ঘূর্নিঝড় সিত্রাংয়ের তান্ডবে বাগেরহাটে ২ হাজার ১৪০টি ঘর বাড়ি বিদ্ধস্ত হয়েছে। ভেসে মৎস্য ঘেরের মাছ, ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে খেতের ফসল। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় উপড়ে পড়েছে বিপুল পরিমান গাছ। সোমবার (২৪ অক্টোবর) সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ভারি বর্ষন ও ঝড়ে এসব ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
মোংলা আবহওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী সোমবার একদিনে জেলায় ২১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর প্রভাবে প্লাবিত হয়েছে জেলার নিম্ন ল। পানিবন্ধীয় হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বসতবাড়ি। মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) বিকেল পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে জেলার বেশিরভাগ এলাকা। তবে এবারের ঝড়ে কোন মানুষ আহত বা নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে ঘূর্নিঝড় সিত্রাংয়ের তান্ডবে সুন্দরবনের কোন বন্য প্রাণির ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির।
বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ঘূর্নিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে জেলায় ২হাজার ১৪০ টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভেসে গেছে ৭৫০টি ঘের ও পুকুরের মাছ। এতে প্রায় ৮৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া জেলার বিভিন্ন উপজেলা ৮৫০ হেক্টর র্পোা আমনের জমি, ৩৭৫ হেক্টর শীতকালিন সবজি, ১৭ হেক্টর পান বরাজ, ১১০ হেক্টর কলা, ২০ হেক্টর মরিচ, ৭ হেক্টর পেঁপে ও ৬ হেক্টর বিভিন্ন শীতকালিন সবজির বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিম্না লে জমে থাকা পানি দ্রæত অপসরণ না হলে কৃষি খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান আরও বাড়বে বলে জানিয়েছেন বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আজিজুর রহমান।
অন্যদিকে বাগেরহাট শহরের মাঝিডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকার বেশকিছু রাস্তা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার বহরবুনিয়া, প করণ, বারুইখালী, বাগেরহাট সদরের মাঝিডাঙ্গা, কার্তিকদিয়া, যাত্রাপুর, কচুয়ার নরেন্দ্রপুর, পদ্মনগর, গোপালপুর, ভান্ডারখোলা, শরণখোলার সাউথখালী, খোন্তাকাটা, রায়েন্দা, ধানসাগরসহ বিভিন্ন এলকার অন্তত ২‘শ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামের ২ হাজারের অধিক পরিবার পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে। ঝড়ের ফলে বাগেরহাট পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির অন্তত ৩৫টি খুটি ও বেশকিছু স ালন লাইন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যার ফলে জেলার বেশির ভাগ এলাকা এখনও বিদ্যৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
বাগেরহাট শহরের মাঝিডাঙ্গা এলাকার হানিফ হাসান বলেন, বেরিবাঁধ ভেঙ্গে রাতে পানি প্রবেশ করে আমাদের বাড়ি ঘর সব ডুবে গেছে। মাছের ঘের, সবজি ও ধান ক্ষেত সব এখন পানির নিচে রয়েছে। আমাদের গ্রামের অন্তত ৪‘শ পরিবার পানিবন্ধী রয়েছে। এক কথায় আমাদের জন জীবন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
চিতলমারী উপজেলার পারডুমুরিয়া গ্রামের শামীম হাসান বলেন, গাছ পড়ে আমার বসত ঘরের মাঝ দিয়ে একেবারে বিদ্ধস্ত হয়ে গেছে। এই ঘরে আর বসবাস করারমত অবস্থা নেই। শ্রমিক দিয়ে যে গাছ কেটে সরাব সেই আর্থিক সক্ষমতাও নেই আমার।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল বলেন, বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলার ৭৫০টি মৎস্য ঘেরের মাছ ভেসে গেছে। এসে মাছ চাষীদের প্রায় ৮৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। চাষীদের দ্রæত মৎস্য ঘের সংস্কার করে পুনারায় মাছ চাষের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ আজিজুর রহমান বলেন, ঘূর্নিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে জেলায় বেশকিছু আমনের ক্ষেত, মৌসুমি সবজি ও ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে দ্রæততম সময়ের মধ্যে পানি নেমে না গেলে কৃষকদের আরও বেশি ক্ষতি হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।বাগেরহাট পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির মহা ব্যবস্থাপক মুহাম্মদ নুরুল হোসাইন বলেন, ঘূর্নিঝড় সিত্রাংয়ের ফলে আমাদের অনেক খুটি ও তার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যার ফলে গ্রাহকরা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ছিল। ক্ষতিগ্রস্থ বৈদ্যুতিক লাইন সংস্কার করতে ঠিকাদার ও আমাদের নিজস্ব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমন্বয়ে শতাধিক টিম ঘটন করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, যতদ্রæত সম্ভব বাগেরহাটে বিদ্যুৎ স ালন স্বাভাবিক করা হবে।বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোঃ আজিজুর রহমান বলেন, ঘূর্নিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ২হাজার ১৪০ টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কৃষি ও মৎস্য খাতেও বেশকিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদেরকে সরকারি নিয়শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।