ছাত্রীজীবনের শেষ লগ্নেই ২২৫ টাকা থেকে লাখপতি সফল উদ্যোক্তা বলছি ছাত্রী থেকে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা পরিচয়ে নিজেকে পরিচিত করা পরিশ্রমী আখির কথা। ২০১৯ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে বেশকিছু পরীক্ষা বাকি থাকা অবস্হায় করোনা ভাইরাসের প্রভাবের জন্য লকডাউন ঘোষণা করা হয়।
হাজারো শিক্ষার্থীরা বাসায় অবসর সময় কাটাতে থাকে। আখি তখন বাসায় বসে একটা জামার কাপড়ে হ্যান্ডপেইন্টিং করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করে। এর আগে সে পড়াশোনায় থাকা অবস্হায় ২০২০ সালে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোক্তা উন্নয়ন সংস্হা থেকে পোশাক শিল্প কে ভিত্তি ধরে উদ্যোগক্তা প্রশিক্ষণ নেয়।
তার অনেক দিন এর স্বপ্ন ছিল সে পোশাক শিল্প নিয়ে কাজ করবে।ছোট বেলা থেকেই সেলাই কাজ সহ বিভিন্ন কুটিরশিল্পে তার আগ্রহ ছিল। কিন্তু পড়াশোনায় মেধাবী থাকায়,পরিবার পরিজন দের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে পারিপার্শ্বিক কাজকে প্রাধান্য না দিয়ে পড়াশোনার বিষয়ে ই তার গুরুত্ব ছিল বেশি। সে নরসিংদী সরকারি কলেজ থেকে ফিন্যান্স বিষয়ে অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা দেয়।
সে আগে থেকেই পূর্বপরিকল্পনা করে অনার্স পরীক্ষা শেষ করে চাকরি র প্রস্তুতির পাশাপাশি নিজের উদ্যোগক্তা হওয়ার স্বপ্ন নিয়েও আগাতে থাকবে। লকডাউনে তার পরীক্ষা আটকে গেলেও থেমে থাকেনি তার স্বপ্ন দেখা। স্বপ্নকে মেলে ধরতেই সে পরীক্ষামূলকভাবে জামায় হ্যান্ডপেইন্টিং করে এবং সবাইকে দেখানোর জন্য তা সোশ্যাল মিডিয়ার আপলোড করে। তখন মোটামোটি অনেকেই তার জামার ডিজাইন পছন্দ করে এবং তাকে উৎসাহিত করে।
২০২০ সালের মে মাসের ১১ তারিখ তার এক বন্ধু তাকে উৎসাহিত করে “উই” নামক ফেসবুক গ্রুপে এড করে দেয়। সে গ্রুপে জয়েন করে গ্রুপ এডমিন রাজীব আহমেদ স্যার এর পোস্ট গুলো ফলো করতে থাকে। স্যার প্রতিনিয়ত এক্টিভ থেকে বিভিন্ন বিষয় (যেমন: বাংলা টাইপে লেখা,গঠনমূলক কমেন্ট করা, গ্রুপের নিয়ম মেনে চলা,) শিখতে বলেন, নিজেকে পরিচিত করতে বলেন, কারণ উই এর মূল কথা” যাকেচিনি তার থেকেই কিনি”।
সে দেখতে থাকে গ্রুপের পরিচিত মানুষ গুলো আস্তে আস্তে আরে বেশি পরিচিত হচ্ছে, নিজেদের সফলতার গল্প বলছে। তার স্বপ্ন গুলো যেন এবার পূরণ হবেই, সে নিজের ভিতর থেকে শক্তি পায়।টানা ৪ মাস সে এক্টিভ থেকে শিখেছে উই থেকে। ততদিনে লাখলাখ মানুষ উই এ এড হয়েছে, শতশত সফল উদ্যোক্তার গল্প পেয়েছে,, তার অনুপ্রেণায় ছিল নিজেকে লাখপতি বলার গল্প গুলো, এর পিছনে কত পরিশ্রম কত ত্যাগ সবকিছুই সে শিখতে থাকে। সে তখন বাসায় থেকে টিউশনের টাকা থেকে অল্প কিছু গজ কাপড় কিনে হ্যান্ডপেইন্টিং করে নিজের হাতে কিছু বেবি ফ্রক বানায়।
সেপ্টেম্বর মাসে Twinkle নামে পেইজ খোলে তার উদ্যোগের যাত্রা শুরু করে,,কিন্তু পরবর্তীতে Twinkle কে পরিবর্তন করে “তনয়ারভুবন ” নাম করণ হয়। পেইজে এবং উই গ্রুপে ফ্রকগুলোর ছবি আপলোড করে,এবং তার থেকে কিছু বিক্রি ও হয় যায়। পাশাপাশি পূর্বে নিজের ভাগিনী ভাগিনাদের জন্য করা নকশিকাঁথা গুলোর কিছু ছবি আপলোড দেয়। সে নকশিকাঁথা গুলোর প্রীঅর্ডার পায়। এবং কাজ শুরু করে। বেবিনকশিকাথাঁ, হ্যান্ডপেইন্টিং বেবিফ্রক তখন তার পণ্য হিসেবে পরিচিত। অনলাইনে বেশ সাড়া পায় এবং সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত টানা উদ্যোগ চালিয়ে যায়।
ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত বাকিপরীক্ষাগুলো জন্য উদ্যোগ থেকে বিরতি নিয়ে আবার শুরু করে। বেবিনকশিকাথাঁ, বেবিফ্রক এর সাথে যোগ করা হয় ব্লক ও হ্যান্ডপেইন্টিং শাড়ি,পান্জাবী, থ্রীপিস।তার পন্যের প্রচার,প্রসার, বিক্রি সবকিছুই অনলাইন ভিত্তিক। প্রতিটা পণ্যের কাজ সে নিজের ডিজাইনে নিজের হাতে করে কাস্টোমার দের মন জয় করছে। তার হাতের কাজে সাহায্য করছে তার বড় বোন। পরিবার থেকে প্রথম কিছুটা বাধা থাকলেও আস্তে আস্তে তারাও উৎসাহ দিতে থাকেন এবং সবদিক সহযোগিতা করছেন।
গত এপ্রিল মাসে সে উই গ্রুপ থেকে লাখ টাকা সেল এর ফর্ম পূরণ করে। সে জানায়, আলহামদুলিল্লাহ্ আমার ঈদ উপলক্ষে কাজের চাপ অনেক, ঈদ পর্যন্ত অর্ডার এর হিসাব চাঁনরাতে করব ইনশাআল্লাহ। আশাকরি ভালো কিছু থাকবে। ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা নিয়ে সে জানায়, তার ইচ্ছে সে এমন কিছু করবে যেন গ্রামের বেকার মানুষ ছোট পরিসরে হলেও “তনয়ারভুবন” এর জন্য কাজ করে আয় করতে পারে। বাড়িতেই সে কার্যক্ষেত্রের ব্যবস্হা করবে, এবং অনলাইনকে গুরুত্ব দিবে যাতে মেয়েদের আয়ের জন্য বাইরে দৌড়াতে না হয়।
তার ডিজাইনে,পন্যের মানে বৈচিত্র আনবে, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করবে,উন্নত মানের মেশিনারিজ দিয়ে কর্মীদের কাজ করাবে যাতে তাদের কোন সমস্যা না হয়। দেশের বাহিরে পণ্যের বিস্তারের জন্য চেষ্টা করবে। এসব কিছুর জন্য তার পুঁজির দরকার, যা এই মুহুর্তে তার কাছে পর্যাপ্ত পরিমানে নেয়,যার জন্য সে পরিকল্পনা মাফিক আস্তে আস্তে এগিয়ে চলছে।
নতুন দের জন্য তার পরামর্শ,,, ” যারা যে কাজ করে মন থেকে আনন্দ পায়, যেই কাজের জ্ঞান পর্যাপ্ত আছে,সেই কাজেই এগিয়ে চলা উচিত। বাধাঁ পিছুটান কে প্রাধান্য না দিয়ে সৎভাবে এগিয়ে চলা উচিত,সততার পুরষ্কার স্বয়ং আল্লাহ দেন।” যারা এখনও পড়াশোনায় আছে, বা ব্যবসা বা উদ্যোগ নেওয়ার স্বপ্ন দেখেন তাদের উদ্দেশ্যে তার অভিমত – ” আগে থেকেই শেখা উচিত।
শিখতে শিখতেই সফল হওয়া যায়,আরো গুরুত্ব দিয়ে বলে – তারমত ভুল যেন কেউ না করে, ছাত্রজীবনে অপচয়কারী না হয়ে বরং টিউশনের টাকা থেকে হলেও অল্প অল্প সঞ্চয় করা উচিত, যা তাদের পরবর্তী জীবনে কাজে আসবে। সে যদি এই বিষয় টা মেনে চলত তাহলে আজকে তার উদ্যোগে পুঁজি সংকট থাকত না।” তবে সে আশা করছে পরিবারের সহযোগিতায় খুব শিগ্রই তার উদ্যোগকে আর ও বড় পরিসরে সবার সামনে নিয়ে আসতে পারবে।