বাগেহাটের মোড়েলগঞ্জে উপজেলার কাঁঠালতলা গিয়াসিয়া দাখিল মাদরাসা সুপার মোঃ আব্দুল হালিমের বিরুদ্ধে যৌন নিপিরনের অভিযোগে মামলা করে বিপাকে পড়েছেন একই প্রতিষ্ঠানের এক নারী শিক্ষিকা। মামলা তুলে নিতে ওই শিক্ষার্থীকে নানাভাবে হুমকী-ধামকী দিচ্ছেন সুপার ও তোর লোকজন। এমনকি মামলা তুলে না নিলে মেরে ফেলারও হুমকি দিয়েছেন তারা। এই অবস্থায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন নির্যাতনের শিকার ওই নারী শিক্ষক।
এদিকে আদালতের নির্দেশে তদন্ত করে ওই সুপারের বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভিস্টিগেশন (পিবিআই)। গেল ২৭ নভেম্বর আদালত অভিযুক্ত সুপারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। পিবিআই‘র তদন্তের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় সুপারকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে মাদরাসা পরিচালনা কমিটি।
নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষক বলেন, আমার স্বামী একজন সৌদি প্রবাসী, বিষয়টি জানতে পেরে সুপার তার বাড়িতে আমাকে রাত্রি যাপনসহ নানা কু-প্রস্তাব দেন। সুপারের প্রস্তাবেই রাজি না হলে, সে যৌন নিপিড়ন মূলক কথাবার্তা ও আকার-ইঙ্গিতে অশ্লীলতা প্রকাশ করে। মাদ্রাসার নিরাপত্তা অবস্থা ভাল না থাকায়, চলতি বছরের ১৪ই মার্চ দুপুরে মাদ্রাসা ছুটি শেষে সুপারের বাসায় কম্পিউটার রাখতে যাই। ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলেই সুপার আমাকে ধর্ষনের জন্য জোর জবরদস্তি করেন। সম্মান বাচাঁতে ডাক চিৎকার দিলে সে আমাকে ছেড়ে দেয়। পরিবার ও সামাজিক অবস্থানের কথা চিন্তা করে বিষয়টি গোপন রাখি। পরবর্তীতে সুপার জানায় বাড়িতে বসে আমাকে জোরজবর দস্তি করার ভিডিও রয়েছে তার কাছে। আমি তার সাথে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনে রাজি না হলে ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিবেন। কোন উপায় না পেয়ে সহকর্মীদের বিষয়টি অবগত করি। এতে সে আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয় এবং আমার সাথে আরও খারাপ আচরন করতে থাকে। সর্বশেষ ১১ সেপ্টেম্বর দুপুরে মাদ্রাসার পরিত্যক্ত রুমের জায়গায় নারী শিক্ষকদের জন্য পুরাতন টয়লেট সংস্কার করে দিবে বলে আমাকে ডেকে নেয়। পরিত্যক্ত রুমে প্রবেশ করলেই সুপার আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করার জন্য জোরাজুরি করেন। সুপারের হাত থেকে বাঁচতে আমার ডাক চিৎকারে অন্য শিক্ষকরা আসলে সে আমাকে ছেড়ে দেয়। পরবর্তীতে এই বিষয়ে থানায় মামলা করতে যাই। কিন্তু অজানা কারণে মোরেলগঞ্জ থানা আমার মামলা নেয়নি। ২৬ সেপ্টেম্বর বাগেরহাট নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ সুপারের বিরুদ্ধে যৌন নিপিরনের মামলা দায়ের করি। এর পর থেকে সুপার ও তার লোকজন বিভিন্ন ভাবে আমাকে হুমকি দিচ্ছে। মামলা না তুললে প্রানে মেরে ফেলার কথাও বলেছে।
তিনি আরও বলেন, সুপারের বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়েই আমাকে মাদ্রাসায় যেতে হয়। যার কারণে আরও বেশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এই অবস্থায় সুপারকে গ্রেফতার পূর্বক আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আব্দুল হালিমের ০১৭১৮-৮৭১৮০৫ নম্বরে একাধিক বার ফোন করা হলেও তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
কাঁঠালতলা গিয়াসিয়া দাখিল মাদরাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ শহিদুজ্জামান সাবু বলেন, মাদরাসা সুপার মোঃ আব্দুল হালিম বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা হওয়ায় এবং বিনা ছুটিতে মাদরাসায় উপস্থিত না থাকায় তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে।
মোড়েলগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ জিহাদ হাসান বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর মাদ্রাসা পরিদর্শন করেছি। প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার শিক্ষকের অভিযোগ বিষয়টি আমলে নিয়েছে আদালত। মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগের ভিত্তিতে তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ।