সাতক্ষীরা তালা উপজেলার শতকরা ৮০ জন মানুষ কৃষিজীবী।জমিতে ধান ও সবজির পাশাপাশি অনেকেই জড়িয়েছেন বিভিন্ন রকম ফল চাষে।কলেজ শিক্ষক তৌহিদুজ্জামান তাঁদের মধ্যে ব্যতিক্রম।তিনিই প্রথম তালায় বানিজ্যিক ভাবে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেছেন।এখানেই শেষ নয়, শিক্ষক তৗহিদুজ্জামানের ড্রাগন চাষ পথ দেখাচ্ছে অন্যদের।তাঁর দেখাদেখি অনেকে শুরু করেছেন ড্রাগন ফলের চাষ।
তৌহিদুর রহমান সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের বাগমারা গ্রামের মৃত. মাষ্টার ওমর আলী ছেলে ও খুলনা সুন্দরবন সরকারী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক।শিক্ষকতার পাশাপাশি গ্রামে কৃষিকাজ করেন তিনি। গতানুগতিক কৃষির ওপর নির্ভরশীল না হয়ে সময়ের প্রয়োজনে লাভজনক ফসল উৎপাদনে বিশ^াসী তৌহিদুর রহমান উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের ফলেয়া-চাঁদকাটি এলাকায় ৭ বিঘা জমিতে ড্রাগন ফল চাষ শুরু করেছেন। তালা উপজেলার মাগুরা-পাটকেলঘাটা সড়কের পাশে ফলেয়া নামক এলাকায় এই ড্রাগন ফল চাষ করেছেন তিনি।
সরেজমিনে বাগানে ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে সবুজের সমারোহ। প্রতিটি গাছে ঝুলছে তিনটি থেকে চারটি করে কাঁচা, পাকা ও আধা পাকা ড্রাগন ফল। বাগানে কাজ করছিলেন ৪-৫ জন শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে তাদের মধ্যে কয়েকজন গাছ থেকে পাকা ফল সংগ্রহ করছিলেন। অন্যরা নিড়ানি দিয়ে আগাছা তুলছিলেন। প্রায় পাঁচ ফুট উচ্চতার প্রতিটি কংক্রিটের খুঁটি পেঁচিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে ড্রাগন ফলের গাছ। জমিতে রয়েছে ১২ শ’ খুটি । খুটি থেকে খুঁটির দুরাত্ব সাড়ে সাত ফুট দৈর্ঘ ও সাড়ে ছয় ফুট প্রস্থ স্থাপন করে গাছ রোপন করা হয়েছে। প্রত্যেক খুঁটিতে ৪ টি করে ড্রাগন ফলের গাছ লাগানো হয়েছে। ড্রাগন ফল গাছ খুব দ্রæত বাড়ে এবং মোটা শাখা তৈরি করে। একটি ড্রাগন ফল গাছে এক বছরের ৩০ টি পর্যন্ত শাখা তৈরী করতে পারে। ড্রাগন ফল রোপনের এক বছরের মাথায় ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রতিটি ড্রাগন ফল ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম করে ওজন হয়।প্রতিকেজি ফল পাইকারি ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা বিক্রি হয় । ড্রাগন ফল চাষে অনেক খরচ হলেও এটি অনেক লাভজনক ফসল বলে তার দেখাদেখি অনেক চাষী ড্রাগন চাষে ঝুকছেন।
কথা হয় ড্রাগন চাষী কলেজ শিক্ষক তৌহিদুজ্জামানের সাথে তিনি প্রতিবেদককে জানান, ইউটিউব দেখে শখের বশে তিনিই প্রথম উপজেলায় বানিজ্যিক ভাবে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেছেন।৭ বিঘা জমি বাৎসরিক ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা লীজ নিয়ে ড্রাগন ফলের চাষ করেছেন। ফলের বাগান সার্বক্ষণিক দেখভালের জন্য মাসিক বেতনে দুজন কেয়ারটেকার নিযুক্ত করেছেন তারাই সবসময় ড্রাগন ফলের বাগান তদারকি করেন। প্রকল্প শুরু থেকে ফল উঠা পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৩ লক্ষ টাকা। ড্রাগন ফল চাষে জমিতে তার খুব ভালো অবস্থানে আছে। বর্তমানে গাছ থেকে ফল তোলা ও বিক্রয় শুরু হয়েছে।এরই মধ্যে প্রায় দেড় লক্ষ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।এসময় তিনি শিক্ষিত বেকারদের উদ্দেশ্য বলেন, চাকুরি নামের সোনার হরিণের পিছনে না ছুটে তারা যদি নিজেরাই উদ্যোক্ত হয়ে ড্রাগন ফল চাষ করে তাহলে নিজের বেকারত্ব দূর হবে পাশাপাশি মোটা অংকের টাকা ও উপার্জন করা সম্ভব হবে।সরকার যদি ড্রাগন চাষের উপরে ঋণের ব্যবস্থা করে তাহলে বেকার যুবকরা ড্রাগন চাষে আগ্রহী হবে তাতে বেকার যুবকদের কৃষি পেশার ওপর দক্ষতা বৃদ্ধির পাবে।
উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের কর্তব্যরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শামীমুল ইসলাম প্রতিবেদককে বলেন,এই প্রথম বানিজ্যিক ভাবে তালা উপজেলায় ড্রাগন চাষ করেছেন শিক্ষক তৌহিদুজ্জামান। ড্রাগন ফলের চাষ শুরুর পর থেকেই কখন কী ভাবে গাছের পরিচর্যা নিতে হবে, সে বিষয়ে তাঁকে পরামর্শ দিয়ে আসছি। ড্রগন ফল চাষে জৈব সার একটু বেশি লাগে। রাসায়নিক সার কম লাগে। তাই অধিক লাভ করা যায়। তাঁর সফলতা দেখে অনেক কৃষক ড্রাগন চাষের জন্য পরামর্শ নিতে আসছেন।বর্তমানে’মাগুরার বেশ কিছু জায়গায় এই ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে।অল্প খরচে অধিক লাভ হয় বলে অনেকেই এই ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।বর্তমানে তৌহিদুজ্জামানের ড্রাগন ফলের গাছ থেকে ফল তোলা ও বিক্রয় শুরু হয়েছে।এরই মধ্যে প্রায় দেড় লক্ষ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করেছেন বলে জানান উপ-সহকারী কর্মকর্তা।
তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন প্রতিবেদককে জানান ,তালায় এই প্রথম বৃহত্তর আকারে বানিজ্যিক ভাবে ড্রাগন চাষ হয়েছে। আমি ড্রগান ফল বাগানে পরিদর্শনে গিয়েছি। ফসলের মান অনেক ভালো, ড্রাগন একটি পুষ্টিকর ফল এ ফলে রয়েছে অধিক পরিমাণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মানবদেহের জন্য অনেক উপকারী। বিশেষ করে ডায়বেডিস রোগীদের জন্য কার্যকারী একটি ফল। অনেক ব্যায় বহুল থাকলেও ড্রাগন চাষ করে অনেক লাভবান হবে কৃষকরা। উপজেলার কৃষকরা নিজেদের উদ্দ্যেগে ড্রাগন ফলের চাষে এগিয়ে আসলে এই এলাকায় এই ফলের চাষ বৃদ্ধি পাবে বিশেষ করে বেকার সমস্যা সমাধান হবে। কৃষকদের পাশে তালা উপজেলা কৃষি অফিস সব সময় আছে এবং সর সময় কৃষকদের পাশে থেকে সকল সহযোগীতায় করবে বলেও জানান তিনি।