কোলকাতায় গ্রেফতার হল গফরগাঁও থেকে প্রাচার হওয়া দুই বোন। ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের গাইনপাড়া গ্রামের দিনমজুর আজিজুল ইসলামের দুই মেয়ে কুলছুমা খাতুন (২০) ও সুমাইয়া খাতুন (১৮) দুই বছর আগে ঘর ছাড়েন। পরে শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজার এলাকায় রিদিশা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানিতে চাকরি নেন দুই বোন। সেখানে ভালোই ছিলেন দুই বোন।
সেখান থেকে গত মার্চে দালাল চক্রের মাধ্যমে ভারতে পাচার হয়ে নির্যাতিতা দুই নারী এখন পুলিশ হেফাজত ও সেফ হোমে রয়েছে।
ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা যায়, শ্রীপুর জৈনা এলাকায় প্রতিবেশী সুজন (৪৫) ও মো. ইউসুফ (২২) দুই বোনের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। সুজনের বাড়ি নেত্রকোণার বারহাট্টা এবং ইউসুফ ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উচাখিলা গ্রামের বলে পরিচয় দেয়। কিছুদিন পর ইউসুফ প্রেমের সম্পর্ক গড়ে গোপনে বড় বোন কুলছুমাকে বিয়ে করেন।
বিয়ের দুই মাস পর গত মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে কুলছুমা ও সুমাইয়াকে পাচারকারী দলের সদস্য ইউসুফ ও সুজন টিকটক ভিডিও নির্মাণ ও ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে জীবননগর সীমান্ত দিয়ে ভারতে নিয়ে যায়। সেখানে দুই বোনকে তিন লাখ টাকায় পশ্চিমবঙ্গের রানাঘাট এলাকায় নারী ব্যবসায়ী চক্রের কাছে বিক্রি করে দেয়।
তাদেরকে ভয়ভীতি ও মারধর করে পশ্চিমবঙ্গের দিঘা এলাকায় হোটেলে রেখে দেহ ব্যবসা করানো হতো। গত ১৬ মে পশ্চিবঙ্গের করোনায় লকডাউন শুরু হলে এই চক্রকে ফাঁকি দিয়ে দুই বোন পালিয়ে ভিন্ন ভিন্ন পথে দেশে ফেরার চেষ্টা করে। গত ১৭ মে কুলছুমা আক্তর হাওড়া স্টেশন এলাকায় পুলিশের হাতে আটক হয়। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে কোলকাতার শিয়ালদহ এলাকায় সরকারি সেফ হোম পার্টিসিপেটরি সিসার্চ অ্যান্ড একশন নেটওয়ার্কের কাছে হস্তান্তর করে।
অন্যদিকে ছোট বোন সুমাইয়া গত ২১ মে ভারতের বোঝাপড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টাকালে বিএসএফের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কোলকাতা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
পাচার হওয়া দুই বোন পুলিশের হাতে আটকের পর কোলকাতা থেকে কুলছুমা বাংলাদেশে তার মামা হুমায়ুন কবীরের কাছে ফোন করে পাচার ও নির্যাতনের কাহিনী বর্ণনা করেন। পরিবার বিষয়টি পুলিশকে জানায়।
তাদের বাবা আজিজুল ইসলাম জানান, গত দুই মাসে তাদের মোবাইলে ভারতীয় নাম্বার থেকে টাকার বিনিময়ে মেয়েদের ফিরিয়ে নিতে একাধিকবার ফোন আসে। পাচারকারি চক্র এক লাখ টাকা দাবি করে জানায় টাকা পেলে মেয়েদের ফেরত পাঠাবে।
এক পর্যায়ে পাচারকারীরা বাংলাদেশের ঝিনাইদহ এলাকার জনৈক স্বপনের একটি মোবাইল নাম্বার দিয়ে এক লাখ টাকা পাঠাতে বলেন। বিশ হাজার টাকা দেয়ার পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম ঠিকানা জানতে চাইলে মোবাইল নম্বরটি বন্ধ করে দেয় স্থানীয় এজেন্ট।
এদিকে গত ২৭ মে পাচার হওয়া দুই বোনের বাবা-মা তাদের নিখোঁজের ব্যাপারে প্রথমে গফরগাঁও থানায় পরে শ্রীপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গিয়ে ব্যর্থ হন বলে জানান আজিজুল ইসলাম।
কুলছুমা ও সুমাইয়ার মামা হুমায়ুন কবীর বলেন, আমার ভগ্নিপতি গ্রামের সহজ সরল মানুষ। গত তিন মাসে মেয়েদের সন্ধানে যে যেখানে বলেছে তারা খোঁজ করেছেন। বিষয়টি পুলিশ এড়িয়ে গেলে তারা ময়মনসিংহ র্যাবের শরণাপন্ন হন।
মেয়েদের বাবা আজিজুল ইসলাম বলেন, আমি দিন মজুরি করে সংসার চালাই। আমার দুই মেয়েকে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানাই।
এ ব্যাপারে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার ইমাম হোসেন বলেন, এ বিষয়টি তার জানা নেই।