November 21, 2024, 10:18 am
শিরোনাম:
শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠক হিসেবে জাতীয় যুব পুরস্কার পেয়েছেন কক্সবাজারের নুরুল আফসার শিকদার মনোহরদীতে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন মনোহরদীতে দিনব্যাপী পাট চাষী প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত মনোহরদীতে মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রকে বেধরক মারধরের অভিযোগ মনোহরদীতে জনমত জরিপ ও প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী তৌহিদ সরকার মনোহরদীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী “আলোকিত গোতাশিয়া” ফেসবুক গ্রুপের পক্ষহতে ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ মনোহরদীতে অসহায়দের মাঝে শিল্পমন্ত্রীর ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ মনোহরদীতে ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে বালু উত্তোলনের দায়ে খননযন্ত্র ও বালুর স্তুপ জব্দ এতিম শিশুদের নিয়ে ইফতার করলেন মনোহরদীর ইউএনও হাছিবা খান

কালো মাছি চাষে স্বাবলম্বী মোমিনুল

ডেস্ক
  • আপডেটের সময় : বুধবার, জুন ৮, ২০২২
  • 856 দেখুন

শেডের এক ঘর। এর মধ্যে একটি মশারি। তার ভিতরে কালো রঙয়ের অসংখ্য মাছি। মশারির ভিতরে মাছি ছাড়াও রাখা হয়েছে প্লাস্টিকের বিভিন্ন রঙয়ের ডিস ও বালতি। সেগুলো নেট দিয়ে মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। তার ওপরে রাখা হয়েছে কাঠের ছোট ছোট টুকরো। এক সময় মাছিগুলো নিজেদের প্রজনন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সেই কাঠের টুকরোতে গিয়ে ডিম পারে। আর উসেই ডিম ৮-১০ দিনের মধ্যে সংগ্রহ করে আবার অন্যত্র আলাদা প্লাস্টিকের পাত্রে রাখা হয়।

এরপর সেখান থেকে লার্ভা তৈরি হয়। ১৫ দিনের মধ্যে লার্ভাগুলো পোকার মতো হয়। সেই পোকাগুলোকে পরিষ্কার করে খাওয়ানো হয় হাঁস, মুরগী ও মাছকে। এমনকি যে মাছিগুলো মরে যায় সেগুলোও মুরগীর খাবার বা ফিড হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। আর লার্ভাগুলোকে খাবার হিসেবে দেওয়া হয় মুরগীর নাড়িভুঁড়ি বা পচা যে কোনো ধরনের নষ্ট বর্জ্য।

বলছিলাম ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ বা কালো মাছি চাষ সম্পর্কে। সম্প্রতি এই মাছি চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন মোমিনুল ইসলাম। এই মাছি চাষ করে তার সুদিন ফিরেছে। সদর উপজেলার ৫ নম্বর বালিয়া ইউনিয়নের বগুলাডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা মোমিনুল।

তিনি পেশায় একজন কাঁচামালের ব্যবসায়ী। ব্যবসার সুবাদে একদিন গাইবান্ধা যান। সেখানে ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ পোকার লার্ভা থেকে পোকা উৎপাদন করে হাঁস, মুরগী ও মাছকে খাওয়াতে দেখেন। সেখান থেকেই প্রশিক্ষণ ও লার্ভা নিয়ে ২০২১ সালের আগস্ট মাসে বাড়িতে ফিরে এসে শুরু করেন ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ পোকার চাষ। শুরুতে তার স্ত্রী, আত্নীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা এই মাছি পালনের বিষয়টিকে ভালোভাবে নেননি। এজন্য সহ্য করতে হয়েছে অনেক লাঞ্ছনা-গঞ্জনাও। কিন্তু থেমে যাননি তিনি।তিনিই সর্বপ্রথম উত্তবঙ্গের দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের মধ্যে ব্যতিক্রমভাবে মাছ, হাঁস ও মুরগীর বিকল্প খাদ্য হিসেবে মাছির লার্ভা উৎপাদন ও পোকার চাষ শুরু করেন মোমিনুল ইসলাম। ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ পোকার মাত্র ২ কেজি লার্ভা দিয়ে চাষ শুরু করেছিলেন তিনি। এখন তার খামারে প্রতিদিন প্রায় ৭০-৮০ কেজি লার্ভা উৎপাদন হচ্ছে। আর এ পোকা চাষে সফল হয়েছেন তিনি। আর তার এমন সাফল্য দেখে বিভিন্ন জেলাতে এ পোকার চাষ শুরু করেছেন নতুন নতুন উদ্যোক্তা।

মোমিনুল ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘প্রথমে গাইবান্ধা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মাছির লার্ভা নিয়ে বাড়িতে পোকার চাষ শুরু করি। তখন আমার স্ত্রীও আমাকে ঘরে থাকতে দিত না ও খাবার দিত দূর থেকে। আশে পাশের লোকজন আমাকে নানা কথা বলতো। আমি তাদের কথায় কান দিইনি। তারা তখন হয়তো এ পোকা সম্পর্কে জানতো না। এখন আর সেরকম কথা কেউ বলে না।’

মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমে মাত্র ২ কেজি লার্ভা দিয়ে চাষ শুরু করেছিলাম। এ থেকে পোকা বৃদ্ধি হতে থাকলে, আমি ২শ ব্রয়লার মুরগীর বাচ্চা নিয়ে খামার শুরু করি। পরে ধীরে ধীরে খামার বড় করি। নতুন আরও ১ হাজার মুরগীর জন্য শেড তৈরি করি। এখন আমার খামারে প্রায় ১ হাজার ২০০ মুরগী আছে। আর ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ মাছি থেকে প্রতিদিন ৭০-৮০ কেজি লার্ভা উৎপাদন হয় খামারে। যা খামারের মুরগী ও পুকুরের মাছদের খাওয়াই। এখান থেকে অনেকে লার্ভা নিয়ে খামার তৈরি করেছেন।’

‘আগে খামারের জন্য মাসে ফিড লাগতো ৭ বস্তা আর এখন ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ মাছির লার্ভা খাওয়ানোর জন্য ফিড লাগে মাত্র ৫ বস্তা। লার্ভা খাওয়ানোর ফলে আমার এখানে ১ মাসে মুরগীর গড় ওজন হয় ২ কেজি ৮০০ গ্রাম। লার্ভায় প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকার ফলে মুরগী দ্রুত বড় হয় ও ওজন বাড়ে। রোগ-বালাইও কম হয়। এখন পর্যন্ত আমার মুরগীর কোনো রোগ বালাই হয়নি ও কোনো মুরগীও মরেনি’- বলছিলেন মোমিনুল।

তিনি বলেন, ‘১ কেজি লার্ভা তৈরি করতে সর্বোচ্চ ১০-১৫ টাকা খরচ হয়। এতে ফিডের তুলনায় অনেক খরচ কম হয়। এভাবে লার্ভা চাষে আমি লাভবান হয়েছি। সরকার যদি আমাকে স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে আমি খামারটিকে আরও বড় করতে পারতাম।’

বগুলাডাঙ্গী গ্রামের মো. মনতাজ আলী বলেন, ‘আগে মোমিনুলের তেমন কিছু ছিল না। এই খামার করে সে অনেক এগিয়ে গেছে। তার এমন অবস্থা দেখে এখন আমিসহ এলাকার অনেকেই এই খামার করার উদ্যোগ নিয়েছি।’

পঞ্চগড় জেলার মো. মোস্তাক আহমেদ বলেন, ‘কিছুদিন আগে এখান থেকে আমরা ৩ জন ডিম ও লার্ভা নিয়ে গিয়ে ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ চাষ শুরু করেছি। আশা করি অল্পকিছু দিনের মধ্যে ব্ল্যাক সোলজার উৎপাদন করতে পারবো। এর উৎপাদন যদি বাড়াতে পারি তাহলে ব্যাপক লাভবান হতে পারবো বলে আশা করছি।’

মোমিনুলের খামার থেকে ১ মাস আগে পিউপা নিয়ে দিনাজপুরের মো. সামিউল ইসলাম ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ চাষ শুরু করেন। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, ‘বর্তমানে ফিডের দাম বৃদ্ধির ফলে মুরগীর কোনো শেডে লাভ হয় আবার কোনো শেডে লস হয়। তাই ফিডের খরচ কমানোর উপায় ইউটিউবে খুঁজতে খুঁজতে একদিন মোমিনুল ভাইয়ের খামারের খবর দেখতে পাই। তখন তার কাছ থেকে মাছির পিউপা নিয়ে গিয়ে চাষ শুরু করি। আলহামদুলিল্লাহ এখন তা থেকে ফ্লাই ভালো উৎপাদন হচ্ছে ও আমার অনেক খরচও কমে গেছে।’

ঠাকুরগাঁও শহরের আমির হোসেন বলেন, ‘এখানে মাছি থেকে পোকা উৎপাদনের প্রক্রিয়া দেখে অবাক হয়েছি। সত্যিই অসাধারণ। চিন্তা করছি, আমিও এমন একটি খামার দিবো।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আবুল কালাম আজাদ ঢাকা মেইলকে জানান, পোলট্রি ফিডের বিকল্প হিসেবে ‘ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই’ মাছির লার্ভা ব্যবহার দেশে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি খুব লাভজনক। জেলায় মোমিনুলই এটির প্রথম চাষ শুরু করেন। তাকে সহযোগিতা করা হয়েছে। এই লার্ভার চাষ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

স্বল্প সুদে ঋণের বিষয়ে তিনি জানান, বর্তমান সরকারের একটি প্রকল্প আছে। খামারিদের প্রণোদনা হিসেবে ৫% সুদে ঋণ দেওয়ার। মোমিনুলের যদি ঋণ নেওয়ার চাহিদা থাকে, তাহলে এ বিষয়ে তাকে সহযোগিতা করা হবে।

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর

https://bd24news.com © All rights reserved © 2022

Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102