ময়মনসিংহের ফুলপুরে ফুলপুর পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান। তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় স্থান করে নিয়েছেন। তারপরও তার উচ্চাশিক্ষার স্বপ্ন যেন অধরা হতে চলেছে। দরিদ্র পরিবারের এই ছেলেটিকে লেখাপড়া করানোর মতো সামর্থ্য তার পরিবারের নেই।
জানা যায়, আশিকুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (খ ইউনিট), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (খ ইউনিট), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (এ ইউনিট), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (সি ইউনিট), বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনাল (এফএসএসএস ইউনিট),এ মেধাতালিকায় নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করেছেন। এছাড়াও গুচ্ছ ২২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে তার স্কোর ৬৩.২৫ এবং মেরিট পজিশন ২৯৯৪তম।
জানা যায়, আশিকুর রহমানের বাবা ফুলপুর উপজেলার রূপসী ইউনিয়নের কাতুলী গ্রামের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী সাদেকুর রহমান। তিনি ফুলপুর সরকারি গার্লস স্কুলের ল্যাব-সহকারী পদে কর্মরত।
বাবা সামান্য চাকরি করে ছয় সদস্যের পরিবারের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করেন। সংসারের চাহিদা ঠিকমতো পূরণ করতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। তার বসতভিটা ছাড়া নিজের কোনো জমি নেই।
আশিকুর রহমান জানান, বাবার টাকা পয়সা না থাকলেও বাবা খেয়ে না খেয়ে কঠোর পরিশ্রম করে আমাকে পড়াশোনা করিয়েছেন, সাহস জুগিয়েছেন।
সবার ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে আজ এ অর্জন আমার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে পড়ার ইচ্ছা রয়েছে তার। আশিকুর রহমান আবেগতাড়িত কণ্ঠে জানান, প্রধানমন্ত্রী মেধার অনেক মূল্যায়ন করেন। তাঁর সুদৃষ্টি কামনা করেন আশিক। এছাড়া সমাজের বিত্তবানদের সহায়তাও তার স্বপ্ন পূরণ করতে পারেন।
আশিকুর রহমান জানান, প্রতিদিন পায়ে হেঁটে স্কুলে ক্লাস করছি নিয়মিত। কোনদিনই স্কুলের ক্লাশ মিস দিইনি। প্রাইভেট পড়ার মতো টাকা-পয়সা না থাকাই স্কুলশিক্ষকদের কাছ থেকে বড় ধরনের সহায়তা পেয়েছি। নিয়মিত ক্লাস করি প্রিয় প্রতিষ্ঠানে। মেধাবী ছাত্র হিসাবে সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আমাকে অন্যরকমভাবে দেখতেন।
যার ফলে ভালো পড়াশোনা করতে পেরেছি এবং পরীক্ষাতেও ভালো রেজাল্ট করতে অসুবিধা হয়নি। ৫ম শ্রেণীতে ফাইনাল পরীক্ষার আগের দিন ২০১৫ সালে মা হঠাৎ করে মারা যান। মায়ের লাশ দাফনের পরের দিন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি।২০২০ সালে ফুলপুর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ ও বোর্ডে মেধা তালিকায় ২৪তম হন।
জানা যায়, মোট ১৩০০ নম্বরের মাঝে ১২২৪ নম্বর পেয়ে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। ঢাকা কলেজ থেকে ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে ১৬৩তম স্থান অর্জন করেন আশিকুর রহমান। স্থানীয়রা জানান, সে এলাকায় শান্ত ও ভদ্র ছেলে হিসাবে পরিচিত। সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় উঠে আসা এ শিক্ষার্থী বাবা-মায়ের কষ্টার্জিত অর্থের কোনো অপচয় করেনি।
আশিকুর রহমান জানান, ঢাকায় পড়ালেখার খরচ জোগাতে কখনো বইমেলা, কখনো এনজিওতে আবার প্রাইভেট পড়িয়ে খরচ জোগাতে হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করতে পারলে হয়তোবা তার জীবনের মোড় ঘুরবে।
ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম. সাজ্জাদুল হাসান বলেন, মেধাবী আশিকুর রহমান শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মেধাতালিকায় আসার খবরটি শুনেছি। তার খোঁজ-খবর নেওয়া হবে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।