সরকারি খাস জায়গায় গত প্রায় ৩০ বছর ধরে বসবাস করছেন ভিক্ষুক দম্পতি। বসতঘরসহ জমির স্থায়ী বন্দোবস্ত করে দেবেন বলে ভিক্ষুক দম্পতির কাছ থেকে দুই দফায় ১৯ হাজার টাকা নেন ইউপি চেয়ারম্যান। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও ঘর করে না দেওয়ায় এবং উচ্ছেদের নোটিশে বেকায়দায় পড়েছেন ওই দম্পতি।
এর কয়েকদিনই পরই চেয়ারম্যানকে দেওয়া টাকা ফেরত চাইতে গিয়ে লাঞ্ছিত হলে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন ভিক্ষুকের স্বামী, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের কুমড়াশাসন গ্রামের এই ঘটনাটি, স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই গ্রামের চাঁন মিয়া (৭০) ও তার স্ত্রী রাহেলা বেগম (৬০) ও একমাত্র মেয়ে নিয়ে
দীর্ঘদিন-ধরে,ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের ঈশ্বরগঞ্জের হারুয়া বাস স্ট্যান্ডের পশ্চিমে একটি বাজারের জায়গায় বসবাস করে আসছেন। গত প্রায় ৩০ বছরেও তাদের কেউ কিছু বলেনি।
এ অবস্থায় নতুন ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর প্রায় ৫০ শতকের এই খাস জায়গাটি তার নজরে পড়ে। স্থানীয়রা জানায়, মাইজবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম বাবুল ওই জায়গাটিতে গিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে মাপজোক করে নিজের আওতায় নেওয়ার জন্য তৎপর হয়ে ওঠেন। এতে ওই জায়গায় বসবাস করা কয়েকজন তার হুমকির মুখে সরে যেতে বাধ্য হয়।
এর মধ্যে গত প্রায় ১০ মাস আগে এখানে বসবাস করা চাঁন মিয়াকে ডেকে নিয়ে যান পরিষদে। পরে তাকে দ্রুত এই জমি থেকে চলে যেতে বলেন। চাঁন মিয়ার স্ত্রী ভিক্ষুক রাহেলা বেগম জানান, এমনিতেই তার স্বামী অসুস্থ ছিল তার ওপর বাড়ি ছাড়ার কথা শুনে তিনি চেয়ারম্যানকে অনুনয়-বিনয় করলে চেয়ারম্যান জানান এখানে থাকতে হলে টাকা লাগবে। আর টাকা দিলে তিনিই ঘরের ব্যবস্থাসহ জমির বন্দোবস্ত করে দেবেন। এই কথায় তার স্বামী ধারদেনা করে দুই দফায় ১৯ হাজার টাকা চেয়ারম্যানের হাতে তুলে দেন।
কিন্তু দীর্ঘ দিনেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা করে না দেওয়ায় চেয়ারম্যানের কাছে টাকা ফেরত চাইতে গেলে তিনি কালক্ষেপণ করেন এবং রাগান্বিত হন। তিনি আরো জানান, পরে টাকা ফেরত চাইতে গেলে তার স্বামী ও তাকে পরিষদের ভেতরে নিয়ে গালাগালসহ ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই তার স্বামী চাঁন মিয়া অসুস্থ হয়ে শয্যায় যান। এক পর্যায়ে তিনি মারা যান। এরপরও টাকা ফেরতের দাবি নিয়ে তার কাছে গেলে নানা ধরনের হুমকি ছাড়াও গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে বাড়ি ছাড়তে বলেন।
এ বিষয়ে ওই গ্রামের রাহিমা (৩৫) ও জায়েদা (৫০) সহ বেশ কয়েকজন নারী জানান, রাহেলা সারাদিন ভিক্ষা করে অসুস্থ স্বামীটাকে নিয়ে এখানেই জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করে আসছিলেন। কিন্তু চেয়ারম্যান ঘর করে দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েই ঘর করে না দেওয়ায় ও সর্বশেষ টাকা ফেরত না দেওয়ায় ভিক্ষুকের বৃদ্ধ স্বামী শোকে মারা যায়।
বিষয়টি এলাকার সকলেই জানে। অভিযুক্ত মাইজবাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম বাবুল বলেন,টাকা নিছলাম জমি মাপার লাইগ্যা। এরপর মনে হয় কিছু টাকা ফেরত দিছি। কত টাকা নিয়েছিলেন আর কত টাকাই বা ফেরত দিলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন,৬ হাজার টাকা ফেরত দিছি। বাকিটা আগামী মঙ্গলবার ফেরত দেলবাম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. হাফিজা জেসমিন ওই ভিক্ষুকের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে জানান, বিষয়টির জন্য চেয়ারম্যানকে শোকজ করা হবে।