দীর্ঘ ৩০ বছর পর ২৬ শে মে বুধবার ঘূর্ণিঝড় ও পূর্ণিমার মিলনের শঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। ধারণা করা হচ্ছে এবারের এ ঘূর্ণিঝড় শক্তিশালী হতে পারে। এর ফলে ২০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। ইতিমধ্যে সাগড় উপকূল অঞ্চলসহ ভারত বাংলাদেশে এর উপস্থিতি জানান দিচ্ছে এই ঘূর্ণিঝড় যশ কিংবা ইয়েস নামে।
১৯৯১ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড়টি পূর্ণিমার সময় আঘাত হানায় ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়। তাতে প্রাণ হারায় ১,৩৮,০০০ জন মানুষ। সর্বস্ব হারায় প্রায় ১ কোটি মানুষ। ৩০ বছর পর আবারও ভরা পূর্ণিমায় ঘূর্ণিঝড়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আবহাওয়াবিদরা।
আগামী বুধবার (২৬ মে) দেশের স্থলভাগে আছড়ে পড়তে পারে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে একই এলাকায় নিম্নচাপে রূপ নিয়েছে। এটি সোমবার আরও শক্তিশালী হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় নিয়ে আতঙ্কে আছেন উপকূলের মানুষও। তবে ঝড় মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। প্রস্তুত রয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। পর্যবেক্ষণ ও তথ্য সংগ্রহে কন্ট্রোল রুম চালু করেছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আবহাওয়া অধিদফতরের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ এ কে এম রুহুল কুদ্দুস বলেন, গতকাল (রোববার) দুপুর ১২টার দিকে সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়। বিকেল ৫টার দিকেও সেটি একই এলাকায় অবস্থান করছিল। নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে সোমবার ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
তিনি বলেন, এটি আরও ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে এবং পরে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়ে উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর হতে পারে। বর্তমান গতিধারা অব্যাহত থাকলে ঘূর্ণিঝড়টি বুধবার নাগাদ ভারতের ওডিশা-পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের খুলনা উপকূলে পৌঁছাতে পারে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ এখন ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার; যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ৫০ কিলোকিমটার পর্যন্ত বাড়ছে। নিম্নচাপ কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল রয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর। দেশের কোথাও কোথাও বৃষ্টিরও আভাস দেয়া হয়েছে।
তবে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের খুলনা উপকূলে প্রবেশ করতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদফতরের বার্তার সঙ্গে ভিন্ন মত প্রকাশ করেন কানাডার সাসকাচুয়ান ইউনিভার্সিটির আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক বাংলাদেশি পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ উইন্ড শিয়ারের মানচিত্র, সমুদ্রপৃষ্ঠে পানির তাপমাত্রা, সমুদ্রপৃষ্ঠে পানির গড় উচ্চতার বিচ্যুতি ও বঙ্গোপসাগরের দীর্ঘ ৪০ বছরের ঘূর্ণিঝড়ের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড়টি নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম উপকূলের ওপর দিয়ে বাংলাদেশের স্থলভাগে প্রবেশ করতে পারে।
তিনি বলেন, এটি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ও মিয়ানমার উপকূলেও আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে। তার মতে, যদি এটি প্রকৃতপক্ষেই চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানে, তবে ঘূর্ণিঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৬৬ থেকে ২২০ কিলোমিটার। সেই সঙ্গে ১৫ থেকে ২০ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় শক্তিশালী হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে মোস্তফা কামাল বলেন, ২৬ মে ভরা পূর্ণিমা। ফলে চন্দ্র, সূর্য ও পৃথিবী একই অক্ষে অবস্থান করবে। চন্দ্র ও সূর্যের মিলিত অভিকর্ষে ওই দিন উপকূলীয় এলাকায় প্রাকৃতিক নিয়মেই দুই থেকে তিন ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হবে। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে যার সঙ্গে যুক্ত হবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উঁচু জলোচ্ছ্বাস।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান জানান, শতভাগ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়ার চেষ্টা চলছে। রোববার পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক জরুরি সভায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বাঁধ মনিটরিংসহ জরুরি কাজের জন্য পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ প্রস্তুত রয়েছে।
এ দিকে ঘূর্ণিঝড়ের আগে দেশের সব বিভাগে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। টানা কয়েক দিন ধরে অসহনীয় গরমে অস্বস্তিকর অবস্থা জনজীবনে। তবে আগামী মঙ্গলবার থেকে ধীরে ধীরে তাপমাত্রা কমবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।