উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে লালমনিরহাটের নদী তীরবর্তী এলাকায় পানিবন্দি হয়েছে কয়েক হাজার পরিবার।
বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) রাতে পানি প্রবাহ আরও বেড়ে বিপদসীমার ৩০ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এর আগে রাত ৯ টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার)। যা বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
জানা গেছে, ভারতের সিকিম উপত্যকা থেকে সৃষ্ঠ তিস্তা নদী ভারতে প্রবাহিত হয়ে লালমনিরহাট জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
উজানে ভারতের অংশে ভারত সরকার বাঁধ নির্মাণ করে তিস্তা নদীর এক তরফাভাবে ব্যবহার করছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশ অংশে কোনো পানি থাকে না।
মরুভুমিতে পরিণত হয় তিস্তা। আবার বর্ষাকালে অতিবর্ষণের ফলে ভারতের অতিরিক্ত পানি ছেড়ে দেওয়ায় বাংলাদেশ অংশে ভয়াবহ বন্যা আর তীব্র ভাঙনের মুখে পড়ে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলাসহ নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ভারত সরকার অতিমাত্রায় পানি ছেড়ে দেওয়ায় তিস্তা নদীতে বাংলাদেশ অংশে পানি প্রবাহ বেড়ে যায়। এতে দু’কূল উপচিয়ে বন্যার পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। তিস্তা নদীর বাম তীরে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে। করোনাকালীন লকডাউনের এ সময়ের বন্যায় চরম দুর্ভোগে পড়েছে তিস্তা পাড়ের মানুষ।
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টের বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানান, গত এক সপ্তাহ থেকে তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে ৫২ দশমিক ৩৫-৪০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে হঠাৎ পানি প্রবাহ বেড়ে যায় তিস্তায়। রাত ৯টায় তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৮০ সে.মি.। যা বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপরে। ব্যারাজ রক্ষার্থে সব জলকপাট খুলে দিয়ে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। ফলে ব্যারাজের ভাটিতে নদী তীরবর্তি বেশ কিছু গ্রাম পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তবে চলতি মৌসুমে এটি সর্বোচ্চ পানি প্রবাহ।
গোতামারী ইউনিয়নের চরাঞ্চলের মানিক মিয়া ও আজিজার রহমান বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে হু হু করে ঘোলা পানি আসছে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পানি আরও বাড়ছে। গ্রামের অধিকাংশ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছি। করোনার লকডাউনে বন্যার পানিতে চরম দুর্ভোগে পড়েছি।
তিস্তা ব্যারাজের পানি বিজ্ঞান শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইলিয়াস আলী বলেন, ভারত থেকে প্রচণ্ড গতিতে পানি বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে। তিস্তা ব্যারাজের সব গেট খুলে দিয়ে পানির চাপ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আরো কি পরিমান পানি আসবে তা ধারণা করা যাচ্ছে না। তবে পানি আরো বাড়তে পারে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নদীপাড়ের মানুষের সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।