাড়ির সংখ্যা জানা যায়নি।উত্তরের জনপদ গাইবান্ধা জেলা। এ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ঘাঘট, কাটাখালি করতোয়াসহ বেশ কয়েকটি নদী। নদীবেষ্টিত এই জনপদে রয়েছে বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল। বর্ষায় নৌকা ব্যবহার হলেও গ্রীষ্মে চরাঞ্চলের বালুতে ঢেকে যায় সড়ক। তাই ধু ধু বালুচরের বুক চিরে বয়ে যাওয়া মাঠে মানুষদের পরিবহন মানেই অপিহার্য হয়ে দাঁড়ায় ঘোড়ার গাড়ি। এক সময় জেলার প্রায় সব অঞ্চলেই দেখা মিললেও এখন শুধু চরেই চলছে ঘোড়ার গাড়ি। আগে ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন ছিল চোখে পড়ার মতো। সময়ের ব্যবধানে এখন আর শহরে ঘোড়ার গাড়ির দেখা না গেলেও তার প্রস্থান শুধু চর গুলোয়।
তারমধ্যে ফুলছড়ি উপজেলার বিভিন্ন চরে মালামাল পরিবহনে ব্যবহার হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি। এই গাড়ি ব্যবহারের ফলে যেমন দ্রুত সময়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া সহজ, তেমনি কমছে পরিবহন খরচ। মরুর জাহাজ উটের পথ ধরে চরের জাহাজ হয়েছে ঘোড়া। টেনে ছুটিয়ে নিয়ে যায় বিশেষায়িত এক ধরনের গাড়ি, যা দেখতে অনেকটা গরুর গাড়ির মতো। তবে চরাঞ্চলে এই গাড়ি গরুর শক্তিতে সহজে চলতে পারে না। প্রয়োজন হয় অশ্বশক্তি। যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে চরের জাহাজ হয়েছে ঘোড়ায় চালিত বিশেষ গাড়ি। অস্তিত্ব রক্ষায় চরের মানুষ ঘোড়ায় চালিত এই গাড়ি উদ্ভাবন করেছে। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ঘাঘট, কাটাখালি, করতোয়ার চরে এমন গাড়ি যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ধরে রেখেছে। মানুষের দুর্ভোগ অনেক কমেছে। এখন আর তপ্ত বালির ওপর দিয়ে হেঁটে দীর্ঘ চর পাড়ি দিতে হয় না। চরের মানুষের হেঁটে দূরের হাটবাজারে পণ্য নিয়ে যাওয়ার কষ্ট দূর হয়েছে।
ব্রহ্মপুত্র নদীবেষ্টিত ফুলছড়ি উপজেলার টেংরাকান্দি চরের ঘোড়ার গাড়ীর মালিকগণ বলেন, একটি ঘোড়ার গাড়ি দিয়ে প্রতিদিন এক হাজার টাকা আয় হয়। এভাবেই চলে তার সংসার। প্রতিদিন নদীর ঘাট থেকে মালামাল আনা নেয়া করে গত পাঁচ বছরে সংসরের অনেক উন্নতি হয়েছে। তিনি আগে দিনমজুর হিসেবে প্রতিদিন তিনশ থেকে সর্বচ্চ পাঁচশ টাকা আয় করতেন। আর এখন প্রতিদিন এক হাজার থেকে অনেক সময় দেড় হাজার টাকাও আয় করেন। টেংরাকান্দি চরের ঘোড়া গাড়ী চালকগণ জানান, চরে যোগাযোগের কোনো সড়ক নেই। তাই চরের আকাবাঁকা-উঁচুনিচু রাস্তায় ঘোড়ার গাড়িতে মালামাল পরিবহন করতে হয়।
তিস্তা নদীবেষ্টিত সুন্দরগঞ্জের বেলকা ইউনিয়নের অনেকে আজ পেশা পরিবতর্ন করে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে একটি ঘোড়া কিনে নেন। পরে সেই ঘোড়ার গাড়ি দিয়েই চলছে সংসার। খাটিয়ামারি ইউনিয়নের একাধিক ব্যবসায়ি বলেন, বন্যার সময় নৌকায় মালামাল পরিহন করা হত। কিন্তু এখন নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে এক চর থেকে আরেক চরের কৃষিপণ্য বা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পরিবহনে একমাত্র ভরসা এ ঘোড়ার গাড়ি।
সাঘাটা উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়ন বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, হারাতে বসেছিল এই ঐতিহ্যবাহী ঘোড়ার গাড়ির ব্যবহার। ইঞ্জিলচালিত পরিবহনের ভিড়ে ঘোড়ার গাড়ি আর শহরে দেখা যায় না। কিন্তু যমুনা নদীবেষ্টিত বিভিন্ন চরে গত ১০ বছর থেকে বেড়েছে ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন। এখন চরে দেখা মেলে এই ঘোড়ার গাড়ির।
এদিকে জেলার সচেতন মহল বলেন,আমরা ছোটবেলায় গরুর গাড়ি ও ঘোড়ার গাড়িতে বিভিন্ন স্থানে যেতাম। আগে গাইবান্ধা শহর অনেক ছোট ছিল। এই শহরে স্টেশন রোডটিই ছিল প্রধান সড়ক। এই সড়কেই চলত ঘোড়ার গাড়ি। সেসময় গ্রামাঞ্চলে ঘোড়ার গাড়িতে চলাচল ও বিয়ের অনুষ্ঠানের প্রচলন ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সিএনজি আটোরিকশা ও ইঞ্জিনচালিত গাড়ির কারণে এখন আর ঘোড়ার গাড়ির দেখা মেলে না। এখন ঘোড়ার গাড়ি দেখতে শহরের মানুষ গাইবান্ধা বিভিন্ন নদীর চরে যায়। যদি সেখানেও ইতি মধ্যে ঘোড়ার গাড়ীর সাথে যুক্ত হয়েছে মোটরসাইকেল। চর পারাপরে এসকল মোটরসাইকেলে দ্রুত চলাচল করলেও মালামাল পরিবহনে একমাত্র বাহন ঘোড়ার গাড়ী।