শারিরীক প্রতিবন্দ্বী অভিজিৎ মন্ডল (২০)। এবার তালা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা কলেজ থেকে এইচ,এস,সি ৪.০৮ গ্রেডে পাশ করেছে। এস,এস.সিতেও ছিল ৪.২৮ গ্রেড। ইচ্ছা ফিন্যান্স অথবা মার্কেটিংয়ে অনার্স পড়ার। তবে বাঁধ সেধেছে দারিদ্রতার পাশাপাশি নিজের প্রতিবন্দ্বিতা। জন্ম থেকেই তার ডান পা’টি নেই। ক্রাচের উপর ভর দিয়ে চলা-ফেরা করে সে। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াকালকালীণ বে-সরকারি সাহায্য সেবী সংস্থা ডিআরআরএ প্রথমবার একটি কৃত্রিম পা সংযোজন করে তার। এরপর এস,এস,সি পাশ করার পর দ্বিতীয় বার ফের আরো একটি পা দিলেও বর্তমানে তা একবারে নষ্ট হয়ে গেছে। আর এতেই চলাফেরার পাশাপাশি জীবন ধারনে ভোগান্তি বেড়েছে তার।
অভিজিতের পিতা সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ইসলামকাটি ইউনিয়নের খরাইল গ্রামের দীপঙ্কর মন্ডল একজন ভূমিহীন দিন মজুর। মা ঝর্ণা রাণী মন্ডল পরের বাড়ীতে কাজ করে কোন রকম জীবিকা নির্বাহ করেন। দু’ভাইয়ের মধ্যে অভিজিৎ ছোট। বড় ভাই অনুকুল মন্ডল সাতক্ষীরা সরকারী কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। উভয়ই টিউশনি করে পড়া-লেখা চালিয়ে আসছে।
শারিরীক প্রতিবন্দ্বী অভিজিতের পড়া-লেখার প্রতি অদম্য বাসনা। তাঁর ইচ্ছা, প্রতিবন্ধী হিসেবে পরের মুখাপেক্ষী হয়ে নয়। পড়া-লেখা শিখে মানুষের সেবা করতে চায় সে। তবে পা নাথাকায় চলে-ফেরায় ভোগান্তিতে টিউশনি বন্ধ রয়েছে। অর্থাভাবে অনার্স ভর্তিতেও নেমে এসেছে অনিশ্চয়তা। শুভ আগামীর পথে এই মূহুর্তে দরকার একটি কৃত্রিম পা।
অভিজিৎ জানায়, ছোট বেলায় যে বয়সে তার আর ১০ জন ছেলে-মেয়েদের সাথে খেলা করে বেড়ানোর কথা। ও তখন মাঠের পাশে সমবয়সীদের খেলা উপভোগ করত। ভীষণ খারাপ লাগত তখন ওর। তবে এর জন্য সৃষ্টি কর্তাসহ বাবা-মাকে কোন রকম দোষারোপ করে না সে। বরং নিয়তিকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিয়েই সার্বক্ষণিক পড়া-লেখায মনোনিবেশ তার।
সরকারের পাশাপাশি বে-সরকারী পর্যায়ে কিংবা সমাজের এমন কেউ কি আছেন পড়া-লেখার সামান্য সহযোগিতার পাশাপাশি একটি কৃত্রিম পা সংযোজন করে দিতে পারেন? জন্ম থেকে অদ্যবধি প্রতিটি মূহুর্তে বেঁচে থাকতে সংগ্রাম করছে অভিজিৎ। সংগ্রামী মানষিকতাই একদিন হয়তো তাকে পৌছে দেবে সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে। এর জন্য প্রয়োজন সামান্য সহযোগিতা। দেশের আনাচে-কানাচে বেড়ে ওঠা অভিজিতদের প্রতিভা বিকাশের মাধ্যম বা সারথি হিসেবে প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। সকলের সহযোগিতায় বেড়ে উঠুক তারা, এমন প্রত্যাশা সকলের।