ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের পাগলা থানাধীন লংগাইর ইউনিয়নের কাঁজা গ্রামের কৃষক মাইনুদ্দিনের একটি ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা গাভীসহ পাঁচটি গরু ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে তিনটি গরু। এতে মাইনুদ্দিনের সংসারে হাহাকার নেমে এসেছে।
একই ইউনিয়নের মাইজ বাড়ি গ্রামের কৃষক ফারুক মিয়ার ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা গাভী, বড় একটি ষাঁড়সহ তিনটি গরু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা গাভীর এই রোগ হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পেটের বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায়। ঈদুল আজহার সময় বিক্রি করার জন্য প্রায় ৯০ হাজার টাকা মূল্যের ষাঁড় গরুটি বড় করেছেন।
ঈদ সামনে ল্যাম্পি স্কিন রোগ হওয়ায় ষাঁড়টি বিক্রি না-ও হতে পারে। অন্তঃসত্ত্বা গাভী ও ষাঁড়ের চিন্তায় ফারুক মিয়া ভেঙে পড়েছেন। ফারুক মিয়ার প্রতিবেশী গৃহবধূ লিপি আক্তারের চারটি গরুর মধ্যে তিনটিই ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত। আরেক প্রতিবেশী রাজমিস্ত্রি সোহাগ মিয়ার তিনটি গরুর মধ্যে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা গাভীসহ দুটি গরু এই রোগে আক্রান্ত।
শুধু লংগাইর ইউনিয়ন নয় পৌর এলাকাসহ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শতশত গবাদিপশু মশাবাহিত ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। বাংলাদেশে রোগটি নতুন হওয়ায় সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসাও নাই। এ অবস্থায় কৃষক ও খামারিরা কোরবানীর গরু নিয়ে চরম শংকায় আছেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মশাবাহিত ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগে আক্রান্ত গরুর শরীরের বিভিন্ন স্থানে গোল হয়ে ফুলে যায়। পরে ফুলে যাওয়া অংশে ক্ষত সৃষ্টি হয় ও মাছি বসে পোকা হয়ে যায়। সিনার নিচে পানি জমে ও পা ফুলে যায়। পায়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়। এতে ক্রমে গরু শক্তিহীন হয়ে ঢলে পড়ে।
আক্রান্ত গরুর গায়ের রক্ত খেয়ে মশা অন্য গরুর গায়ে বসে এই রোগ সংক্রমিত করে। আবার আক্রান্ত গরুকে ইনজেকশন দিয়ে সেই সুঁচ দিয়ে অন্য গরুর গায়ে ইনজেকশন দিলেও এই রোগ সংক্রমিত হতে পারে। ফলে মহামারি করোনার মতোই ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগ দ্রুত গবাদিপশুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, মশাবাহিত রোগটি আমাদের দেশে নতুন।
গত বছরের তুলনায় চলতি বছর কিছুটা কমেছে। যেহেতু রোগটি মশাবাহিত তাই কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি গোয়াল ঘরে মশারি টাঙাতে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ মামুনুর রহমান বলেন, এই রোগের ভ্যাকসিনের চাহিদা অনেক। কিন্তু আমরা চাহিদা অনুযায়ী পাচ্ছি না।
তাই যে সব এলাকায় বেশি গবাদিপশু আক্রান্ত হচ্ছে সেই এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করছি। তবে রোগটি যেহেতু মশা-মাছিবাহিত তাই গোয়াল ঘরে মশারি ও কয়েল ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।