চলমান বিধিনিষেধের (লকডাউন) কারণে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা যখন নিম্নগামী তখন একটি মন খারাপের খবর দিলো রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। সংস্থাটি বলছে, করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট (ধরন) শনাক্ত হয়েছে বাংলাদেশে।
শনিবার (৮ মে) আইইডিসিআর জানায়, রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের একটি নমুনা পরীক্ষায় এ ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ধরা পড়েছে। যা জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডাটাতে (জিএসআইডি) প্রকাশিত হয়েছে।
এ দিকে দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট (ধরন) শনাক্ত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সংস্থাটির মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম গণমাধ্যমকে জানান, এ ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগীরা ভারত থেকে ফিরেছেন। তারা চিকিৎসার জন্য ভারতে গিয়েছিলেন এবং বর্তমানে যশোরে অবস্থান করছেন।
বৃহস্পতিবার (৬ মে) স্বাস্থ্য বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, ভারত থেকে দেশে ফেরার পর প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকাদের মধ্যে ৬০ জন করোনা আক্রান্ত ছিলেন। তবে তারা করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত কি না সেটি জানতে আরও কিছু দিন লাগবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে দেশে আসা ৪৭ জনকেও আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। আকাশপথে ১৯ মে থেকে এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৮০০ জন এসেছেন। তাদের মধ্যে ৭ হাজার ৫১৪ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। বাকিদেরও কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হয়েছে।
সংস্থাটির অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। সবারই এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় স্বাস্থ্য অধিদফতরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে এক জরুরি ব্রিফিংয় তিনি এসব কথা বলেন।
নাসিমা সুলতানা বলেন, ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং আইইডিসিআর আলাদাভাবে পরীক্ষা করেছে। দুই প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষাতেই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ধরা পড়েছে। দেশে এখন পর্যন্ত ছয়জনের শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, দেশে করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং হয় অণুজীববিজ্ঞানী সেঁজুতি সাহার নেতৃত্বে। তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (সিএইচআরএফ) বিজ্ঞানী।
প্রতিষ্ঠানটির গবেষক সৈয়দ মুক্তাদির আল সিয়াম শনিবার জিআইএসএআইডির উপাত্ত ধরে বলেন, বাংলাদেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট (ধরন) বি.১.৬১৭.২ পাওয়া গেছে। আইইডিসিআর এটি সাবমিট করেছে। ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপিং হেলথ সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়েটিভের নমুনা সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান হলো ‘আইদেশি’। সৈয়দ মুক্তাদির বলেন, জিএসআইডির উপাত্ত বলছে, এটি গত ২৮ ও ২৯ এপ্রিল সংগৃহীত নমুনা থেকে পাওয়া গেছে।
তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে সেঁজুতি সাহা বলেন, ‘যে ভ্যারিয়েন্ট (বি.১.৬১৭.২) বাংলাদেশে পাওয়া গেছে, সেখানে ই৪৮৪কিউ মিউটেশনটি নেই। এটা থাকলে খুব ক্ষতিকর হতো। এখানে আমাদের টিকা কাজ করবে বলে মনে হয়।
শনিবার দুপুরে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর বলেন, রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের একটি নমুনা পরীক্ষায় ভারতীয় স্টেইন ধরা পড়েছে। যা জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডাটাতে (জিএসআইডি) প্রকাশিত হয়েছে।