করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে গত ১৬ মার্চ বন্ধ ঘোষনা করা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাস। ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ করে দেয়া হয় আবাসিক হল গুলো। পরবর্তীতে দেশে করোনার প্রকোপ আরো বৃদ্ধি পেলে অনির্দিষ্টকালের জন্য রাবি ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষনা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
চলতি মাসের গত ৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৭ তম প্রতিষ্টাবার্ষিকীতে কোনো ধরনের পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই হঠাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায় ৯ জুলাই থেকে অনলাইন ক্লাসে যাচ্ছে রাবি। এদিকে চলমান পরিস্থিতিতে ভাটা পড়েছে অনেক কর্মক্ষেত্রে। যার ফলে কর্মহীন হয়ে দুরূহ সময় অতিবাহিত করছে রাজশাহী রাবিতে পড়ুয়া অনেক শিক্ষার্থীর পরিবার।
জানা যায়, রাবির অধিকাংশ শিক্ষার্থী প্রত্যন্ত অঞ্চলের। তারপরে বিশেষ প্রস্তুুতি ছাড়া অনলাইন ক্লাস, মন্থর অর্থনীতি, প্রয়োজনীয় যোগাযোগ প্রযুক্তির অভাব, নেটওয়ার্ক ট্রান্সমিশনে ধীরগতি, ডেটার মূল্য বৃদ্ধি, নিয়মিত ডেটা ক্রয়ের প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদি সমস্যার মধ্যে অনলাইন ক্লাস কতটুকু ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাবি নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অন্তরা তন্নী বলেন,করোনাকালীন এই সময়ে অনলাইন ভিত্তিক পড়াশোনা হবে কিনা এ নিয়ে বিস্তর বিতর্ক চলছে পুরো লকডাউনের সময় জুড়েই। সম্প্রতি কোনরকম বিশেষ প্রস্তুতি ছাড়াই অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইন ক্লাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অনলাইন ক্লাস/পরীক্ষার ভালা-মন্দ দুটো দিকের মধ্যে সমস্যাটাই আগে চোখে পরে। কেননা অনলাইন শিক্ষার সুবিধাটা পেতে হলে এই সমস্যা অতিক্রম করা ছাড়া বিকল্প কোন সমাধান নেই। ‘ প্রযুক্তি ব্যবহারের সীমাবদ্ধতা’ একটি অন্যতম অন্তরায়। দেশের সর্বস্তরে অনলাইন ক্লাসের উপযুক্ত প্রয়োজনীয় স্মার্ট মোবাইল/ল্যাপটপ ও ইন্টারনেট সংযোগ নেই।
এমন অঞ্চলেও শিক্ষার্থী আছে। যেখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক পৌঁছায় না আর ইন্টারনেট তো অকল্পনীয়। দ্বিতীয় প্রধান কারণ ‘উপযুক্ত পরিবেশ’। অধিকাংশ না হলেও বেশ বড় সংখ্যক শিক্ষার্থী যেখানে যেভাবে পরিবারের সাথে লকডাউন কাটাচ্ছে সেখানে পড়াশোনায় মন দেয়ার মত পরিবেশ নেই।
অর্থনৈতিক টানাপোড়েন ও বর্তমান মহামারি সৃষ্টিকারী রোগটি এই পড়ার পরিবেশের বড় বাধার কারণ। আরেকটি বিশেষ কারণ হচ্ছে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার ভঙ্গুর দশা। এই অবস্থায় নতুন একটি মাধ্যমে পড়াশোনা শুরু করতে গেলে পুরো ব্যবস্থাকে ঢেলে না সাজানো অব্দি এই অনলাইন ক্লাস কোন কার্যকরী ভূমিকা রাখবে না। অবশ্য গত তিনমাসে এই ব্যবস্থা পুননির্মাণ এর কোন চেষ্টা দেখা যায়নি।
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী খায়রুল ইসলাম দুখু বলেন, শেষ ক্লাসে বসেছি গত ১৬ ই মার্চ।তারপর করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি আকার ধারণ করার আশংকায় বন্ধ হয় স্কুল,কলেজসহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।প্রথমে ছুটির নির্দিষ্ট দিনক্ষণ চূড়ান্ত হলেও পরবর্তীতে তা অনির্দিষ্টকালের জন্য হয়। মহামারির ক্ষত দেখা দিয়েছে অর্থনীতি,সামাজিক সকল স্তরে।
শিক্ষা খাতেও দেখা দিয়েছে এর প্রভাব। এমতাবস্থায় সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দীর্ঘ সময় পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাসের ব্যাপারে হঠাৎ যে নোটিশ দেয়। তাতে হুট করে ১ দিন আগেই জানানো হয় ক্লাস শুরু হবে। অনেকেই প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চলে অবস্থান করার দরুন নেটওয়ার্কের সমস্যা। শতভাগ স্মার্টফোন না থাকা।
এছাড়াও এই দুর্যোগকালে নেট খরচ চালানো অনেক ছাত্র-ছাত্রীর পক্ষে কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে। এমতাবস্থায় হয়ত কয়েকদিন ক্লাস চালানো সম্ভব হলেও দীর্ঘ সময়ে এটা খুব একটা ফলপ্রসূ হবে বলে মনে করছি না। যদি অনলাইননে ক্লাস নিতেই হয়।তাহলে কোন ছাত্ররা যেন বৈষম্যের শিকার না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।প্রত্যেক বিভাগ থেকে এমন সমস্যায় পড়া ছাত্র ছাত্রী দের জন্য যোগাযোগ করে ক্রমান্বয়ে সমস্যা সমাধানে নজর দিতে হবে।
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী এম.কামিল আহমেদ বলেন, বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনার ভয়াল থাবায় চারপাশে বিরাজ করছে চরম স্থবিরতা। মাস চারেক ধরে বন্ধ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এমতাবস্থায় পড়াশোনার সাথে সম্পর্কের অবনতি রুখতে অনলাইন ক্লাস জরুরি বটে।তবে, সকলের অংশগ্রহণ ব্যতিরেকে ক্লাস করাটা কতটা যৌক্তিক? এত তাড়াহুড়ো করে ক্লাস শুরু না করে সবার অাগে সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা দরকার।
কেননা, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি জোগাড়ের অভাব, মফস্বলে মন্থর গতির ইন্টারনেট, এর চড়া দামের কারণে অনেকেই ক্লাসে যুক্ত হতে না পেরে মানসিক অশান্তি অার হতাশায় ভুগবে। এমন বৈষম্যের দায়ভার কে নেবে? এজন্য উচিৎ হবে সকলের উপস্থিতি নিশ্চিত করণের মাধ্যমে অনলাইন ক্লাস শুরু করা।
পপুলেশন সায়েন্স এন্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী খায়রুন্নাহার পিংকি বলেন, অনলাইন ক্লাসের ব্যপারে আমাদের জানানো হয়েছে মাত্র ৩ দিন আগে । সব ছাত্র-ছাত্রী যে নেটওয়ার্কের আওতায় আছে সেটাও নয়। এটা অবশ্যই ভালো উদ্যোগ, সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু যাদের একাডেমিক পরীক্ষাগুলো করোনা পরিস্থিতিতে স্থগিত আছে। তাদের জন্য এটা কতটুকু ফলপ্রসু সেটা আমার জানা নেই। অনেক ডিপার্টমেন্টেরই পরীক্ষা স্থগিত আছে । ক্যম্পাস খোলার আগ পর্যন্ত পরের ইয়ারের ক্লাস শুরু করা যায় । ক্যাম্পাস খুলে গেলে তখন একযোগে পরীক্ষাগুলা নেয়া যেতে পারে। তবে খুব তারাতারি হয়তো এ ক্ষতি আমরা কাটিয়ে উঠতে পারবো আশা করি।