করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত সপ্তাহব্যাপী কঠোর লকডাউনে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মানুষের স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে একযোগে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী,বিজিবি, জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা।
শনিবার (৩ জুলাই) তালা উপ-শহরে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃখংলা বাহিনীর সদস্যদের মহড়া দিতে দেখা গেছে । চলমান লকডাউন থাকবে আগামী ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত। লকডাউন সর্বাত্মকভাবে পালনে বাধ্য করতে ভোর থেকে মোড়ে মোড়ে টহল দিচ্ছেন সেনাবাহিনী ও পুলিশ।লকডাউনে প্রশাসনের কঠোর অবস্থান ও সরকারের ব্যাপক প্রচার-প্রচারনা সত্তে¡ও বিধিনিষেধের মধ্যে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। কোন কিছুতেই লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছেনা করেনা সংক্রমনের।
গত জুন মাসে ৫৪২ জনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৩৪৬ জনের।প্রতি দিনই বাড়ছে সংক্রমনের হার। শনিবার(৩জুলাই) স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে র্যপিড এন্টিজেন টেস্টে ৮৬ জনের মধ্যে ৩২জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত,আর করোনা উপসর্গে ২জনের মৃত্যু হয়েছে ,বিষয়টি নিশ্চিত করেছেনে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রাজীব সরদার ।
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে চলমান কঠোর লকডাউনে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তারিফ-উল-হাসান ও এসিল্যান্ড এসএম তারেক সুলতানের নেতৃত্বে বিশেষ সচেতনতামূলক অভিযান ও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে গত ৩১দিনে ৭৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছেন ।
এত কিছুর মধ্যেও সংক্রমণের আশংকাজনক বৃদ্ধিতে জনমনে নানা আশংকা ক্রমশ দানা বাঁধছে। এমন পরিস্থিতে করোনা প্রতিরোধে নানা আয়োজনকে রীতিমত প্রশ্নবিদ্ধ করছে। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি স্থানীয়রা বাইরে থেকে সংক্রমিত হয়ে আসছেন ? নাকি এলাকার মধ্যে সংক্রমিত মানুষের আধিক্য রয়েছে ? যারা কিনা পরীক্ষা কিংবা কোয়ারেন্টাইনের আওতায় আসছেনা। করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও প্রত্যন্ত এলাকায় জনসচেতনতা পরিলক্ষিত হচ্ছেনা। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরনে ন্যুনতম মাস্ক পর্যন্ত ব্যবহার করছেন না অধিকাংশরাই। তবে কি জনসচেতনতার অভাব রয়েছে? নাকি ব্যর্থতা রয়েছে প্রশাসনের? যদিও করোনা প্রতিরোধে প্রথম থেকেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে আসছেন।
করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারি বিধিনিষেধ বলবৎ থাকলেও উপজেলার বড় বড় হাট-বাজারগুলোতে এর দৃশ্যমান প্রভাব পড়েনি। সন্ধ্যার পর চা দোকানগুলিতেও হুমড়ি খেয়ে পড়ছে সাধারণ মানুষ। কিশোর-যুবকদের সেখানে নিয়মিত আড্ডাও কমেনি। উপজেলার বড় বড় হাট-বাজার ও গ্রামের বাজারগুলিতে চায়ের দোকানগুলো সামনে থেকে দরজা বন্ধ রেখে ভেতরে চলছে নিয়মিত মজমা।
এলাকাবাসী ও প্রত্যন্ত এলাকার বিভিন্ন প্রাইভেট প্রাকটিশনারদের মাধ্যমে জানা যায়, তাদের অধিকাংশ রোগীই জ্বর-কাশি ও মাথা ব্যাথায় ভূগছেন। অনেকে করোনার ভয়ে নমুনা পরীক্ষা না করে বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারগুলোর ফার্ম্মেসীগুলোতে প্যারাসিটামল গ্রæপের ওষুধ উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় অশুভ আশংকায় রীতিমত আতংক তৈরী হয়েছে।
বর্তমানে উপজেলার প্রায় অধিকাংশ বাড়িতে করোনা রোগী থাকলেও নমুনা পরীক্ষা না করায় তারা থেকে যাচ্ছেন অগোচরে। এক সময় তাদের অনেকের অবস্থা অবনতি হলে চরম মূহুর্তে নিচ্ছেন হাসপাতালে। আর তখনি তাদের একটা অংশের মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।গত এক মাসে সচেতন অনেকের এরকম ঘটনা ঘটলেও হুশ হচ্ছেনা সাধারণ মানুষের।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রাজীব সরদার জানান,তাদের চিকিৎসকরা জীবন বাজি রেখে নন স্টপ ২৪ ঘন্টা জনসাধারণকে নিরলস সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে তিনি সকলকে স্বাস্থবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে মুখে মাস্ক ব্যবহার, সাবান, স্যানিটাইজার দিয়ে হাত পরিস্কার রাখার পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধিতে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার আহ্বান জানান।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারিফ-উল-হাসান জানান, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী দেশের অন্যান্য উপজেলায় মতো তালা উপজেলায় কঠোরভাবে পালন করা হচ্ছে লক ডাউন। কেউ যেন অপ্রয়োজনে বাইরে বের না হয় এবং ঘোরাফেরা না করে সেটি নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।লকডাউন বাস্তবায়নে জনপ্রতিনিধি, পুলিশ প্রশাসন, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন।করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সকলকে সংশ্লিষ্ট আইন ও সরকারি নির্দেশনা মেনে চলার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেছেন তিনি।
তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার সবাইকে ঘরে থাকতে বলেছেন, কোনোভাবে ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে ও মাস্ক ব্যবহার করতেও অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
সর্বশেষ করোনার এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও মফঃস্বল এলাকায় সচেতনতা বাড়েনি এতটুকু। উপজেলাসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় জনসাধারণের সামাজিক দুরত্ব বেষ্টনি ভেঙ্গে অবাধ বলগাহীন বিচরণ এর জন্য বহুলাংশে দায়ি বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এমন অবস্থা ঠেকাতে না পারলে করোনা গোটা উপজেলায় মহামারী রুপ নিতে পারে বলেও আশংকা করছেন সচেতন এলাকাবাসি।