তালার পাখিমারা টিআরএম বিলের পেরিফেরিয়াল বাঁধ অনতিবিলম্বে উঁচু ও মজবুত করে নির্মাণ এবং ক্ষতিপূরণের অর্থ পরিশোধের মাধ্যমে টিআরএম কার্যক্রম অব্যাহত রাখার দাবীতে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (১০ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১ টায় পানি কমিটি আয়োজনে তালা প্রেসক্লাবে
সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক অচিন্ত্য সাহা।
লিখিত বক্তব্যে সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, তালা উপজেলার পাখিমারা বিলে টিআরএম কার্যক্রম বাস্তবায়ন হওয়ায় জনজীবনে স্বস্তি ও দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার কবল থেকে মুক্ত হয়েছে কপোতাক্ষ অববাহিকার মানুষ। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন জটিলতার কারণে পাখিমারা বিলে টিআরএম কার্যক্রম অব্যাহত রাখা যাবে কিনা তা নিয়ে জনমনে সংশয় দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, গত শতাব্দীর ৯০ দশকে কপোতাক্ষ অববাহিকায় জলাবদ্ধতা শুরু হয় । জলাবদ্ধতায় জনজীবন অচলাবস্থার সম্মুখীন হয়। দীর্ঘদিনের এই জলাবদ্ধতার সমাধানকল্পে জনগণের দাবীর প্রেক্ষিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক উদ্যোগে ‘কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্প (১ম পর্যায়) নামের একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়। প্রকল্পটি শুরু হয় ২০১১ সালের জুলাই মাসে এবং সমাপ্ত হয় ২০১৭ সালের জুন মাসে। প্রকল্পটির প্রধান দুটি বিষয় ছিল ৯০ কি.মি নদী খনন এবং তালা উপজেলার জালালপুর, খেসরা ও মাগুরা ইউনিয়নে অবস্থিত পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়ন।
পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়ন হওয়ায় কপোতাক্ষ অববাহিকা জলাবদ্ধতা মুক্ত হয়েছে, উপকৃত হয়েছে প্রায় ১৫ লক্ষ অধিবাসী।
প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের অগ্রগতি অব্যাহত রাখার স্বার্থে ইতিমধ্যে ২য় পর্যায় প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়েছে। বিগত ২০২০ সালের আগষ্ট মাসে ৫৩১ কোটি ৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে ৪ বৎসর মেয়াদী ২য় পর্যায় প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পটির মূল কাজ হলো পাখিমারা বিলে টিআরএম কার্যক্রম অব্যাহত রাখা এবং নদী খনন।
তিনি বলেন, ২০২০ সালের ২০ মে উপকূলীয় এলাকায় প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আম্ফান সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস তান্ডবে পাখিমারা বিলের পেরিফেরিয়াল বাঁধ ৫ জায়গায় ভেংগে যায়। এতে জালালপুর ও মাগুরা ইউনিয়নের ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে। মানুষের ঘরবাড়িতে পানি উঠে যায়। ভেসে যায় ফসলীক্ষেত, মৎস্য খামার এবং চলাচলের রাস্তা। প্রবল জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে পেরিফেরিয়াল বাঁধ দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। বাঁধের ভগ্নদশা এমন অবস্থায় উপনীত হয়েছে যে অতি জোয়ারে যে কোন সময় বাঁধ ভেঙে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হতে পারে। সর্বদা জনমনে এ আশংকা বিরাজ করছে টিআরএম বাঁধ পুননির্মান না করে যদি টিআরএম কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয় তাহলে এলাকায় বসবাস করা যাবে না। একদিকে বসবাসের সমস্যা, জীবিকা নির্বাহের সমস্যা এবং ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তিতে বিভিন্ন ধরণের ভোগান্তির কারণে এলাকার জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বিল অধিবাসীদের বক্তব্য পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়নের দরুণ বিশাল কপোতাক্ষ অববাহিকার মানুষ উপকৃত হয়েছে। কিন্তু তাদের দুঃখ দুর্দশা ভোগান্তি লাঘবে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ প্রকল্পটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত অগ্রাধিকার মূলক একটি প্রকল্প। প্রকল্পটির সফলতা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হোক সেটি কোনক্রমেই কাম্য হতে পারে না। জনগণ ও সচেতন মহল মনে করে টিআরএম বাস্তবায়নের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য এলাকার জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদদের অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা জরুরী হয়ে পড়েছে।
একথা দিবালোকের মতো সত্য যে, এলাকাকে বাঁচাতে হলে পাখিমারা বিলে টিআরএম বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নাই। তাই টিআরএম অব্যাহত রাখার স্বার্থে জনগণের দাবী, অনতিবিলম্বে পাখিমারা বিলের পেরিফেরিয়াল বাঁধ উচু ও মজবুত করে নির্মাণ করা এবং প্রথম পর্যায় প্রকল্পের বকেয়া ও দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পের ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ করে টিআরএম কার্যক্রম অব্যাহত রাখা। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনসহ সকল মহলের জোরালো ভূমিকা গ্রহণের জন্য জনগণের পক্ষ থেকে আবেদন জানান।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও তালা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সরদার মশিয়ার রহমান, তালা উপজেলা পানি কমিটির সাধারণ সম্পাদক মীর জিল্লুর রহমান, পানি কমিটি নেতা মোঃ শফিকুল ইসলাম, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সরদার ইমান আলী, আওয়ামী লীগনেতা সৈয়দ ঈদ্রিস, উক্তরণ কর্মকর্তা মোঃ ফাওজুল কবীর প্রমুখ।