বেকার যুবকদের চাকরি দিয়ে প্রতারণাই পেশা ফরিদুল ইসলাম জুয়েলের (৪১)। এজন্য তিনি নিজেকে পরিচয় দিতেন প্রধানমন্ত্রীর নারি হিসেবে। মঙ্গলবার (৪ মে) তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতারকৃত জুয়েল সম্প্রতি গাইবান্ধায় ব্যবসায়ী হাসান আলী হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি। সে গাইবান্ধা সদরের বল্লমঝাড়ের মাঠেরপাড় গ্রামের মৃত মোখলেসুর রহমানের ছেলে।
তাকে গ্রেফতারের পর বিকালে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। সেখানে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়া হয়।
দায়ের করা মামলা সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন থেকে ফরিদুল ইসলাম জুয়েল চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রতারণা করেন। তিনি বিশ্বাস অর্জনের জন্য একজনকে প্রধানমন্ত্রী সাজিয়ে কথা বলাতেন। তার ভাই আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির বহিষ্কৃত উপদপ্তর সম্পাদক মাসুদ রানার ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে প্রতারিতদের টাকা হাতিয়ে নিতেন। টাকা ফেরত চাইলে ভুক্তভোগীদের বিভিন্ন হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেন।
তিনি চাকরির কথা বলে গাইবান্ধা সদরের ফুলবাড়ি গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে শাহাদুল ইসলাম (২৪) ও সাদুল্যাপুর উপজেলার ভাঙ্গামোড়ের রেলের অবসরপ্রাপ্ত নিরাপত্তা কর্মী দুলা মিয়ার ছেলে সোহেল রানা (২৫) ও শ্যালক নয়ন মিয়ার (২৩) থেকে টাকা হাতিয়ে নেন। তিনি চাকরির ভেরিফিকেশনের নামে পুলিশকে দিতে হবে বলেও টাকা হাতিয়ে নিতেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শাহাদুল জানান, পড়াশুনার পাশাপাশি বাড়ির পাশে দোকান দিয়ে তিনি ব্যবসা করতেন। তার বাবার সঙ্গে সম্পর্কের সূত্র ধরে প্রতারক জুয়েল তাকে রেলের বুকিং সহকারী পদে চাকরি নিয়ে দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। এ জন্য ১৫ লাখ ২০ হাজার টাকায় চুক্তি হয়। গত বছরের ২৩ জুন প্রথম দফায় বেশিরবাগ এবং পরবর্তীতে ৬ সেপ্টেম্বর অবশিষ্ট টাকা নেয় জুয়েল। লিখিত পরীক্ষায় নির্বাচিত না হওয়ায় প্রতারক তাকে টাকা ফেরত দেবে বলে কথা দেয়। কিন্তু দিনের পর দিন ঘুরেও টাকা মেলেনি। গত ২৬ এপ্রিল টাকা চাইতে গেলে বরং উল্টো হুমকি ও জেল খাটানোর ভয় দেখায় ওই প্রতারক।
দুলা মিয়া জানান, নিজেকে ‘প্রধানমন্ত্রীর নাতি’ পরিচয় দিতেন জুয়েল। তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে কেউ কথাও বলেছে। সে তার ছেলে সোহেলকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ও শ্যালক নয়নকে রেলওয়ের বুকিং সহকারী পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে ২৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। কিন্তু নিয়োগ স্থগিত হওয়ায় টাকা ফেরত চাইতে গেলে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে তাড়িযে দেয়া হয়।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা সদর থানার ওসি মো. মাহফুজার রহমান বলেন, পুলিশ তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। তারা জুয়েলের প্রতারণার আরো ঘটনা থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছেন। এ জন্য তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পাশাপাশি আরো তদন্ত চলবে।