November 22, 2024, 3:42 pm
শিরোনাম:
শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠক হিসেবে জাতীয় যুব পুরস্কার পেয়েছেন কক্সবাজারের নুরুল আফসার শিকদার মনোহরদীতে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন মনোহরদীতে দিনব্যাপী পাট চাষী প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত মনোহরদীতে মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রকে বেধরক মারধরের অভিযোগ মনোহরদীতে জনমত জরিপ ও প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী তৌহিদ সরকার মনোহরদীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী “আলোকিত গোতাশিয়া” ফেসবুক গ্রুপের পক্ষহতে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ মনোহরদীতে অসহায়দের মাঝে শিল্পমন্ত্রীর ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ মনোহরদীতে ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে বালু উত্তোলনের দায়ে খননযন্ত্র ও বালুর স্তুপ জব্দ এতিম শিশুদের নিয়ে ইফতার করলেন মনোহরদীর ইউএনও হাছিবা খান

দুগ্ধপল্লীকে ঘিরে অসাধু চক্রের ভেজাল দুধের ভয়ংকর কারবার!

মোঃরোকনুজ্জামান টিপু,তালা(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি ঃ
  • আপডেটের সময় : সোমবার, মে ৩০, ২০২২
  • 320 দেখুন

সাতক্ষীরার বৃহত্তম দুধ উৎপাদন ক্ষেত্রকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা তালার দুগ্ধপল্লী বলে খ্যাত জেয়ালা এলাকার সুনামকে পুঁজি করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম উপায়ে ভেজাল দুধ তৈরী করছে। ক্ষতিকর জেলি, সোডা, সয়াবিন তেল, লবণ, চিনি, স্যালাইন, নি¤œমানের গুঁড়া দুধসহ মারাত্মক সব কেমিক্যালের সংমিশ্রণে তৈরী হচ্ছে কৃত্রিম দুধ।

দুধ গ্রামের খাঁটি দুধ প্রাপ্তির ঘাঁটিকে পুঁজি করে আসল দুধের সাথে কৃত্রিমতার সংমিশ্রণে দেশের সব নামি ব্রান্ডের প্যাকেটে চড়ে ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। দেশের নামি ব্রান্ডের মোড়কে থাকায় এক প্রকার সকলের অজান্তেই অবাধে মানব শরীরে প্রতিনিয়ত প্রবেশ করছে রাসায়নিক সব অপদ্রব্য। দুধের নামে আমরা প্রতিনিয়ত আসলে কি খাচ্ছি? কেন খাচ্ছি? কারা উৎপাদন করছে? আর সংশ্লিষ্ট প্রশাসনই বা কি করছে? এমন সব প্রশ্ন-গুচ্ছ সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছে, কিন্তু কেউ উত্তর খুঁজে পাচ্ছেনা।

জানা গেছে, তালায় সহজে সাধারণকে ধোঁকা দিয়ে অধিক মুনাফা লাভের আশায় একটি মুনাফালোভী প্রতারক চক্র সকলের অগোচরে শিশু খাদ্য হিসেবে প্রতিদিন টন টন ভেজাল দুধ উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। হালাল ব্যবসার তুলনায় লাভ অন্তত ৭/৮ গুণ বেশি হওয়ায় ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট বা চক্র। যার সাথে স্থানীয় মুনাফালোভীদের পাশাপাশি রয়েছে দেশের দামি ব্রান্ডের স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা খাঁটি দুধ প্রক্রিয়াাকরণ প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সিলিং সেন্টারের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী।
এদিকে সিন্ডিকেটের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে প্রকৃত খামারীদের এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে। তারা উদ্যোক্তা হিসেবে হালাল উপায়ে দিন-রাত পরিশ্রম করে খাঁটি দুধ উৎপাদন করেও সঠিক দাম পাচ্ছেনা। সিলিং সেন্টারগুলোর সাথে হাত মিলিয়ে মধ্যস্বত্ত¡ভোগী মুনাফালোভী চক্রটি তাদের কৃত্রিম উপায়ে উৎপাদিত ড্রামভর্তি দুধ ঠেলে দিচ্ছে বিভিন্ন সিলিং সেন্টারে। আর সেন্টারগুলোও অপেক্ষাকৃত কম দামে দুধ পাওয়ায় খামারীদের উৎপাদিত দুধের চাহিদায় কৃত্রিম ভাটা তৈরি করছে। ফলে বাধ্য হয়ে খামারিয়াও অপেক্ষাকৃত কমদামে তাদের কাছে দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। আর এভাবেই প্রতিনিয়ত স্বপ্নভঙ্গ হচ্ছে নতুন নতুন দুগ্ধ উদ্যোক্তাদের। আর এমন পরিস্থিতিতে চরম সংকটের মুখে পড়েছে সম্ভাবনাময় দুগ্ধ শিল্প।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক খামারী এ প্রতিবেদককে জানান, তালা উপজেলার জেয়ালা গ্রাম ইতোমধ্যে দুধ উৎপাদনের জন্য দেশময় সুনাম কুড়িয়েছে। আর সেখান থেকে খামারীদের কাছ থেকে ন্যায্য-দামে খাঁটি দুধ সংগ্রহ করে সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় মোড়কজাত করে তা দেশব্যাপী সরবরাহের জন্য দেশের নামী একাধিক কোম্পানি খামার সংলগ্ন এলাকায় গড়ে তুলেছে স্ব স্ব ব্রান্ডের সিলিং সেন্টার। প্রথম দিকে সিলিং সেন্টারগুলি খামারীদের আলোর পথ দেখালেও মূলত সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অসাধু চক্রটি গড়ে তুলেছে ভেজাল দুধের সিন্ডিকেট। যার যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছেন খামারীরা। আর সকলের অজান্তেই প্রতিনিয়ত মানব শরীরের ঢুকছে রাসায়নিক সব অপদ্রব্য।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় তালা উপজেলার জেয়ালা, আটারই, মহান্দী ও জেয়ালা নলতার কয়েকজন খামারির সাথে। তাদের দেয়া তথ্য অত্যন্ত লোমহর্ষক ও ভয়ংকর। দেশের অন্যতম প্রধান গবাদি পশু পালন সমৃদ্ধ ও দুগ্ধ পল্লীকে পুঁজি করে প্রত্যন্ত এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে ভয়ংকর নকল দুধের রমরমা ব্যবসা।
মূলত তাদের দেয়া সূত্র ধরে জেয়ালা ঘোষপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার অধিকাংশ পরিবার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গবাদিপশু পালনের সাথে জড়িত। মূলত খামারীদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহকারী বা ব্যবসায়ীদের সরাসরি সম্পৃক্তায় গড়ে উঠেছে কৃত্রিম দুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘুরে ঘুরে দেখা হয় নকল দুধ উৎপাদনের পুরো প্রক্রিয়া।
এই ফড়িয়া বা ব্যবসায়ীর ভেজাল বা নকল দুধ তৈরির উপকরণ সমূহ অত্যন্ত লোমহর্ষক ও ভয়াবহ। তিনি প্রথমে একটি বিলিন্ডার মেশিনে হাফ কেজি খাঁটি দুধ নিলেন। তার সঙ্গে পরিমাণ মতো জেলির সাথে ডিটারজেন্ট (কাপড় কাচা) পাউডার অথবা সোডা, হাফ কেজি সয়াবিন তেল, পরিমাণ মত চিনি, স্যালাইন, লবণ, গুঁড়া দুধসহ পরিমিত মাত্রায় বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশিয়ে ১৫ মিনিট ধরে বিলিন্ডারে থিতিয়ে সব উপকরণগুলো ভালভাবে মিশিয়ে নেওয়া হয়। একই উপায়ে থিতানো হয় আরও অন্তত ৩ বার। এরপর সব দুধ একটি পাতিলে ঢেলে তার সঙ্গে এক মণ সাদা পানি মিশিয়ে প্রস্তুত করা হয় খাঁটি দুধের আদলে ভেজাল দুধ।

সূত্র জানায়, এভাবে এক মণ দুধ তৈরিতে খরচ হচ্ছে প্রায় ২০০-২৫০ টাকা পর্যন্ত। আর তা সিলিং সেন্টারসহ বিভিন্ন কারখানায় বিক্রি করা হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত। দুধে প্রস্তুতকৃত ফ্যাটের উপস্থিতির উপর নির্ভর করে দুধের দাম। যা উৎপাদন খরচের চেয়ে প্রায় ৭ গুণ বেশি। এভাবে একজন উৎপাদক দিনে ২ মণ ভেজাল দুধ উৎপাদন করেন। ঐ উৎপাদক বা মুনাফাভোগী ব্যবসায়ী খামারীদের কাছ থেকে আরও ৬ মণ খাঁটি দুধ সংগ্রহ করে সব মিলিয়ে খাঁটি হিসেবে মোট ৮ মণ হিসেবে দুধ সরবরাহ করেন সিলিং সেন্টারে। তবে স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা সব নামি প্রতিষ্ঠান আবার এই সংমিশ্রিত দুধ গ্রহণ করেনা। মূলত অসাধু ব্যবসায়ীদের সাথে সিলিং সেন্টারের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে গড়ে তোলা হয়েছে এই সিন্ডিকেট।
এ প্রসঙ্গে একাধিক ফড়িয়া বা ব্যবসায়ী জানান, গামাল বা খামার থেকে তারা প্রতি লিটার দুধ ৪০ টাকায় কিনে আবার ৪০ টাকায় বিক্রি করেন। ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য মায়াবী কথার জানান দিলেও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। মূলত আসল দুধের সাথে নকল দুধের সংমিশ্রনের প্রয়োজনেই তারা খামার থেকে ৪০ টাকা দরে দুধ সংগ্রহ করেন।

কারাবারের সাথে জড়িতরা আরও জানান, ব্যবসার একটি অংশ চলে যায় সিলিং সেন্টারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। মূলত সেন্টারের গ্রেটাররা দুধের ঘনত্ব (ননির ফ্যাট) মেপে টাকা দেয়। আর নকল দুধের পরিমিত রাসায়নিক সংমিশ্রনের উপর নির্ভর করে দুধের ঘনত্ব।
এদিকে দুধের ভেজাল কারবারিরা রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেলেও খামারীরা পড়েছেন বিপাকে। অপেক্ষাকৃত কম দামে দুধ বিক্রি করে উচ্চ মূল্যে গো-খাদ্য কিনে পশুপালন লাভের পরিবর্তে প্রতিনিয়ত লোকসানের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক খামারী ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ারও চিন্তা করছেন।
পক্ষান্তরে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন অসাধু চক্রটি। এ ব্যাপারে বাজারের পাশাপাশি সিলিং সেন্টারসহ সেখানকার দুধের মান মনিটরিংয়ের দাবি জানিয়েছেন প্রকৃত খামারীরা।

এবিষয়ে সাতক্ষীরা জেলার মিল্কভিটার সভাপতি তালার জেয়ালা গ্রামের প্রশান্ত ঘোষ এ প্রতিনিধিকে বলেন, আগে কেউ কেউ ভেজাল দুধের কারবারে জড়িত থাকলেও এখন সেটি নেই। বিশেষ করে ক্রিম, গুড়ো দুধসহ বিভিন্ন উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় তারা ওসব ছেড়ে দিয়েছে।
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মাছুম বিল্লাহ এ প্রতিনিধিকে জানান, অনেক খামারীর কাছ থেকে ভেজাল দুধ তৈরির ভয়ংকর তথ্য তিনি পেয়েছেন। ভেজাল দুধ মানব শরীরে জন্য খুবই ক্ষতিকারক। অসাধু চক্রকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার ব্যবস্থা করা হবে।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস এ প্রতিনিধিকে জানান, এমন একটি বিষয় তার কানে এসেছে। কোথাও ভেজাল দুধের কারবারির খবর পেলে প্রশাসনকে অবহিত করার জন্য জানিয়েছেন। দ্রæত এসব অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিপ্তরের সাতক্ষীরার উপ-পরিচালক মোঃ নাজমুল হাসান এ প্রতিনিধিকে জানান, এ বিষয়ে তাদের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। ভেজাল দুধের খবর জানতে পেরে প্রত্যেকটি সিলিং পয়েন্ট ভিজিট করা হয়েছে। সর্বশেষ পরিস্থিতি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক ও তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা মোঃ মোকলেছুর রহমান জানান, তারা ইতিমধ্যে বিভিন্ন সিলিং সেন্টার পরিদর্শন করেছেন। এ সময় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দুধ কেনার জন্য বিভিন্ন সিলিং সেন্টারকে বিশেষভাবে অবহিত করা হয়েছে। তাদের মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর

https://bd24news.com © All rights reserved © 2022

Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102