ছেলের আকিকার জন্য ছুটি নিয়ে বাড়িতে এসেছিলেন সেনাসদস্য নাইচ আলী। গরু জবাই করে প্রতিবেশী ও স্বজনদের মাঝে মাংসও বিলি করেছেন। সেইসঙ্গে বাড়িতে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করেছেন। কিন্তু এই আনন্দ রূপ নিলো বিষাদে। ছেলের আকিকার অনুষ্ঠানের জন্য বাজার করতে গিয়ে বাসচাপায় নিহত হয়েছেন নাইচ আলী।
রবিবার (১১ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌর শহরের উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বাসটি জব্দ ও চালক মফির উদ্দিনকে (৫৮) আটক করেছে পুলিশ।
নিহত নাইচ আলী (২৯) আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের মহিতুড় গ্রামের আক্কাস আলীর ছেলে। তিনি খাগড়াছড়ি সেনা ক্যাম্পের ৬-ই বেঙ্গল বাগাইহাট জোনের ল্যান্স করপোরাল পদে কর্মরত ছিলেন।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ১১ দিন আগে ছেলেসন্তানের বাবা হন নাইচ আলী। ছেলের আকিকা করতে ১৯ দিনের ছুটি নিয়ে এক সপ্তাহ আগে বাড়ি আসেন। বাড়িতে আজ ছেলের আকিকা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সকালে গরু জবাই করে স্বজন ও প্রতিবেশীদের মাঝে মাংস বিলি করেন। পাশাপাশি দুপুরে বাড়িতে স্বজনদের নিয়ে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করেছেন। এরই মধ্যে ছেলের আকিকার অনুষ্ঠানের বাজার করতে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। পৌর শহরের উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কে পৌঁছালে একটি মোটরসাইকেলকে সাইড দিতে গিয়ে সড়কের ওপর পড়ে যান। তখন পেছন থেকে আসা আক্কেলপুরগামী হাবিব পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই নিহত হন নাইচ আলী।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী জি এম মোস্তফা বলেন, ‘আক্কেলপুর কলেজ গেটের সামনে আমার বাসা। সকালে বাজার করতে বের হয়েছিলাম। উপজেলা পরিষদ কার্যালয়ের পাশে সিঙ্গার শোরুমের কাছে গেলে হঠাৎ দেখি একটি মোটরসাইকেল বাসের নিচে পড়ে যায়। বাসটি তার ওপর দিয়ে চলে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই মোটরসাইকেলচালক নিহত হন। পরে জেনেছি, নিহত ব্যক্তি সেনাসদস্য। খাগড়াছড়ি ক্যান্টনমেন্টে কর্মরত ছিলেন।’
গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বাবু হোসেন বলেন, ‘দুই সন্তানের জনক ছিলেন নাইচ আলী। তিনি আমার আত্মীয়। ১১ দিন আগে ছেলের বাবা হয়েছেন। মেয়ের বয়স তিন বছর। নবজাতক ছেলের আকিকার অনুষ্ঠানের জন্য বাজার করতে গিয়ে বাসচাপায় নিহত হয়েছেন। তার মৃত্যুর খবর বাড়ি পৌঁছালে আনন্দ বিষাদে রূপ নেয়। আমরা সবাই শোকাহত।’
আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘ময়নাতদন্তের জন্য সেনাসদস্য নাইচ আলীর মরদেহ জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। বাসটি জব্দ ও চালককে আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় পরিবার মামলা করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
/