মাছের ঘের নেই,তবুও মিলেছে করোনার সরকারি প্রণোদনা। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রধিকার প্রকল্প সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের আওতায় করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্য চাষিদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য সরকারি প্রণোদনা দেওয়া হয়। আর এই প্রণোদনার তালিকা তৈরীতে নানা অনিয়ম ও দূনীতির অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরার তালা উপজেলা মৎস্য অফিসের বিরুদ্ধে।করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্য চাষিদের তালিকায় ক্ষতিগ্রস্থ প্রকৃত মৎস্য চাষিদের বড় অংশই সরকারি প্রণোদনার টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। মাছের চাষ না করেও কমিশন দিয়ে জালালপুর ইউনিয়নের শাখারি পাড়ায় ২৫ জন পেয়েছেন করোনার সরকারি প্রণোদনার টাকা। আর এই টাকা পাইয়ে দিতে খোদ তালা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও মৎস্য অফিসের ক্ষেত্র সহকারি শিবাশীষ বৈরাগী কমিশন নিয়ে এই টাকা পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে জানা গেছে,তালা উপজেলার বেশির ভাগ মানুষ মৎস্য চাষের উপর নিভরশীল।করোনাকালিন সময়ে বেশির ভাগ মৎস্য চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়।তাদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর অগ্রধিকার প্রকল্প সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের আওতায় প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দেয় সরকার।ঘোষনা অনুযায়ী তালা উপজেলায় ন্যাশনাল এগ্রিকালচার টেকনোলজি (এনএটিপি) প্রোজেক্ট-২ এর ক্ষেত্র সহকারি ও তাদের ইউনিয়ন মাঠ কর্মীদের দিয়ে ৭ টি শ্রেণীতে বিভাক্ত করে উপজেলায় ২ হাজার ৯৬৭ জন মৎস্য চাষিদের তালিকা করা হয়। তালিকাভুক্ত এসব চাষির মাঝে ৪ কোটি ২ লাখ ৫৪ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে । চলতি বছরের ফেব্রæয়ারি মাসে প্রথম পর্যায়ে আড়াই হাজার চাষির ১৩ থেকে ১৮ হাজার টাকা দেওয়া হয়।বাকি চাষিদের আগস্ট মাসের ২৭ তারিখ থেকে ১০ হাজার টাকা ও সর্বোচ্চ ১৩ হাজার টাকা নগদ, বিকাশ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রদান করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলে জানায় তালা মৎস্য অফিস।
মৎস্য অফিসের বিতর্কিত এ তালিকায় করোনায় বিপর্যস্ত প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্য চাষিদের বড় অংশই স্থান পায়নি।উপজেলার বেশিরভাগ ঘের মালিকরা বলছেন,তারা করোনাকালে সরকারি প্রণোদনায় টাকা পাননি।আর টাকা পাওয়া ভূয়া মৎস্য চাষিরা কথা বলতে রাজি হয়নি। টাকা না পাওয়া একাধিক মৎস্য চাষী জানান, জালালপুর শাখারি পাড়ার মনোজ সেন পরিবারের ৪ সদস্যসহ ঐ পাড়ায় ২৫ জন সরকারি প্রণোদনা টাকা পেয়েছে। এর মধ্যে তালিকায় মুসলিম সম্প্রদায়ের নাম দিয়ে মনোজ সেনের দুই বোন টাকা উত্তোলন করেছে তার প্রমাণ তালা উপজেলা মৎস্য বিভাগের টাকা বিতরনকৃত তালিকায় রয়েছে বলেও জানান তারা।এছাড়াও সরকারি চাকরিজীবী, চাউল,পান ও জুয়েলারি ব্যবসায়ীরাও পেয়েছেন এই সরকারি প্রণোদনার টাকা।
শিবাশীষ বৈরাগী জানান, তালিকা তিনি তৈরী করেননি, ইউনিয়নের মাঠ কর্মীরা তালিকা করেছে। জালালপুর শাখারি পাড়ায় মৎস্য
ঘের নেই এমন ব্যক্তিরা কিভাবে টাকা পেয়েছে তা তার জানা নেই।
তালা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সরদার মশিয়ার রহমান বলেন, করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্থ প্রকৃত ঘের মালিকদের তালিকা তৈরি করার কথা থাকলেও তালা মৎস্য অফিস নিজেদের ইচ্ছামত তালিকা করেছেন। মৎস্য অফিসের বিতর্কিত এ তালিকায় করোনায় বিপর্যস্ত প্রকৃত মৎস্য চাষিদের বড় অংশই স্থান পায়নি বলে শুনেছেন তিনি। তালিকা তৈরীতে নানা অনিয়ম দূর্নীতি হয়েছে বলে অনেকেই তার কাছে অভিযোগ করেছেন।মৎস্য অফিসের তালিকা তৈরীতে নানা অনিয়ম দূর্নীতির সুস্ঠু তদন্তের দাবি জানান তিনি।
তালা উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা স্নিগ্ধা খাঁ বাবলী বলেন তালিকা তৈরীতে কোন অনিয়ম হয়নি বা এ ধরনের কোন অভিযোগও তিনি পাননি।, জালালপুর শাখারি পাড়া এলাকায় যাদের মৎস্য ঘের নেই এমন ৩০ জন টাকা পেয়েছে কিনা সেটা তার জানা নেই।তালিকা তৈরীতে কোন অনিয়মের অভিযোগ পেলে তদন্ত করে দেখা হবে এবং অফিসের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনিছুর রহমান জানান, বর্তমানে বদলী হয়ে তিনি রাজবাড়ীতে কর্মরত আছেন।তবে তিনি থাকাকালিন তালা উপজেলায় সরকারি প্রণোদনার তালিকা তৈরীতে অনিয়মের কোন অভিযোগ পায়নি বলেও জানান।
সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের উপ প্রকল্প পরিচালক মনিষ কুমার মন্ডল বলেন, বিষয়টি আপনার মাধ্যমে অবগত হলাম। প্রণোদনার তালিকা তৈরীতে অনিয়ম ও দূর্নীতি হলে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান ঐ কর্মকর্তা।