ঝালকাঠি জেলার নলছিটি বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রেহানা পারভিন (৫৪)। তিনি প্রাণঘাতী করোনায় আক্রান্ত। বেশ কয়েকদিন বাসায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। শনিবার (১৭ এপ্রিল) হঠাৎ অক্সিজেন লেভেল কমে আসে তার।
লকডাউনে যানবাহন না পেয়ে সিলিন্ডার নিজ পিঠে বেঁধে মুমূর্ষু মাকে বাইকে বসিয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) উদ্দেশ্যে ছোটেন ছেলে জিয়াউল হাসান। লকডাউনে চরম বিড়ম্বনার এমন আবেগঘন দৃশ্য শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
শিক্ষিকা রেহানা পারভিনের বোনের ছেলে নাঈম হোসেন বলেন, ’গত সপ্তাহে শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয় খালার। বৃহস্পতিবার তার নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ আসে। শেবাচিম হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে বাড়িতেই আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘অক্সিজেন লেভেল কমে আসায় সিলিন্ডারের মাধ্যমে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছিল। হঠাৎ শনিবার বিকেলে শ্বাসকষ্ট বাড়লে কৃষি ব্যাংকের ঝালকাঠি শাখার কর্মকর্তা জিয়াউল হাসান বিকেলে তার মাকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা হন।’
’চলমান লকডাউনে কোনো যানবাহন না পেয়ে উনি বাধ্য হয়ে পিঠে সিলিন্ডার বেঁধে তার মাকে মোটরসাইকেলে বসিয়ে শেবাচিম হাসপাতালে যান’, বলেন নাঈম হোসেন।
জানা যায়, ছবিটি শনিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড করেছিলেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট তৌহিদ টুটুল। তিনি সেখানে উল্লেখ করেছেন- ‘বিবেকহীন মানুষের সচেতনতাকে ধাক্কা দেয়া আবেগ।’
জানতে চাইলে সার্জেন্ট তৌহিদ বলেন, ’লকডাউনে বরিশাল-কুয়াকাটা সড়কের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানে চেকপোস্ট বসানো হয়েছিল। বিকেলে এক মোটরসাইকেল আরোহী পিঠে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। তার পেছনে বসা নারী অক্সিজেন সাপোর্টে ছিলেন। তিনি মোটরসাইকেল না থামিয়ে তাদের দ্রুত গন্তব্যে যেতে দেন।’
এমন আবেগঘন দৃশ্য দেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়ায় বরিশালের অনলাইন ব্যবসার উদ্যোক্তা রেফাত আরা সিমেন উল্লেখ করেন, ‘আহারে জীবন!’
মোজাম্মেল হক অপু নামে বরিশাল জেলা প্রশাসনের সাবেক এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, ‘যারা করোনাকে পাত্তা দিচ্ছেন না, আশপাশের এটাই আসল চিত্র।’
ইমরান মীর নামে এক তরুণ লিখেছেন, ‘মানবতা আর সহযোগিতা এখনও মরেনি।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর বাবুগঞ্জ উপজেলা সম্পাদক আরিফ উদ্দিন আহমেদ মুন্না উল্লেখ করেন, ‘এ ছবিটা প্রমাণ করে আজ কতটা অসহায় আমরা!’