ময়মনসিংহের নান্দাইলে এক দরিদ্র পরিবারের ৫ জন সদস্য বাকপ্রতিবন্ধী হলেও এরমধ্যে তাদের একমাএ মা জরিনা খাতুন (৪৮) প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে। তার বাকপ্রতিবন্ধী এক মাত্র ছেলে ও তিন মেয়ে সরকারি ভাতা সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
উপজেলার বীর বেতাগৈর ইউনিয়নের চৈতনখালী গ্রামের এই পরিবারটি মানবেতর জীবন-যাপন করছে দীর্ঘদিন ধরে। পরিবারটির প্রধান উপার্জনক্ষম সাইদুল ইসলাম মারা গেছেন কয়েক বছর আগে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এক চিলতে বসত ভিটায় ওই পরিবারটির ভাঙাচোরা একটি টিনের ঘরে মানবেতরভাবে বসবাস করছে। মৃত সাইদুল ইসলামের স্ত্রী জরিনা খাতুনসহ তাদের তিন মেয়ে সালমা আক্তার (২০), খাদিজা আক্তার (১৮), সাথী আক্তার (১৫) ও এক মাত্র ছেলে আব্দুল্লাহ (১৭) বাকপ্রতিবন্ধী। পরিবারটির ৬ সদস্যের মধ্যে বড় মেয়ে নূরজাহান স্বাভাবিক। তার বিয়ে হয়েছে।
কথা বলতে না পারা এবং কানে না শুনতে পারলেও অদম্য ইচ্ছা শক্তিতে ছোট মেয়ে সাথী আক্তার স্থানীয় জহুরা খাতুন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে। লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ থাকায় ইশারা ইঙ্গিতের মাধ্যমে সালমা, খাদিজা ও আব্দুল্লাহ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ ও আর্থিক টানাপোড়নের কারণে তাদের আর লেখাপড়া করা সম্ভব হয়নি।
২০১৭ সালে পরিবারটির উপার্জনক্ষম কর্তা সাইদুল ইসলামের মৃত্যুর পর পরিবারে অভাব চরমে পৌঁছে। দুই মেয়ে সালমা ও খাদিজা ঢাকায় গিয়ে বাসাবাড়িতে ঝিয়ের কাজ শুরু করে। স্থানীয় সাংবাদিক প্রভাষক মো. আমিনুল হক উপজেলা সমাজ সেবা অফিসে যোগাযোগ করে বাকপ্রতিবন্ধী জরিনা খাতুনকে প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু এই মায়ের প্রতিবন্ধী ৪ সন্তান সরকারি ভাতা সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এ ব্যাপারে স্থানীয়রা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সহ প্রধানমন্ত্রী সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। তারা এই দরিদ্র পরিবারটির জন্য সরকারিভাবে একটি ঘর নির্মাণ করে দেওয়ারও দাবি জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ ইনসান আলী বলেন, খুবই মানবিক ঘটনা এটি। একই পরিবারের পাঁচ প্রতিবন্ধী থাকার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তিনি জানান, স্কুল পড়ুয়া সাথী আক্তারকে অনার্স পর্যন্ত লেখাপড়ার জন্য সরকারি শিক্ষাবৃত্তির ব্যবস্থা করে দেওয়া সম্ভব। পরিবারটির বাকপ্রতিবন্ধী অন্য সদস্যদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভাতা পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। তাদের অফিসে যোগাযোগ করতে তিনি পরামর্শ দেন।
নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এরশাদ উদ্দিন বলেন, বাকপ্রতিবন্ধী পরিবারটির সদস্যদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। সেই সাথে খাস জায়গায় তাদের জন্য সরকারি অর্থায়নে একটি ঘর করে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। তাছাড়া বাকপ্রতিবন্ধী অসহায় এই পরিবার টির জন্য তিনি সর্বোপরি সহযোগিতার আশ্বাস দেন।