ময়মনসিংহের বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) বিজ্ঞানীরা নীল সাঁতারু কাঁকড়ার পোনা উৎপাদনে সাফল্য পেয়েছেন। ইনস্টিটিউটের কক্সবাজারের সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রে দুই বছর ধরে গবেষণা পরিচালনা করে চলতি মার্চ মাসে এ সাফল্য এসেছে।
নীল সাঁতারু কাঁকড়ার দক্ষিণ এশিয়ায় সুস্বাদু খাবার হিসেবে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জাপান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, মিসর, মোজাম্বিক, কেনিয়া, ইসরায়েল, লেবানন, তুরস্ক, সাইপ্রাস, অস্ট্রেলিয়া ও ফিজি বাণিজ্যিকভাবে নীল সাঁতারু কাঁকড়া আহরণ করে থাকে। বঙ্গোপসাগরে কক্সবাজারের এলিফেন্ট পয়েন্ট, টেকনাফ, শাপলাপুর, সোনাদিয়া দ্বীপ, শাহ্পরীর দ্বীপ ও মহেশখালী উপকূলীয় অঞ্চলে মাছের সঙ্গে সাঁতারু কাঁকড়াও সংগ্রহ হয়। তবে প্রাকৃতিক পরিবেশে দিন দিন এটি কম পাওয়া যাচ্ছে।
গবেষকদলে ছিলেন ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম ও তোরাবুর রহমান। পোনা উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হওয়ায় এখন হ্যাচারিতে নীল সাঁতারু কাঁকড়ার পোনা উৎপাদন সম্ভব হবে এবং চাষাবাদ (মেরিকালচার) করা যাবে। ব্লু ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতির ক্ষেত্রে এই অর্জন দেশে কাঁকড়া চাষে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
বর্তমানে শীলা কাঁকড়ার পাশাপাশি নীল সাঁতারু কাঁকড়া বিভিন্ন গ্রেড অনুযায়ী রেস্তোরাঁয় এবং জনপ্রিয় সামুদ্রিক খাবার হিসেবে বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে। মূলত প্রকৃতি থেকে আহরণ করে এ কাঁকড়া বিদেশে রফতানিসহ দেশের হোটেল-রেস্তোরাঁয় ব্যবহৃত হয়।
খাদ্যগুণ ও পুষ্টিমান বিবেচনায় নীল সাঁতারু কাঁকড়া অতুলনীয়। এক গ্রাম নীল সাঁতারু কাঁকড়া থেকে গড়ে প্রায় ৮০ কিলো ক্যালরি এনার্জি পাওয়া যায়। এ ছাড়া এতে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাংগানিজ, কপার, জিংক, সেলেনিয়াম ইত্যাদি খনিজ (মিনারেল) রয়েছে। এ কাঁকড়ায় ১৬ ধরনের এমাইনো এসিড, ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডসহ ২০ ধরনের বিভিন্ন ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়।
ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় তিন প্রজাতির সাঁতারু কাঁকড়া রয়েছে। এর মধ্যে স্বাদ ও খাদ্যমান বিচারে নীল সাঁতারু কাঁকড়ার চাহিদা ও বাজারমূল্য বেশি। সাগরে সাধারণত মার্চ-আগস্ট মাস পর্যন্ত সাঁতারু কাঁকড়া বেশি ধরা পড়ে। পুষ্টিমান বিবেচনায় নীল সাঁতারু কাঁকড়ায় ১৮.২ শতাংশ প্রোটিন থাকে। সাঁতারু কাঁকড়া নিশাচর এবং সমুদ্রের ১০ থেকে ৬০ মিটার গভীরে এদের মূল বিচরণক্ষেত্র। নীল সাঁতারু কাঁকড়া ফুল কাঁকড়া, নীল কাঁকড়া, নীল মান্না কাঁকড়া নামেও পরিচিত। পুরুষ নীল সাঁতারু কাঁকড়া সাধারণত নীলাভ সবুজ বর্ণের হয়ে থাকে এবং এদের চিলেট (চিমটা) বড় হয়ে থাকে।
গবেষকদলের প্রধান ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফজলে রাব্বি বলেন, ‘নীল সাঁতারু কাঁকড়া স্বজাতিভোজী বৈশিষ্ট্যের হওয়ায় পোনা বাঁচিয়ে রাখা অন্যতম চ্যালেঞ্জ। গবেষণার মাধ্যমে পোনা বেঁচে থাকার হার ৫ থেকে ৭ শতাংশে নিয়ে যেতে হবে বলে গবেষকরা জানান। বিশ্বে এ পর্যন্ত পোনা বেঁচে থাকার সর্বোচ্চ হার ৮-৯ শতাংশ। পোনা বাঁচার হার বৃদ্ধির ওপর আরও বিশদ গবেষণা পরিচালনা করতে হবে বলে গবেষক জানান।
ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, ‘নীল সাঁতারু কাঁকড়ার পোনা উৎপাদনে সফলতা অর্জিত হওয়ায় এর পোনা প্রাপ্তি ও চাষাবাদ সহজতর হবে এবং উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে বিদেশে রফতানি করা যাবে।’