পাবনায় করোনার নমুনা পরীক্ষায় চরম ভোগান্তির অবসান হতে যাচ্ছে। অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে পাবনা মেডিকেল কলেজ ভবনে ট্রান্সক্রিপ্টেজ পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (পিসিআর) ল্যাব নির্মাণের কাজ ৯০ ভাগেরও বেশি শেষ হয়েছে। বাকি কাজও চলছে। এখন প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি এবং কিট এলেই চালু করা যাবে ল্যাবটি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এমনিতেই স্বাস্থ্যসেবায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে পাবনা জেলা। আর এখন এই করোনাকালেও পাবনার মানুষ সবচেয়ে স্পর্শকাতর স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সিরাজগঞ্জে, কুষ্টিয়া, বগুড়া এবং রাজশাহীতে পিসিআর ল্যাব থাকলেও পাবনায় বাদ ছিল। পিসিআর ল্যাব না থাকায় নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় রাজশাহীতে। কিট নেই বা ধারণক্ষমতা নেই এমন অজুহাতে রাজশাহী ল্যাব নমুনা না নিলে পাঠাতে হয় ঢাকায়।
শুধু তাই নয়, একবার নমুনা দিয়ে রিপোর্ট পেতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ দিন। এসব করোনার নমুনা পরীক্ষা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে চরম অচলাবস্থা। এতে করোনার উপসর্গে থাকা এবং করোনা রোগীসহ তাদের স্বজনদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। এই ভোগান্তির কারণে অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে নমুনা সংগ্রহ। পাবনার বেশ কয়েকটি ব্যাংক ও বীমার শাখা প্রধানরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তারা প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। নমুনা দিতে গিয়ে দিতে পারছেন না। আবার নমুনা দেয়া গেলেও ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে দীর্ঘ সময়। পাবনা মেডিকেল কলেজে স্থাপিত পিসিআর ল্যাবে দ্রুত যন্ত্রপাতি বসিয়ে নমুনা পরীক্ষা শুরু করলে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ উপকৃত হবেন বলে তারা জানান। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, পাবনার নমুনা পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত ল্যাব রাজশাহী। রাজশাহীতে চারটি পিসিআর ল্যাব রয়েছে। প্রতি ল্যাবে এক শিফটে ৯৪টি নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু নমুনার এতই চাপ যে ডাবল শিফটে পরীক্ষা করেও তারা শেষ করতে পারছে না। এ জন্যই মূলত বিলম্ব হয়।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. আকসাদ আল-মাসুর আনন জানান, দেশের অন্যতম পুরনো জেলা পাবনা। পাবনার এক সময়ের মহকুমা সিরাজগঞ্জে এবং পার্শ্ববর্তী কুষ্টিয়া জেলায় মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম করার পর পাবনায় মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হলেও এখনও হয়নি কলেজের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। এখানে নেই পিসিআর ল্যাব, আইসিইউ। তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকেও নানা সময়ে পিসিআর ল্যাব স্থাপনের জন্য আবেদন নিবেদন করা হয়। সবার আবেদন নিবেদনে অবশেষে একটি ল্যাব পাওয়া যাচ্ছে। পাবনার সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল মোমেন জানান, নমুনা পরীক্ষার অচলাবস্থা কাটাতে পাবনায় দ্রুত পিসিআর ল্যাব স্থাপন জরুরি উল্লেখ করে তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পিসিআর ল্যাবের জন্য একাধিকবার পত্র দেন। সবার আবেদন নিবেদনে সরকারি উদ্যোগে পাবনা মেডিকেল কলেজ ভবনে পিসিআর ল্যাবের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আইয়ুব হোসেন জানান, ২৫০ শয্যার পাবনা জেনারেল হাসপাতালই জেলার সব চিকিৎসার একমাত্র ভরসা। কিন্তু এখানে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের দ্রুত চিকিৎসা দেয়া যাচ্ছে না রোগ শনাক্তে বিলম্বের জন্য। আর এজন্য পিসিআর ল্যাব অতীব জরুরি। আশার কথা সেটি বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। এছাড়া পাবনা- ৫ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স জানিয়েছেন, পাবনা জেনারেল হাসপাতালে দ্রুত চারটি আইসিউ বেড চালু হবে। এতে করে পাবনায় করোনা রোগীদের সুচিকিৎসা দেয়া সম্ভব হবে বলে জানায় ।
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল আজিম জানান, তারা ল্যাবের অবকাঠামো স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে শিগগিরই হস্তান্তর করবেন। হস্তান্তরের পর ল্যাবের যন্ত্রপাতি স্থাপন, কারিগরি সহায়তা ও জনবলসহ অন্যান্য কার্যক্রম কবে নাগাদ শেষ হবে সেটা তিনি জানেন না। এদিকে পাবনাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবিটি পূরণ হতে যাচ্ছে জেনে জনমনে আশার সঞ্চার হয়েছে। পাবনায় শুরু থেকেই করোনা রোগে মারা যাওয়া বহু রোগীর গোসল ও দাফন কাজ করা তরুণ সমাজসেবক দেওয়ান মাহবুব জানান, তারা পিসিআর ল্যাবের দাবিতে পাবনা শহরে মানববন্ধন পর্যন্ত করেছেন। এখন পিসিআর ল্যাব হচ্ছে দেখে তিনি আনন্দিত।