পাবনার অধিকাংশ উপজেলায় চৈত্র মাসের তীব্র তাপদাহে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ইউনিয়ন ও পৌরসভার অধিকাংশ নলকূপ দিয়ে পানি উঠছে না। ফলে এসব এলাকায় তীব্র পানির সংকট দেখা দিয়েছে।বিশুদ্ধ পানির অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এলাকার মানুষ। সঙ্গে কৃষকরাও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। জমির ধান-পাট মরে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও গভীর নলকূপেও পাওয়া যাচ্ছে না পানি। দু-এক জায়গা পানি পাওয়া গেলেও টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে।
অস্বাভাবিক ভাবে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এই রমজানে দিশেহারা এলাকাবাসী পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। তারা ঠিকমতো নামাজ ও রোজা পালন করতে পারছেন না। সাহরি ও ইফতারের সময় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন গ্রামবাসীরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার সাঁথিয়া, সুজানগর, চাটমোহর, ঈশ্বরদী ও সদরের বেশিরভাগ এলাকায় টিউবয়েল ও নলকূপগুলোয় পানির দেখা মিলছে না। গভীর-অগভীর নলকূপগুলো বন্ধ হয়ে অকেজো হওয়ার পথে। উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর জানায়, পরিবেশগত নানা কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত পানির স্তর গড়ে ৪০ থেকে ৭০ ফুট গভীরে। বেশিরভাগ এলাকায় এ স্তর পৌঁছালেই পানি পাওয়ার কথা।কিন্তু উপজেলার বেশিরভাগ এলাকায় অস্বাভাবিক ভাবে নিচে নেমে গেছে পানির স্তর। প্রতি বছর তীব্র তাপদাহে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত এ অবস্থা আরও প্রকট আকার ধারণ করে।
সরেজমিন জেলার বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলে ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ এলাকায় অগভীর নলকূপে পানি ওঠা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। সবচেয়ে কষ্টের সম্মুখীন হচ্ছেন পল্লী অঞ্চলের মানুষ। প্রতি ১০টি নলকূপের মধ্যে ৮টিই অকেজো হয়ে গেছে। নামাজের জন্য পানি থেকে শুরু করে খাবার পানি, গোসল ও গৃহস্থালীর কাজের জন্য পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পুকুর ও জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন গ্রামে বিশুদ্ধ পানির জন্য হাহাকার শুরু হয়েছে। সুজানগরের চরখলিলপুর এলাকার কৃষক আফতাব আহমেদ বলেন, টিউবয়েল তো দূরের কথা এখন বিদ্যুৎ চালিত পাম্প দিয়ে পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে না। কিছুদিন আগে রাতে ও ভোরে কিছু পানি উঠত। এখন সব সময়ই পানি পাওয়া যাচ্ছে না। যার কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। সাঁথিয়া উপজেলার ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নের মেওয়াপুর ও রসুলপুর গ্রামের মান্নান, শিল্পী ও আবু জানান, পানির সংকটে আমরা কোনো কাজই ঠিকমত করতে পারছি না। বিশেষ করে এই রমজানে খুবই কষ্ট হচ্ছে পানির জন্য। দিনের বেলা পানি সংগ্রহ করে না রাখলে রাতে রোজা রাখতে সমস্যা হয়।
আতাইকুলা ইউনিয়নের বামনডাঙ্গা গ্রামের রহিম ও শামসুর রহমান জানান, পানির অভাবে যাদের সাব-মার্চেবল নলকূপ আছে তাদের ওখানে গিয়ে পানি নিয়ে আসি। অনেক কথা শুনতে হয়। একই গ্রামের পোলট্রি ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম জানান, পানির অভাবের কারণে আমি মুরগির বাচ্চা উঠাতে পারছি না। এ দিকে ঈদ এসে যাচ্ছে। ২৫ দিন ধরে পানি নাই। মুরগির ব্যবসার উপরই নির্ভর আমার সংসার।পাবনার সদরের সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের কৃষক জালাল উদ্দিন বলেন, আমি পেঁয়াজ উঠানোর পরে ৫ বিঘা জমিতে পাটের বীজ বপন করেছি, মাস পার হলেও বৃষ্টি হয়নি। নলকূপ দিয়েও পানি উঠছে না। যার কারণে পাটের বীজগুলো মাটির ভেতরেই মরে যাচ্ছে। এ কারণে সোনালি আঁশের চরম সংকট দেখা দিতে পারে। এদিকে বৃষ্টির দেখা না মেলায় পাবনার বিভিন্ন উপজেলার ফসলি জমিগুলো ফেটে চৌচির হয়ে গেছে, সবজি-ধান-পাট মাঠে মাঠে মরে মাটির সঙ্গে একাকার হয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি না হলে পাবনা অঞ্চলের ফসলের ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহরাজ উদ্দিন বলেন, পানির লেয়ার নিচে নেমে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যারা নিজস্ব ভাবে নলকূপ স্থাপন করেছে তাদেরই সমস্যা দেখা দিয়েছে। সাব-মার্চেবল নলকূপে সমস্যা হচ্ছে না।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আব্দুল কাদের বলেন, দীর্ঘদিন বৃষ্টির দেখা না মেলায় জেলার কৃষকরা চরম সেচ সংকটের মধ্যে পড়েছেন। তিনি আরও বলেন, যার কারণে ধান, পাটসহ অন্য ফসলাদি ব্যাপক ক্ষয় ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে বৃষ্টি না হলে পাটের বীজ বের হবে না। যার ফলে দেশে সোনালি আঁশের সংকট দেখা দিতে পারে।