November 22, 2024, 6:43 pm
শিরোনাম:
শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠক হিসেবে জাতীয় যুব পুরস্কার পেয়েছেন কক্সবাজারের নুরুল আফসার শিকদার মনোহরদীতে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন মনোহরদীতে দিনব্যাপী পাট চাষী প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত মনোহরদীতে মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রকে বেধরক মারধরের অভিযোগ মনোহরদীতে জনমত জরিপ ও প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী তৌহিদ সরকার মনোহরদীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী “আলোকিত গোতাশিয়া” ফেসবুক গ্রুপের পক্ষহতে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ মনোহরদীতে অসহায়দের মাঝে শিল্পমন্ত্রীর ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ মনোহরদীতে ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে বালু উত্তোলনের দায়ে খননযন্ত্র ও বালুর স্তুপ জব্দ এতিম শিশুদের নিয়ে ইফতার করলেন মনোহরদীর ইউএনও হাছিবা খান

শেরপুরের স্প্রিন্টার জহির রায়হান বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে দৌড়াবে এবার টোকিও অলিম্পিকে

এস.এম.আরফান আলী,স্টাফ রিপোর্টার:
  • আপডেটের সময় : শনিবার, মে ২৯, ২০২১
  • 339 দেখুন

ময়মনসিংহ বিভাগের শেরপুর জেলা সদরের লছমনপুর ইউনিয়নের দীঘলদি গ্রামের খেলা পাগল জহির রায়হান এবার বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে দৌড়াবে টোকিও অলিম্পিকে। শেরপুরের মানুষের অহঙ্কার জহির অলিম্পিকে দৌড়াবে জেনে সবাই খুশি। সবারই প্রত্যাশা জাতীয় পর্যায়ে অনেক পুরস্কার পাওয়া জহির এবার টোকিও অলিম্পিকেও দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনবে।

নিজ পুত্র সন্তানদের ভালভাবে লেখা পড়া করানোর জন্য স্কুল শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের দীঘলদি গ্রামের বাড়ী ছেড়ে বসবাস শুরু করেন শেরপুর জেলা শহরের বারই পাড়া মহল্লায়। শহরের একটি বেসরকারী স্কুলে ভর্তি করান বড় ছেলে রাসেল ও দ্বিতীয় পুত্র জহির রায়হানকে। বড় ছেলে রাসেল নিয়মিত স্কুল করলেও ৩য় শ্রেণীতে ওঠার পর খেলা-ধুলার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠে জহির রায়হান। স্কুলেও উপস্থিত থাকতো অনিয়মিত। প্রথমে বাবা মা বকাবকি করলেও শেষ পর্যন্ত তাকে ফুটবল অনুশীলণ করার জন্য ভর্তি করায় “ফর ফুটবল শেরপুর” এর কোচ সাধান বসাকের কাছে। সেখানে সে ভাল ফুটবলার হিসেবে নিজেকে মেলে ধরতে সক্ষম হয়।
পরবর্তীতে বিকেএসপি প্রতিভা অন্বেষন টিম আসে শেরপুরে খেলোয়ার বাছাই করার জন্য। প্রথম বার বিকেএসপিতে জায়গা না করতে পারলেও পরেরবার ২০১২ সালে এথলেটিক খেলোয়ার হিসেবে বিকেএসপিতে সুযোগ করে নেন জহির। সেখানে প্রথমে একমাস প্রশিক্ষন করে বাছাইয়ে টিকে যান, এবং আবারও ৫দিনের প্রশিক্ষন দিয়ে বিকেএসপিতে ৭ম শ্রেণীতে ভর্তির সুযোগ পান জহির। এর পর থেকেই তার সমানে চলা।

জহির রায়হান দেশের বড়বড় আসরে অনেক পুরস্কার জিতেছেন। ৪০০ মিটারে ৪৬.৮৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে দেশীয় আসরে ৩২ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন রেকর্ড গড়েছেন তিনি। এছাড়া ওয়ার্ল্ড ২০১৭ সালের ইয়ুথ অ্যাথলেটিকস, নাইরোবি, কেনিয়া ও এশিয়ান ইয়ুথ অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশীপ, থাইল্যান্ড এ ৪০০মি. ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে হিটে উত্তীর্ণ হয়ে সেমিফাইনাল খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন। এছাড়া ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কায় সাউথ এশিয়ান জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশীপ, ২০১৯ সালে কাতারে ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকস, ২৩তম এশিয়ান অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশীপ এবং নেপালে ১৩ তম সাউথ এশিয়ান গেমসে অংশগ্রহণ করেছেন জহির। তার এ সাফল্য দেখে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে তাকে পিটি অফিসার হিসেবে চাকুরী দেয়া হয়। এতে খুশি সে ও তার পরিবার।
এদিকে বাংলাদেশ থেকে টোকিও অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন একজন অ্যাথলেট মনোনয়নের জন্য অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনকে চিঠি দেয়। বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সিলেকশন কমিটি মনোনয়নের জন্য তিনজনের নাম প্রস্তাব করলে সেখান থেকে জহির রায়হানের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ভালো পারফরমেন্সের ভিত্তিতে টোকিও অলিম্পিকের জন্য তাকে মনোনয়ন করে।
এব্যাপারে জহির রায়হান জানান, আমি ছোট থেকেই খেলা পাগল ছিলাম। প্রথমে আমার বাবা মা আমাকে লেখা পড়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করলেও পরবর্তীতে আমাকে সহযোগিতা করেছে আমার বাবা, মা ও পরিবারের সদস্যরা। প্রথমে ফুটবল দিয়ে শুরু করলেও পরবর্তীতে আমার বাবার ইচ্ছেতেই আমি এথলেটিকসে বিকেএসপিতে ভর্তি হতে সক্ষম হই। আজ আমি আমার বাবা-মার আশা পুরণ করতে পেরেছি। এ জন্য আমার কোচার স্যারসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। আর সবার কাছে দোয়া চাই আমি যেন টোকিও অলিম্পিকে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনতে পারি।

ছেলের সাফল্যে খুশি তারা বাবা আব্দুর রাজ্জাক ও মা শিখা বেগম। বাবা আব্দুর রাজ্জাক জানান, আমার ছেলেকে স্কুলে ভর্তিকরালেও তার খেলার প্রতি টান ছিলো বেশী। তাই আমার বড় ছেলের পরামর্শে আমি তাকে খেলা ধুলার চর্চা করাতে আগ্রহী হয়ে ওঠি। কারণ আমি নিজেও এথলেটিকস ছিলাম এবং বর্তমানেও আমি একজন শরীরচর্চা শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছি। আমার চার ছেলের মধ্যে জহির দ্বিতীয়। আমার ছেলে যাতে দেশের জন্য আরো সম্মান বয়ে আনতে পারে এ কামনাই করি। মা শিখা বেগম জানান, আমার ছেলে যাতে আরো সাফল্য অর্জন করতে পারে এ জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।
জহির রায়হানের প্রথম কোচ সাধন বসাক জানান, জহির প্রথমে আমার কাছে অনুশীলন করে। তাকে অনুশীলন দেখে প্রথম থেকেই আমি ভেবেছি সে একদিন বড় কিছু করতে পারবে। আজ সেটাই বাস্তবে পরিনত হয়েছে। এতে আমি খুবই খুশি।

শেরপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার অতিরিক্ত সম্পাদক মানিক দত্ত জানান, শেরপুরের ক্রীড়ামোদীসহ সর্বস্তরের মানুষ খুশি জহিরের এ কৃতিত্বের জন্যে। এ জন্য তাকে শেরপুর জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্থানে সম্বর্ধনাও দেয়া হচ্ছে। জেলা ক্রীড়া সংস্থাও টোকিও অলিম্পিকে জহির ভালো করবে এ প্রত্যাশা করছে।

২৬ই মে শেরপুর জেলা প্রশসানের পক্ষ থেকে জহির রায়হানকে সম্বর্ধনা ও নগদ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করে জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব বলেন, জহির আমাদের অহঙ্কার। সে শুধু শেরপুর নয় সারাদেশের ভাবমূর্তিকে উজ্জল করছে। আমরা আশা করবো, টোকিও অলিম্পিকে সে দেশের জন্য আরো বড় গৌরব বয়ে আনবে।
শেরপুরের মানুষের প্রত্যাশা মাশরাফীকে দিয়ে যেমন দেশবাসী নড়াইলকে আলাদা করে চেনে, ঠিক তেমনি শেরপুর জেলাকেও জহিরকে নিয়ে ভিন্নভাবে চিনবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর

https://bd24news.com © All rights reserved © 2022

Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102