ঝালকাঠি জেলা প্রতিনিধি কঞ্জন কান্তি চক্রবর্তীঃ
করোনা কিংবা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হলে লাশের দাফন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন পরিবার। প্রতিবেশীদের চাপের মধ্যে গৃহবন্দিও হয়েছেন মৃত ব্যক্তির স্বজনরা। লাশ নিয়ে দুর্বিষহ রাত কাটাতের হয়েছে তাদের। লাশ দাফন না করানোর জন্যও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় মৃতের পরিবারকে। লাশ বহণের খাট নিয়েও শুরু হয় হয়রানি।
এ অবস্থায় রোদ, বৃষ্টি, ঝড়সহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে ঝালকাঠির নলছিটিতে তিন মুফতির নেতৃত্বে সংঘটিত শাবাব ফাউন্ডেশন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। জানা যায়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কত হয়ে পড়েছে পুরোদেশ। ঝালকাঠি জেলায় এখন পর্যন্ত ৫২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে নলছিটি ও কাঁঠালিয়ায় দুইজনের মৃত্যু হয়েছে।
অন্যরা বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছেন। তবে উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন অনেকেই। তাদের পাঁচজনই নলছিটিতে। এই পাঁচজনের দাফন কার্য সম্পন্ন করে শাবাব ফাউন্ডেশন। শাবাব ফাউন্ডেশন জানায়, তিনজন মুফতির নেতৃত্বে শাবাব ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়। এরা হলেন মুফতি জায়নুল আবেদীন, মুফতি হানযালা নোমানী, মুফতি সাইফুল ইসলাম, ব্যবসায়ী জামাল আব্দুন নাসের, নাসিম সরদার, হাসিবুল হাসান সবুজ, শাহাদাত ফকির, শিক্ষক মর্তুজা আলী মামুন, মাহাদি হাসান, মো. জুয়েল, মো. আসাদুজ্জামান, মো. নয়ন ও মো. রিভান।
গত ১৩ মে নলছিটি উপজেলার সুবিদপুর ইউনিয়নের ভোজপুর গ্রামে জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও গলা ব্যাথা নিয়ে ঢাকা থেকে আসা নাসির উদ্দিন (৩৬) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। প্রতিবেশীরা তার লাশ দাফনে বাধা দেয়। এমনকি মসজিদ থেকে লাশ বহণের খাট নিতেওয় হয়রানি করা হয়। ঘর থেকে মৃত ব্যক্তির স্বজনরা কেউ বের হতে পারছিল না। খবর পেয়েউপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে শাবাব ফাউন্ডেশনের সদস্যরা ছুটে যায় ওই বাড়িতে। তাঁরা লাশ দাফনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেন।
যদিও তার নমুনা সংগ্রহের রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। এর পরে ২৬ মে রানাপাশা গ্রামের মনিরুজ্জামান মানিক (৪০), ২৮ মে জুরকাঠি গ্রামের শহিদুল ইসলাম (৪৫) ও নাঙ্গুলী এলাকার রফিকুল ইসলামের (৬৫) লাশ দাফন করে শাবাব ফাউন্ডেশন। এরা প্রত্যেই করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন। শাবাব ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক মুফতি জায়নুল আবেদীন বলেন, আমরা মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। যেখানে মানুষ লাশ দাফন করতে পারছে না, অনেকে ভয়ে জানাজায় আসছেন না; আমরা তাদেরপাশে দাঁড়িয়েছি।
উপজেলার যেখানেই আমাদের খবর দেওয়া হবে, আমরা সেখানে গিয়েই মৃত ব্যক্তির লাশ দাফন করে আসবো। করোনাকালে আমাদের পর্যপ্ত পিপিই নেই। যারা ইতোমধ্যে দান করেছিলেন, সেগুলো শেষের পথে। লাশ দাফনের পরে এগুলো পুড়িয়ে ফেলতে হয়। আমাদের সংগঠনকে পর্যাপ্ত পিপিই সুবিধা দিয়ে মানুষের লাশ দাফনের সহযোগিতা করার দাবি জানাচ্ছি সরকারের কাছে।
ইতোমধ্যে আমাদের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুম্পা সিকদার কয়েক সেট পিপিই দিয়েছেন। তিনি এবং থানার ওসি শাখাওয়াত হোসেনও আমাদের সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুম্পা সিকদার বলেন, লাশ দাফনের জন্য আমরা শাবাব ফাউন্ডেশনকে অনুমতি দিয়েছি। তাদের পিপিই দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। প্রয়োজনে সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে এ সংগঠনকে। কারণ তারা মানবতার ফেরিওয়ালা, তাদের সাহস দেখে আমি মুগ্ধ।