November 22, 2024, 8:27 pm
শিরোনাম:
শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠক হিসেবে জাতীয় যুব পুরস্কার পেয়েছেন কক্সবাজারের নুরুল আফসার শিকদার মনোহরদীতে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন মনোহরদীতে দিনব্যাপী পাট চাষী প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত মনোহরদীতে মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রকে বেধরক মারধরের অভিযোগ মনোহরদীতে জনমত জরিপ ও প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী তৌহিদ সরকার মনোহরদীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী “আলোকিত গোতাশিয়া” ফেসবুক গ্রুপের পক্ষহতে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ মনোহরদীতে অসহায়দের মাঝে শিল্পমন্ত্রীর ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ মনোহরদীতে ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে বালু উত্তোলনের দায়ে খননযন্ত্র ও বালুর স্তুপ জব্দ এতিম শিশুদের নিয়ে ইফতার করলেন মনোহরদীর ইউএনও হাছিবা খান

ছাগলের খুপড়িতেই বসবাস ষাটোর্ধ বৃদ্ধা মনোয়ারার

মোঃ রোকনুজ্জামান টিপু ,তালা (সাতক্ষীরা)প্রতিনিধিঃ
  • আপডেটের সময় : বুধবার, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২১
  • 241 দেখুন

ষাটোর্ধ অসুস্থ মনোয়ারা বেগমের জীবিকার একমাত্র মাধ্যম ভিক্ষাবৃত্তি। বসবাস করছেন দেবরের ছাগল পালন করা ঘরে। অস্বাস্থ্যকর দুর্গন্ধময় ঘরেই তার বসবাস । মনোয়ারা বেগম সাতক্ষীরার তালা উপজেলার সদর ইউনিয়নের বারুইহাটি গ্রামের মৃত ফরিদ উদ্দীন খাঁ’র স্ত্রী। বছর তিনেক হল দুরারোগ্য লিভার ক্যান্সারে মৃত্যু হয়েছে তার স্বামীর। একমাত্র ছেলে কাঠ ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল মামুন (৩৮) প্রায় ১৫ বছর আগে বিয়ে করে শ্বশুরের জায়গায় বাড়ি করে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছে। স্বামীর মৃত্যুর পর মনোয়ারার ছেলের বাড়িতে আশ্রয় হলেও মাস ছ’য়েকের মধ্যে সেখান থেকেও ফিরে আসতে বাধ্য হন। সন্তানের বাড়ীতে আশ্রয় হয়নি গর্ভধারিনী মায়ের। এখন প্রতিবেশী এক দেবরের ছাগলের পালন করা ঘরে ছাগলদের সাথে শেয়ার করে রাত্রি যাপন করলেও অসুস্থ্য শরীরে ভিক্ষাবৃত্তিতেই চলে তার জীবিকা। সরকারের কাছে তার করুণ আর্তি মাথা গোঁজার ঠাঁই নয়, বাকি জীবন কাটাতে দু’বেলা খাবারের ব্যবস্থা চান তিনি।প্রায় আড়াই বছর ধরে প্রতিবেশী এক দেবরের ছাগল রাখার ছোট্ট খুপড়ির একপাশে ছাগল আর অন্যপাশে মনোয়ারার থাকার সাময়িক বন্দোবস্ত হলেও কারো প্রতি আক্ষেপ নেই তার। তবে অসুস্থ্য শরীরে প্রতিদিন পরের বাড়িতে গিয়ে হাত পেতে ভিক্ষা নিতেই যত কষ্ঠ তার। এর জন্যও ছেলে-বউ’র প্রতি ক্ষোভ নেই বৃদ্ধা মনোয়ারার। জীবনে পড়ন্ত বেলায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি তার দাবি, তাকে যেন দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের বন্দোবস্ত করে দেয়া হয়।
বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগমের অসহায় যাপিত জীবনের খবরে সরেজমিন গেলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তিনি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে কালের কণ্ঠের এ প্রতিনিধিকে বলেন, দশ মাস গর্ভেধারণ করে যে সন্তানকে পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখালাম, কষ্ঠ করে বড় করলাম সেই সন্তানই যখন আমার হলনা তখন মাথা গোঁজার জন্য কোন আশ্রয় আর চাইনা। শুধু খাবারের যোগান হলেই বাকী জীবনটা একটু শান্তিতে থাকবো। কেননা, এখন আর আগের মত শরীর চলেনা। নানা রোগ-শোকে মূহ্যমান মনোয়ারার দাবি, শুধু দু’বেলা দু’মুঠো খাবার দিলেই জীবনে আর কিছুই চাইনা তার।

মনোয়ারা বেগম আরো জানান, একমাত্র ছেলে কাঠ ব্যবসায়ী আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রায় ১৫ বছর আগে একই গ্রামের নাংলা মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ মাও: আঃ মালেকর মেয়ে আয়শাকে বিয়ে করে সেই থেকে শ্বশুরের জায়গায় বাড়ি-ঘর করে সেখানেই বসবাস করে। স্বামীর মৃত্যুর পরে ছেলের বাড়িতে আশ্রায় নেন তবে, স্থায়ী হয়নি। নিয়তির নির্মম পরিহাসে মাত্র ৬ মাসের মধ্যে ছেলে-বৌ’র মানসিক অত্যাচারে একমাত্র আশ্রয় ছাড়তেও বাধ্য হন তিনি। জীবন-জীবিকার তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তি করে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটলেও অসুস্থ্য মনোয়ারা ফিরতে চাননা ছেলের ঠিকানায়। স্বামীর মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সমুদয় সম্পত্তি বৃদ্ধা মাকে দেখভালের মিথ্যা আশ্বাসে বিক্রি করে দেন একমাত্র ছেলে। তার আক্ষেপ স্বামীর সম্পত্তি বিক্রির টাকায়ও যখন ছেলের আশ্রয়ে ঠাঁই হয়নি তার, তখন মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের আর দরকার নেই । যতদিন বেঁচে আছেন, পরের খুপড়িতে দু’বেলা খাবারের বন্দোবস্ত হলেই হল। তবে সেটা ছেলের পয়সায় হোক সেটাও তিনি চাননা ।
সরকারের দেয়া উপহারের আশ্রায়ন প্রকল্পের কোন ঘরের বন্দোবস্ত চান কিনা এমন প্রশ্নের জবাবেও তার সাফ কথা, ছাগলের ঘরে থাকতে কোন অসুবিধা হচ্ছেনা তার। এসময় আরো বলেন, তিনি খুব অসুস্থ, ডায়বেটিস, বাত ব্যাথাসহ শারীরিক নানা রকম অসুখ বাসা বেঁধেছে তার শরীরে। জীবনধারনের জন্য সরকার কিংবা সমাজের কোন সহৃদয়বান মানুষের কাছে সামান্য ওষুধ আর দু’বেলা খাবার চান তিনি।সরকারি কোন সহয়াতা পান কিনা জানতে চাইলে বলেন, বিধবা ভাতার পয়সায় কিছু দিন ভাল থাকেন। এছাড়া আর কোন সরকারি সহযোগিতা পান না। তবে ভাতার টাকাও নাকি ঠিকমত পাননা তিনি। এনিয়ে সমাজসেবা অফিসে খোঁজ নিতে গেলেও তারা নাকি তিরষ্কার করে তাড়িয়ে দেন তাকে।

স্থানীয় প্রতিবেশীরা জানান, ছেলের বিয়ের আগে তাকে নিয়ে খুব গর্ব করতেন মনোয়ারা। তবে বিয়ের পর থেকে শ্বশুরের জায়গায় বউয়ের আঁচলবন্দি হয়ে পড়ে একমাত্র সন্তান। এরপর স্বামীর মৃত্যুর পর সত্যিই অসহায় পড়েছেন তিনি। এমনকি স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তিটুকু বিক্রি করেও ছেলেকে দিয়েছেন ভরসা ও মিথ্যা আশ্বাসে।তারা আরো বলেন, ব্যবসায়ী স্বচ্ছল সন্তানের বাড়ীতে যে গর্ভধারীনি মায়ের আশ্রায় হয় না , সন্তান থাকতেও যে মায়ের জীবন-জীবিকা চলে ভিক্ষাবৃত্তি করে। সেই সন্তানের শাস্তি কামনায় প্রতিবেশীরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করলেও ছেলের জন্য সার্বক্ষণিক শান্তি কামনা করেন অসহায় বৃদ্ধা মা মনোয়ারা বেগম।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পিতা-মাতার ভরণ পোষণের দায়িত্ব সন্তানের। যদি কোন সন্তান এই দায়িত্ব পালন না করলে তাকে দ:বি: ২০১৩-এর ৫ ধারার (১) আইন লঙ্ঘন করার অপরাধে এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে তিন মাসের কারাদন্ডে দন্ডিত হতে পারে। শুধু তাই নয়, কোনো সন্তানের স্ত্রী, স্বামী, তাঁদের পুত্র-কন্যা কিংবা অন্য কোনো নিকটাত্মীয় যদি বৃদ্ধ মা-বাবার প্রতি সন্তানকে ভরণ পোষণের দায়িত্ব পালনে বাধা দেয় তাহলে উক্ত আইনের ধারা ৫(২) অনুযায়ী তারাও সমভাবে অপরাধী হবেন, ফলে তারাও একই শাস্তির মুখোমুখি হবেন।

সর্বশেষ এলাকাবাসী এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করলেও সন্তানের শাস্তি চাননা অসহায় মা মনোয়ারা বেগম। সন্তানের অবহেলা-অনাদরে আর কোন মা-বাবা যেন এমনভাবে ভিখারী না হন, সন্তান থাকতেও কারো যেন এমন পরিণতি না হয় তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহনে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সদয় হবেন এমনটাই প্রত্যাশা সচেতন এলাকাবাসীর।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর

https://bd24news.com © All rights reserved © 2022

Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102