লালমনিরহাটে পুলিশ হেফাজতে পোশাক শ্রমিক রবিউল ইসলাম (২৭) নামে এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত সদর থানার এসআই হালিমকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এদিকে ওই এসআইকে গ্রেপ্তারের আশ্বাসে টানা ৬ ঘণ্টার লালমনিরহাট-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ তুলে নিয়েছে এলাকাবাসী।
শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম।
এর আগে যুবকের মৃত্যুর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) দিনগত মধ্যরাতে এবং শুক্রবার সকালে জেলা সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগরে মহাসড়ক (লালমনিরহাট-রংপুর) অবরোধ করে এলাকাবাসী। মৃত রবিউল মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের কাজিচওড়া গ্রামের দুলাল খানের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, নববর্ষ উপলক্ষে সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর বাংলা বাজার এলাকায় বৈশাখী মেলার আয়োজন করে স্থানীয়রা। সেখানে এলাকাবাসী জুয়ার আসর বসালে পুলিশ খবর পেয়ে অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় রবিউল ইসলাম রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। অভিযানকালে রবিউল ইসলাম খানসহ দুইজনকে আটক করে পুলিশ। রবিউল জুয়া খেলেননি এমন দাবি করে পুলিশ ভ্যানে উঠতে আপত্তি জানালে পুলিশের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। কিন্তু পুলিশ মারধর করে এক পর্যায়ে তাকে ভ্যানে তুলে নিয়ে যায়।
পুলিশের ভাষ্য, রবিউল পথিমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় দায়িত্বরত চিকিৎসকরা রবিউলকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। তাকে রংপুর পাঠানোর প্রস্তুতিকালে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তিনি মারা যান।
এদিকে রবিউলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে মধ্যরাতেই মহেন্দ্রনগর বাজারে লালমনিরহাট-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে অভিযুক্ত সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হালিমের শাস্তি দাবি করেন স্থানীয়রা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পুলিশ ভ্যানে হামলা ও ভাঙচুর করেন অবরোধকারীরা।
একই দাবিতে শুক্রবার সকাল থেকে একই স্থানে মহাসড়ক অবরোধ করে রবিউলের হত্যাকারী পুলিশ সদস্যের কঠোর শাস্তির দাবি জানান এলাকাবাসী। অবশেষে অভিযুক্ত সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হালিমকে দুপুরে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়। এরপর অবরোধ তুলে নেয় এলাকাবাসী।
রবিউলের পরিবার ও স্থানীয়দের দাবি, রবিউল জুয়া খেলেনি তাই পুলিশভ্যানে উঠতে রাজি হয়নি। সে সময় পুলিশের সঙ্গে তার বিতর্ক হলে তাকে মারধর করে ও জোর করে টেনে পুলিশভ্যানে তুলে নিয়ে যায়। লাথি মারা হয় রবিউল গোপনাঙ্গে। এ আঘাতেই রবিউলের মৃত্যু হয়েছে।
লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলম বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সদর থানার এসআই হালিমকে লাইনে ক্লোজ করেছে। পুরো ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে।
লালমনিরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম বলেন, অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার (৭ জানুয়ারি) স্ত্রী হত্যার অভিযোগে হিমাংশু বর্মণ (৩৬) নামে একজনকে আটক করে হাতীবান্ধা থানা পুলিশ। পরে পুলিশের হেফাজতে তিনি মারা যান। এ ঘটনার প্রতিবেদন জমা দিতে তদন্ত কমিটিকে এক সপ্তাহের সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনো প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়নি।