শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী খারামোড়া গ্রামের কৃষক মো. জহির উদ্দীন (৬৫) প্রতিদিনের ন্যায় ধান ক্ষেত পাহাড়া দিতে গিয়ে নিখোঁজ হন। ৫ দিন পর তার মরদেহ মিলে ঝিনাইগাতী থানাধীন গারো পাহাড়ের তায়াকোচা সীমান্ত এলাকার একটি উচু টিলার নিকট মাটির নিচে। এঘটনায় এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্যের। পুলিশও এ খুনের ঘটনা উদঘাটনে নেমেছে মাঠে।
পুলিশ ও পরিবারের সদস্যরা জানান, শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী খারামোড়া গ্রামের কৃষক মো. জহির উদ্দীন, প্রতিদিনের ন্যায় ৩ অক্টোবর সন্ধ্যায় রাতের খাবার খেয়ে, হাতির কবল থেকে ফসল রক্ষা করতে পাহাড়া দিতে যায়, পার্শ্ববর্তী ফসলের মাঠে। এর পর থেকেই সে নিখোঁজ হয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুজির পরও তাকে না পেয়ে, ধারনা করা হয়, সোমেশ্বরি নদী পার হওয়ার সময় হয়তো পানিতে ডুবে যেতে পারেন তিনি। এ জন্য নদীতেও খোঁজাখুজি করতে থাকে স্বজনরা। এ অবস্থায় ৫ অক্টোবর শ্রীবরদী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। পুলিশও খুঁজতে শুরু করে নিখোঁজ জহির উদ্দীনকে। অবশেষে ৭ অক্টোবর বিকেলে তাওয়াকোচায় ভারত সীমান্ত থেকে ৫শ গজ এপারে গহীন জঙ্গলে খুঁজতে গিয়ে ডিজেলের গন্ধ পায় স্থানীয়রা। পরে পুলিশে খবর দিলে সেখানে মাটির নীচ থেকে নিখোঁজ জহির উদ্দীনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার স্বজনরা জানান জহিরের মুখমন্ডলী আগুনে পুড়ে দেয়া হয়েছিলো। এ নির্মম হত্যা কান্ডের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চান তারা।
এব্যাপারে নিহত জহির উদ্দীনের স্ত্রী জয়লা খাতুন জানান, আমার স্বামী সন্ধ্যার সময় ভাত খাইয়া ধান ক্ষেত পাহাড়া দিবার যায়। যাওয়ার সময় মোস্তফার নাইগা ভাত নিয়ে যায়। কিছুক্ষন পর আমার নাতি যাইয়া আমার স্বামীরে দেহে নাই। মোস্তফার কাছে জানবার চাইলে সে জানায় এনো আহে নাই। ভাত নিয়ে যাওয়ার গামছা, ছাতি ওহানেই আছিলো। আমার স্বামী একজন নিরীহ মানুষ। তারে এভাবে নির্মমভাবে যে মারলো। আমরা এর সুক্ষ বিচার চাই।
ছেলে মনির উদ্দিন জানান, আমার বাবাকে যারা খুন করেছে, তাদের ফাঁসি চাই। আমার বাবারে খুন করা অইছে। যার জন্য ভাত নিয়ে গেছে, সেই আমার বাবারে মাইরা ফেলাইছে।
এদিকে এচাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ড নিয়ে নানা কথা শোনা যাচ্ছে, ধারনা করা হচ্ছে ফসল বাঁচাতে বিদ্যুতের জিআই তারের বেড়ায় আটকিয়ে মারা যেতে পারে জহির উদ্দিন। এ অবৈধ লাইন সংযোগ কারীরা আতংকে তার মরদেহ গায়েব করার জন্য এ কাজ করতে পারে।
৮ অক্টোবর এএসপি সার্কেল আফরোজা নাজনীন ও ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এএসপি সার্কেল আফরোজা নাজনীন জানান, এ ঘটনার সাথে জড়িতদের আমরা দ্রুতই আইনের আওতায় আনতে পারবো। এ জন্য আমরা কাজ করছি।
পরে ওইদিন রাত ১১টার সময় নিহত জহির উদ্দীনের ভাই রহমত আলী অজ্ঞাতদের আসামী করে ঝিনাইগাতী থানায় মামলা দায়ের করেন।
ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ ফায়েজুর রহমান জানান, তারা রহস্য উদঘাটন ও ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুতই গ্রেফতার করতে সক্ষম হবো।