November 21, 2024, 7:53 pm
শিরোনাম:
শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠক হিসেবে জাতীয় যুব পুরস্কার পেয়েছেন কক্সবাজারের নুরুল আফসার শিকদার মনোহরদীতে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন মনোহরদীতে দিনব্যাপী পাট চাষী প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত মনোহরদীতে মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রকে বেধরক মারধরের অভিযোগ মনোহরদীতে জনমত জরিপ ও প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী তৌহিদ সরকার মনোহরদীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী “আলোকিত গোতাশিয়া” ফেসবুক গ্রুপের পক্ষহতে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ মনোহরদীতে অসহায়দের মাঝে শিল্পমন্ত্রীর ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ মনোহরদীতে ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে বালু উত্তোলনের দায়ে খননযন্ত্র ও বালুর স্তুপ জব্দ এতিম শিশুদের নিয়ে ইফতার করলেন মনোহরদীর ইউএনও হাছিবা খান

লালমনিরহাটে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নামে নদী দখল

নিউজ ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : বুধবার, আগস্ট ২৫, ২০২১
  • 369 দেখুন

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার শৌলমারী চরের প্রান্তিক কৃষক শাজাহান আলী। চরের জমি চাষাবাদ করে জীবন-জীবিকা চলে তার। সেই আবাদী জমিতে ‘ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড’ নামে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র হচ্ছে। ফলে এখন কি করে তার জীবন জীবিকা চলবে তা নিয়ে চিন্তাত শাজাহান আলী। এ অবস্থা শুধু শাজাহান আলীর একার নয়। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার শৌলমারী চরের অনেক কৃষকের অবস্থা শাজাহান আলীর মত একই সুতায় গাঁথা। তাদের জমি দখল হয়ে যাওয়ায় তারা এখন নিঃস্ব।

তেমনি বেসরকারি ওই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে শুধু কৃষকের জমি দখল নয়, তিস্তার গলা চেপে ধরে নদীর বুকে তাদের সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প যাতায়াতের জন্য নদীর বাম চ্যানেলে প্রায় দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৫০ ফুট প্রস্তের একটি রাস্তা তৈরি করছে। ওই নির্মাণাধীন সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ওই কেন্দ্রে চলাচলের জন্য নদীর মাঝ পথে সড়ক তৈরির কারণে তিস্তা নদীর স্বাভাবিক পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

এতে পাশ্ববর্তী হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা নদীর তীরবর্তী ৬ টি ইউনিয়নে নদী ভাঙন কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। অপরিকল্পিতভাবে ও বিধিবর্হিভূতভাবে রাস্তাটি তৈরির কারণে বামতীরের চ্যানেলটি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে উল্লেখ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, এর কারণে নদী ভাঙনসহ সম্পদহানী ঘটবে।

এ দিকে রংপুর অঞ্চলের নদ-নদী নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসা রিভারাইন পিপলসের পরিচালক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদের দাবি নদীর অভ্যন্তরে বিধিবর্হিভূতভাবে ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেডের যে সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে তাতে তিস্তা নদীর চরম সর্বনাশ হবে। সরকার যে সময় তিস্তা মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন সে সময় নদীটির ভেতরে যে অবকাঠামো নির্মাণ হচ্ছে তাতে নদী, মানুষ ও পরিবেশের চরম ক্ষতি হবে।

সড়েজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শৈলমারীর প্রায় পুরো চরটি ঘিরে রাখা হয়েছে সিমেন্টের পিলার ও কাঁটাতারে। একপাশে তৈরি করা হয়েছে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত অফিস। বাকি অংশে বসানো হচ্ছে শত শত সিমেন্টের পিলার। সেইসব পিলারে সোলার প্যানেল লাগানোর কাজ শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে। ঠিক কী পরিমাণ জমি নিয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গড়ে উঠছে তার সঠিক কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি।

প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জমির পরিমাণ ১২০ একর দাবি করা হলেও স্থানীয় লোকজন বলছেন, সেখানে কমপক্ষে ২০০ একর জমি ঘিরে রাখা হয়েছে। এসব জমি যেমন ব্যক্তি মালিকানার রয়েছে তেমনি সরকারি খাস জমিও আছে। কাঁটাতার দিয়ে ঘেঁরা প্রকল্প এলাকায় লাগানো হয়েছে বেশ কিছু সাইনবোর্ড। তাতে লেখা রয়েছে, ‘বায়নাসূত্রে এই জমির মালিক ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড’। তবে সাইনবোর্ডে দাগ, খতিয়ান ও জমির পরিমাণের জায়গা ফাঁকা রাখা হয়েছে।

তবে অভিযোগ উঠেছে, সামান্য কিছু জমি রেজিস্ট্রি করা হয়েছে। বাকি জমির মালিকের কাছ থেকে হয় ‘না দাবি’ লিখে নেওয়া হয়েছে, নয়তো ইচ্ছেমতো দখল করা হয়েছে। লোকজন জমি দখল নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে অভিযোগ করতে গেলে উল্টো ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলে হয়রানি করা হয়।

ওই সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র যেতে দেখা যায়, তিস্তা নদীর ওপারে ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেডের সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র যেতে নদীর মাঝ পথে রাস্তা নিমার্ন করা হচ্ছে। নদীর মাঝখানে কিছুটা জায়গা খালি (বেইলী ব্রিজের জন্য) রেখে চলছে রাস্তার কাজ। এ জন্য মাঝখানে বালুভর্তি শত শত জিও রেখে দুই পাশে ইটের গাঁথুনি দেওয়া হয়েছে। ফলে নদীর পানি বাধাগ্রস্থ হয়ে দুই তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে যা বাঁশ-টিন দিয়ে রক্ষার চেষ্টা করা হয়েছে। নদী পেরিয়ে ওপাশে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় দুই কিলোমিটারের ইটবিছানো রাস্তাটি চলে গেছে শৌলমারী চরে নির্মাণাধীন সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প এলাকা পর্যন্ত। রাস্তার কারণে চরের মাঝে পানি আটকে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে অনেক জমিতে।

স্থানীয় বাসীন্দা ইউসুফ আলী বলেন, সোলার কোম্পানী ওদিকে বেঁড়িবাধ দেওয়ায় নদীর পানি আটকে আমাদের এলাকার সব জমিজমা নদীতে ভাঙছে। আমরা গরিব মানুষ যা আমন আবাদ করেছিলাম সবটাই বিলীন হয়েছে।

মমিনুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘ইন্ট্রাকো রাস্তা বা বঁাধ দেওয়ায় পানি ধাক্কা লেগে আমাদের উজানের জমিজমা সব শেষ হয়ে যাচ্ছে।

মজমুল আলম নামের একজন বলেন, নদীর ওপারে শৌলমারী চরে থাকা আমাদের জমি ওরাতো দখল করে নিয়েছে এখন এপাশে থাকা অনেকের জমি বাধের কারণে নদীতে চলে যাচ্ছে। শুধু নাককাটির ডাঙ্গা নয়, নির্মাণাধীন রাস্তার উজান-ভাটির অনেক জায়গায় নদীর দুই পাড়ে ইতোমধ্যে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে।

সেখানকার কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী লিটন মিয়া অভিযোগ করেন, আমাদের মালিকানার ৭৫ শতাংশ জমিও ঘিরে নেওয়া হয়েছে। সেখানে এখন আমরা যেতে পারছি না, আমনও লাগাতে পারছি না। দালালরা আমাদের বলেছে জমি বিক্রি না করলে জমিতে যাওয়া যাবে না।

শৌলমারী চরের কৃষক এমদাদুল হক এক ব্যক্তি জানান, তার কেনা প্রায় পৌনে তিন একর জমির মধ্যে ৯০ শতাংশ জমি কঁাটাতার দিয়ে ঘিরে নেওয়া হয়েছে। জমিতো রক্ষা হয়নি উল্টো কমিটির লোকজনের হাতে মারধরের শিকার হয়েছেন তারা। সম্প্রতি ওই ঘটনায় কৃষক এমদাদুল হক ও তার স্ত্রীসহ নয় জনের নামে কঁাটাতার ও টাকা ছিনতাইয়ের মামলাও করা হয়েছে কালীগঞ্জ থানায়।

নিজেকে ইন্ট্রাকো সোলার লিমিটেডের ‘কমিটির ম্যানেজার’ দাবি করে ওই এলাকার বুলু মিয়া নামে এক ব্যক্তি মামলাটি করেন। এমদাদুল হক অভিযোগ করে বলেন, তারা আমার জমি দখলে নিয়ে মারধরও করেছে, আবার টাকার জোরে আমাদের নামেই মিথ্যা মামলা দিয়েছে ’। এ ঘটনার বিচার চেয়ে তিনি পরবর্তিতে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন বলে উল্লেখ করেন।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও আন্দোলন পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, তিস্তা নদী এ অঞ্চলের প্রাণ। বাংলাদেশের অন্যান্য নদীর চেয়ে তিস্তা নদী অনেক ভালো কারণ এখানে দখল-দূষণ ছিল না। সেই প্রাণের অভ্যন্তরে বিধিবর্হিভূতভাবে এসব প্রকল্প করে আমাদের জীবনকে ধ্বংস করা হচ্ছে। মানুষকে বিপর্যস্ত করা হচ্ছে। এতে পরিবেশের চরম ক্ষতি হবে।

প্যারামাউন্ট বিট্র্যাক এনার্জী লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) আব্দুল হালিমের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে প্যারামাউন্ট বিট্র্যাক এনার্জী লিমিটেডের মেজবা আজিজ নামে এক কর্মকর্তার দাবি, নদীর বুকে রাস্তা নির্মাণে গতিপথের কোনো ক্ষতি হবে না। নদীর পানি যাতে স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারে সেজন্য দুটি বেইলী ব্রিজ নির্মাণ করা হবে’। এ বিষয়ে কোনো অনুমোদন আছে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের কোন সদোত্তর দিতে পারেননি তিনি।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে যাতায়াতের জন্য বামতীর চ্যানেলে যে রাস্তা তৈরি হচ্ছে তাতে পানির গতিপ্রবাহে বাধার সৃষ্টি হবে। এতে ডানতীরসহ বিভিন্ন স্থানে নদীভাঙনসহ ক্ষয়ক্ষতি হবে। প্রকল্পের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে কোন মতামত চাওয়া হয়নি। তবে বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর সাংবাদিকদের বলেন, ইন্ট্রাকো সোলার পাওয়ার লিমিটেড কিছু জমি কিনে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ শুরু করেছে। এছাড়া প্রকল্প সংলগ্ন এলাকার খাস জমির বন্দোবস্ত চেয়েও আবেদন করা হয়েছে। কারো জমি যদি জোর করে দখল করে থাকেন তাহলে অভিযোগ করলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর

https://bd24news.com © All rights reserved © 2022

Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102