অপহরণের ছয়দিন পর সুন্দরবনে বনদস্যু ‘নয়ন বাহিনীর’ জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেয়েছেন ১৫ জেলে। বুধবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে ১১ জন এবং আগের দিন মঙ্গলবার রাতে মুক্তিপণ দিয়ে ফিরেছেন আরো ৪ জেলে।
তবে বাগেরহাট জেলা পুলিশের দাবি, অপহরণের খবর পেয়ে জেলেদের উদ্ধারে শরণখোলা, মোংলা ও মোরেলগঞ্জ থানা পুলিশ বিশেষ যৌথ অভিযান পরিচালনা করে। একপর্যায়ে পুলিশের তৎপরতায় দস্যুরা জেলেদের মুক্তিপণ ছাড়াই ১১ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
পুলিশ জানায়, উদ্ধার হওয়া জেলেদের মধ্যে বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা কাশিমপুর গুচ্ছগ্রামের সোহেল মল্লিক (২৮), মোংলা উপজেলার বাজিকর খন্ডের আসাদুল শেখ (৩৫), রামপাল উপজেলার বেতকাটা গ্রামের হানিফ হাওলাদারকে (৪৫) শরণখোলা থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। এরা তিনজনই দস্যুদের নির্যাতনে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে তাদেরকে শরণখোলা হাসপাতালে পুলিশের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
এছাড়া বাকি ৮জন জেলেকে মোংলা থানায় হস্তান্তর করা হয়। এরা হলেন খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বুজবুনিয়া গ্রামের আকরাম শেখ (৪২), রফিকুল খান (৩৫), মোংলা উপজেলার দক্ষিণ হলদিবুনিয়া গ্রামের মিলন শেখ (২৩), আনিস শেখ (২২), বৈদ্যমারী গ্রামের শুকুর আলী ব্যপারী (৩০), মনির ব্যপারী (৩৫), রামপাল উপজেলার ঝনঝনিয়া গ্রামের বকতিয়ার ব্যাপারী (৩৫) ও রূপসা উপজেলার আলী শিকদার (৪৮)।
অপরদিকে, শরণখোলা উপজেলার সোনাতলা গ্রামের সালাম হাওলাদার (৬৫), ইমাম খান (২৫), ছলেমান হাওলাদার (৩০) ও ইউসুফ হাওলাদার (৩৫) দশ হাজার টাকা মুক্তিপন দিয়ে মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে বাড়ি ফিরে আসেন।
এর আগে গত ১৩, ১৪ ও ১৫ ডিসেম্বর পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের বেড়ির খাল, হরমল খাল ও হরিণটানা এলাকা থেকে সশস্ত্র একটি দস্যু বাহিনী মুক্তিপণের দাবিতে এসব জেলেকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
ফিরে আসা জেলেরা জানান, তাদেরকে মুক্তিপণের টাকার জন্য মারধর করতো। কোনো একবেলা আবার কোনো দিন মোটেও খাবার দিত না। তাদেরকে মঙ্গলবার রাতে সুন্দরবনের হরিণটানা এলাকার একটি খালে ছেড়ে দেয় দস্যুরা। সেখান থেকে তারা সারারাত নৌকা বেয়ে বুধবার ভোরে লোকালয়ে এসে পৌঁছান।
জেলেরা আরো জানান, সদ্য আবির্ভুত বনদস্যু নয়ন বাহিনীতে সাত জন সদস্য রয়েছে। তাদের কাছে দুইটি পাইপগান ও বেশ কিছু রামদাসহ দেশিয় অস্ত্র রয়েছে। দস্যুদের আস্তানায় তিন লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবীতে এখনো একটি ফিশিং ট্রলারসহ কয়েকজন জেলে জিম্মি রয়েছে বলে তারা জানান।
দস্যুদের কবল থেকে জেলে উদ্ধারের ঘটনায় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শরণখোলা থানায় প্রেস ব্রিফিং করেছেন বাগেরহটের পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক। পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন, সুন্দরবনে জেলে অপহরণের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরণখোলা, মোংলা ও মোরেলগঞ্জ থানা পুলিশের মাধ্যমে বিশেষ যৌথ অভিযান শুরু করা হয়। আমাদের তৎপরতায় দস্যুরা জেলেদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
পুলিশ সুপার আরিফুল হক আরো বলেন, উদ্ধার হওয়া জেলেদের মাধ্যমে দস্যুদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আশা করছি অচিরেই দস্যুদের গ্রেফতারে সক্ষম হব আমরা। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা অনুযায়ী সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত রাখতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত থাকবে। ##