পাবনার মানসিক হাসপাতালে ভর্তি বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ইমার্জেন্সি মানসিক রোগীদের ভর্তি করাতে না পারায় অবশেষে অসহায় অবস্থায় ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের।
জানা যায়, ৫ শত শয্যা বিশিষ্ট এই হাসপাতালে সপ্তাহের ১ দিন শুধুমাত্র সোমবার রোগী ভর্তি করা হয়। কিন্তু অনেকেই না জানার কারণে প্রতিদিনই রোগী ভর্তি করাতে আসছে অনেকেই।হাসপাতালে আসার পর বহিঃবিভাগে ডাক্তার দেখানোর পরই সিদ্ধান্ত হয় রোগী ভর্তি হতে পারবে কিনা।
অনেক সময় বেড ফাঁকা না থাকায় ভর্তি হতে কয়েকদিন সময় লেগে যাচ্ছে। সেই সময়টা পাবনার বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে থাকতে হচ্ছে আগত রোগীর স্বজনদের। অনেক রোগীর পরিবারের এই সময়টুকু হোটেলে থাকার সামর্থ্যও নেই। আবার কখনো কখনো রোগীদের পাগলামি ভাংচুর মারামারি শুরু করলে তাদের নিয়ে হোটেলে থাকাটাও দুষ্কর হয়ে পড়ে।
মানিকগঞ্জ জেলা থেকে আসা মো. রফিকউল্লাহ জানাচ্ছিলেন, রোগী প্রচন্ড রকম মারামারি ভাংচুর করে, অনেক আশা করেছিলাম আজ রোগীকে ভর্তি করাতে পারবো। কিন্তু ভর্তি না নেওয়ায় পাবনায় থাকার মত অবস্থা ও স্বাধ্য আমাদের নেই তাই ফিরে যাচ্ছি। কুষ্টিয়া জেলা থেকে এক রোগীর আত্মীয় হাত পায়ে লোহার শিকল বেঁধে গুরুত্বর এক মানসিক রোগীকে এনেছিলেন ভর্তি করাবেন এই আশায়। রোগীর অবস্থা তাকে ধূমপান করতে দিলে সে চুপ থাকে নয়তো ভয়ংকর রুপ ধারণ করে এবং উত্তেজিত হয়ে যায়। তার সামনে কাউকে ধূমপান করতে দেখলে সে মারধর শুরু করে এবং সিগারেট বা বিড়ি কেড়ে নিয়ে খাওয়া শুরু করে। এমন সিরিয়াস রোগীদের ভর্তি নেয়নি হাসপাতালে।
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা রোগীর স্বজনেরা দাবী করেছেন, এমন আপদকালীন সময়ে হাসপাতালে একটা থাকার মত জায়গা যদি থাকতো তাহলে আমাদের জন্য খুব ভালো হতো। করোনা মহামারি শুরু হওয়ার আগে শ্রী শ্রী অনূকূল ঠাকুরের অভয়াশ্রমের বারান্দায় জায়গা করে নিতেন ভর্তি হতে না পারা এসব রোগী ও রোগীর স্বজনেরা। কিন্তু বর্তমানে মহামারির কারনে অভয়াশ্রমের দরজা বন্ধ। সপ্তাহে মাত্র একদিন সোমবার রোগী ভর্তির দিন থাকলেও প্রতিদিনই দেখা যায় দূর থেকে আসা রোগীদের চরম ভোগান্তি। আবার রোগীকে ভর্তি, ডাক্তার দেখানো, পরীক্ষা করতে হবে এসব কথা বলে টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এখানকার দালাল চক্রের বিরুদ্ধে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, আসন সংখ্যা সীমিত এবং জনবল সংকটের কারণে এরকম সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এই হাসপাতালে বর্তমানে মাত্র ১৩ জন চিকিৎসক রয়েছে। রোগীর সংখ্যা রয়েছে ৫০০ জন। যা আমাদের পক্ষে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। চিকিৎসকদের মোট ৩০ টি পদ এর মধ্যে ১৭ টি পদ অনেকদিন ধরে খালি পড়ে আছে। এবং মানসিক চিকিৎসক রোগ বিশেষজ্ঞ ৪ জনের মধ্যে ৩ টি পদ খালি। সর্বমোট ৬ শত ৪৩ টি পদে মোট ১ শত ৯১ টি পদ খালি রয়েছে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ তপন কুমার রায় বলেন, গুরুত্বপূর্ণ পদগুলি খালি থাকার কারণে চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ভর্তি যোগ্য অনেক রোগী বর্হি:বিভাগ থেকে ফেরত যাওয়ার মুল কারণও এটা। উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে বিষয়গুলো জানানো হয়েছে।