ময়মনসিংহ সদরের খাগডহর ইউনিয়নের জেলখানা চরের কাটাখালি খালে ২০১৭ সালে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। এতে ব্যয় হয় ৫৪ লাখ টাকা। সেতু নির্মাণ হওয়ায় চরাঞ্চলবাসী ভেবেছিল, এবার তাদের ভোগান্তি লাঘবে হবে। কিন্তু সেই ভোগান্তি কমেনি, বরং বেড়েছে। ওই সেতুর পাশ দিয়ে ভোগান্তি নিয়েই চলাচল করছে তারা।
স্থানীয়রা জানান, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের অধীনে ২০১৭ সালের এপ্রিলে কাটাখালি খালের ওপর ৬০ ফুট দৈর্ঘ্যরে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। দরপত্রের মাধ্যমে জহিরুল ইসলাম নামে এক ঠিকাদার কাজটি করেন। বর্ষার আগ মুহূর্তে বৃষ্টির মধ্যেই কাজ চলে। খালে পানি জমে থাকা অবস্থায় সেচ দিয়ে জুলাইয়ের শেষে বেজের কাজ শেষ করা হয়। এরপর কাঠ ও খুঁটির মাধ্যমে সেতু ঢালাই দেয়। এরই মধ্যে বন্যার পানি চলে আসায় তীব্র স্রোতে বেজের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। এতে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মাথায় সেতুটি হেলে পড়ে। সেতু হেলে যাওয়ার পর সেই সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরেজমিন তদন্ত করেন। এরপর দীর্ঘ চার বছর কেটে গেলেও সেটা সংস্কার বা নতুন করে আর কোনও সেতু নির্মাণ হয়নি।
স্থানীয় রায়হান আলী জানান, পানির মধ্যে তাড়াহুড়ো করে কাজটি শেষ করতে গিয়ে বন্যায় বেজমেন্টের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। এতে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মাথায় সেতুটি হেলে পড়ে। চরাঞ্চলবাসীর যাতায়াতের দুর্ভোগ কমাতে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু তা আদৌ কমেনি। সেতুর পাশ দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়ে একটি সড়ক কাটাখালি খালের বুক চিড়ে চরাঞ্চল পরানগঞ্জ ও বোরোরচর এলাকার দিকে গেছে। এই সড়ক হয়ে প্রতিদিন প্রায় ২৮টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ ময়মনসিংহ শহরে যাতায়াত করে। খালের ওপর সেতুর কাজ শুরু হওয়ার পর চরাঞ্চলবাসী স্বপ্ন দেখেছিল, তাদের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ ঘুচবে। কিন্তু সেতু নির্মাণের পর তা হেলে যাওয়ায় মানুষের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে রয়েছে।
চরাঞ্চলের মুদি দোকানি আব্দুর রহিম জানান, কয়েকশো’ শিক্ষার্থী ময়মনসিংহ শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে।
সেুতটি হেলে যাওয়ায় বর্ষাকালে এসব শিক্ষার্থী প্রতিষ্ঠানে যেতে পারে না। বর্ষা আসলে তাদের ভোগান্তি আরও বাড়ে। কৃষক কলিম উদ্দিন জানান, সেতু দিয়ে কোনোকিছুই চলতে পারে না। চরাঞ্চলের কৃষকরা তাদের কৃষিপণ্য ও উৎপাদিত সবজি শহরে নিয়ে বিক্রিতে ভোগান্তিতে পড়েন। এ কারণে পণ্যের ন্যায্যমূল্যও পান না কৃষকরা। দ্রুতই নতুন করে একটা সেতু নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
ময়মনসিংহ সদর উপজেলা দুর্যোগ ও ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মনিরুল হক ফারুক জানান, তিনি যোগদানের আগেই সেতুটি নির্মাণ করা হয়। কাজ শেষ হওয়ার পর বন্যায় হেলে পড়ায় ঠিকাদারকে কার্যাদেশের অনুমোদিত ৫৪ লাখ চার হাজার ৬৫০ টাকার বিপরীতে মাত্র ১৭ লাখ টাকার বিল দেওয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তদন্ত করে দেখেছেন, বন্যার পানির তোড়ে নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় সেতুটি হেলে গেছে। এই সেতু আর নতুন করে নির্মাণের সুযোগ নেই।