November 23, 2024, 1:43 am
শিরোনাম:
শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠক হিসেবে জাতীয় যুব পুরস্কার পেয়েছেন কক্সবাজারের নুরুল আফসার শিকদার মনোহরদীতে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন মনোহরদীতে দিনব্যাপী পাট চাষী প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত মনোহরদীতে মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রকে বেধরক মারধরের অভিযোগ মনোহরদীতে জনমত জরিপ ও প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী তৌহিদ সরকার মনোহরদীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী “আলোকিত গোতাশিয়া” ফেসবুক গ্রুপের পক্ষহতে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ মনোহরদীতে অসহায়দের মাঝে শিল্পমন্ত্রীর ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ মনোহরদীতে ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে বালু উত্তোলনের দায়ে খননযন্ত্র ও বালুর স্তুপ জব্দ এতিম শিশুদের নিয়ে ইফতার করলেন মনোহরদীর ইউএনও হাছিবা খান

পাবনায় শিম চাষে ভাগ্য ফিরেছে কৃষকদের ইতিবাচক প্রভাব গ্রামীণ অর্থনীতিতে

বাকী বিল্লাহ (পাবনা) জেলা প্রতিনিধি:
  • আপডেটের সময় : শনিবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২০
  • 491 দেখুন

শীত মৌসুম প্রধান সবজির মধ্যে শিম অন্যতম। সবুজ পাতার মধ্যে হালকা বেগুনি রঙের ফুল। দোলা দেয় কৃষকের মন। চোখ যতদূর যায় মাঠের পর মাঠ শিম আর শিম। মাঠে মাঠে চলছে শিম তোলা ও পরিচর্যার মেলা। সবজির চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি শিম চাষের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে গ্রামীণ অর্থনীতিতেও।

পাবনা জেলার সদর, আটঘড়িয়া ও ঈশ্বরদী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শিমের ব্যাপক চাষ হচ্ছে। এছাড়াও জেলার অন্যান্য উপজেলায় শিমের আবাদ হয়, তবে খুবই কম। চলতি মৌসুমে পাবনা জেলায় তিন হাজার আটশত হেক্টর জমিতে শিম আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ টন।

আগাম জাতের শিম আবাদ করে ভাগ্য বদলেছে আলহাজ উদ্দিনের। কিনেছেন জমি, হয়েছে নতুন ঘর। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে পরিবার নিয়ে ভালো আছেন। পাবনার আটঘড়িয়া উপজেলার খিদিরপুর গ্রামের এই শিম চাষীর অবস্থা পাঁচ বছর আগেও ছিল সঙ্কটময়। তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে টানাটানির সংসার ছিল। বছর পাঁচেক আগে অন্য কৃষকদের আগাম জাতের শিমচাষ করতে দেখে তিনিও এক বিঘা জমিতে শিমের আবাদ শুরু করেন। সেই থেকে শুরু, আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। মাত্র পাঁচ বছরেই পাল্টে গেছে তার সংসারের চিত্র। আটঘড়িয়া উপজেলার নাদুরিয়া গ্রামের একাধিক চাষী জানান, এসব জমি ধান চাষের উপযুক্ত নয়। তাই তাদের মতো অনেকেই শিমচাষ বিকল্প হিসেবে বেছে নিয়েছেন। আলহাজ উদ্দিনের মতো আগাম জাতের শিমচাষ করে ভাগ্য ফিরেছে পাবনা জেলার অনেক কৃষকের।

শীতের আগাম সবজি হিসেবে এক মাস আগেই বাজারে উঠেছে শিম। অটো ও রূপবান নামে দুই রকমের শিমের বেশ চাহিদা রয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছেন চাষীরা। শুরুতে পাঁচ হাজার টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে দাম কমে দুই হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। আটঘড়িয়ার মণ্ডল পাড়ার কয়েকজন শিমচাষী জানান, তারা প্রায় পনেরো বছরের বেশি নিজেদের বীজ থেকে তাদের গ্রামসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে প্রায় তিন হাজার পরিবার শিম আবাদ করছেন। তারা বলেন, আল্লাহর রহমতে আমাদের গ্রামে সুখের বাতাস বাইছে শিম চাষের কারণে। বীজ লাগানো থেকে শুরু করে বাজারে শিম তোলা পর্যন্ত বিঘা প্রতি ষোল থেকে আঠারো হাজার টাকা খরচ হয়। তারা আশা করছেন, খরচ বাদ দিয়ে প্রতিজনের লাভ হবে কমপক্ষে ষাট হাজার টাকা। পারখিদীরপুর গ্রামের ইউনুস আলীর স্ত্রী শেফালী খাতুন জানান, ভালো টাকা পাওয়ায় শিম ক্ষেতে কাজ করে আনন্দ পান। শিম আবাদের ক্ষেত্রে উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শ এবং সহায়তা পেলে, বিশেষ করে সার ও কীটনাশকের ক্ষেত্রে ভর্তুকী দেয়া হলে শিমের উৎপাদন আরো বাড়ানো সম্ভব।

এতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে আরো বেশি ভূমিকা রাখবে শিম। আটঘড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার নাছিরামপুর, রামেশ্বর, কাঁকমাড়ি, কচুয়ারামপুর, দূর্গাপুর, রোকনপুর, খিদিরপুর, পারখিদিরপুর চাঁদভা, নাদুরিয়া, সাড়াবাড়িয়া, কলমনগর, সোনাকান্দার, সঞ্জয়পুর, বাচামারা, হাপানিয়া, বেরুয়ান, কুমারেশ্বর ও লহ্মণপুর গ্রামের বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শিমের আবাদ হচ্ছে। দিগন্ত বিস্তৃত এই শিমক্ষেতের জন্য এলাকার পরিচিতিই বদলে গেছে। লোকমুখে এই এলাকার নাম এখন ‘শিম সাগর’।শিম কেনাবেচার জন্য গ্রামে গ্রামে বসছে অস্থায়ী বাজার।

দএসব বাজার থেকে ইঞ্জিন চালিত নছিমন-করিমন ও ট্রাক বোঝাই শিম যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন হাট বাজারে। খিদিরপুর গ্রামের পাইকারি শিম ব্যবসায়ী শুকুর আলী জানান, এই এলাকার শিম ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন পাইকারি বাজারে পাঠানো হয়। এক মাস আগে থেকে নতুন শিম পাঠানো শুরু হয়েছে। খুচরা বাজারের শিমের দাম ও চাহিদা ভালো। উত্তরাঞ্চলের বৃহত্তম শিমের আড়ত ঈশ্বরদীর মুলাডুলি গিয়ে দেখা যায়, আড়তের পুরো জায়গায় ক্রয়কৃত শিম স্তূপ করে রাখা হয়েছে। প্রতিটি স্তূপে আছে শত শত মণ শিম। জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় আশপাশের এলাকায় শিম রাখা হয়েছে।

অন্যান্য এলাকার আড়ত সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে বসলেও মুলাডুলিতে আড়ত বসে সপ্তাহের সাতদিনই। মুলাডুলির শিম ব্যবসায়ী আমিনুর রহমান বাবু ওরফে শিম বাবু জানান, মুলাডুলির আড়তগুলো থেকে প্রতিদিন প্রায় ৬০-৭০ ট্রাক শিম ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। শিম বেচাকেনার কাজে মুলাডুলির আড়তগুলোতে প্রতিদিন এক হাজার দুইশো শ্রমিক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। এক হিসাবে জানা গেছে, পাবনা সদর, আটঘড়িয়া, ঈশ্বরদী ছাড়াও পার্শ্ববর্তী বড়াইগ্রাম ও লালপুরের প্রায় ২৪ হাজার মানুষ এই শিম চাষের সাথে সরাসরি জড়িত।

এ বিষয়ে পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক সামছুল আলম জানান, শিমের ফলন বাড়াতে ও পোকামাকড় দমনে চাষিদের পরামর্শ, প্রশিক্ষণ প্রদানসহ নানাভাবে তাদের পাশে রয়েছেন তারা। এবার বৃষ্টিতে ও ফুলে পচন রোগে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। তারপরও কৃষকরা সচেতন রয়েছে, কৃষি বিভাগ পাশে আছে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর

https://bd24news.com © All rights reserved © 2022

Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102